ভারতের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলে এগোলেই আমাদের সামনে হাজির হবে একটি ছোট্ট দ্বীপ। আরব সাগরের বুকে জেগে থাকা এই দ্বীপেই রয়েছে দেশের সবচেয়ে ছোটো কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল— লাক্ষাদ্বীপ। একেবারে ছবির মতো জায়গা; নীল সমুদ্রের ধারে বালির স্তূপ, পেছনে সার বেঁধে দাঁড়িয়ে থাকা নারকেলের সারি। প্রিয় মানুষদের সঙ্গে ছুটি কাটানোর জন্য সেরা জায়গা। তবে সাম্প্রতিক সময় ভ্রমণপিপাসুদের জন্য শিরোনামে আসেনি এই দ্বীপ। পৃথিবী জুড়ে বেড়ে চলা ক্রমবর্ধমান কোভিড পরিস্থিতিতেও একা কুম্ভ হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে এই অঞ্চলটি। করোনা মোকাবিলায় শক্ত ঢাল তৈরি করে নিয়েছে নিজেরাই। তাই তো, আট মাসেরও বেশি সময় পেরিয়ে যাওয়ার পর, লাক্ষাদ্বীপ ভারতের একমাত্র করোনামুক্ত অঞ্চল…
আক্রান্তের বিচারে এই মুহূর্তে ভারত গোটা বিশ্বের মধ্যে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৭০ লাখ ছুঁইছুঁই। খবরের চ্যানেলে প্রতিদিন জ্বলজ্বল করে ওঠে মৃতের সংখ্যা। রাস্তাঘাটের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে, উৎসবের মরসুমও শুরু হয়েছে, বেড়েছে মাস্ক পরিয়েদের সংখ্যা। তবুও থামছে না করোনা মিছিল। সেখানে এখনও পর্যন্ত লাক্ষাদ্বীপের অবস্থা দেখে তাজ্জব হয়ে যাচ্ছেন বিজ্ঞানী-চিকিৎসকরা। একেবারে আলাদীনের আশ্চর্য প্রদীপের মতো…
মার্চ মাস। ভারতের বুকে একটু একটু করে বাড়তে শুরু করেছে করোনা ভাইরাসের প্রকোপ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তরফে জারি হয়েছে সতর্কতা। এমন সময় জারি হল লকডাউন। গোটা দেশ স্তব্ধ হয়ে গেল, বন্ধ হল যান চলাচল। করোনা মোকাবিলায় আরও নানা পদক্ষেপ নেওয়ার পরিকল্পনা করল ভারত। এইসব কিছুর অনেক আগেই ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছিল লাক্ষাদ্বীপ। জনসংখ্যা মাত্র ৬৪ হাজার হলেও, প্রতি বছর বহু পর্যটক এখানে এসে ভিড় করেন। ভারতের মূল ভূখণ্ড থেকে দূরে হওয়ায় ভৌগোলিক অবস্থানের সুবিধাও পাওয়া গেল। তা সত্ত্বেও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে ত্রুটি করেনি লাক্ষাদ্বীপ।
ভারতে লকডাউন শুরু হওয়ার অনেক আগেই নিজেরা ব্যবস্থা নিয়েছিল এই কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলটি। সমস্ত রকম যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হল, সেইসঙ্গে চলল পরীক্ষা। দ্বীপের প্রতিটা বাসিন্দার স্বাস্থ্যপরীক্ষা বাধ্যতামূলক করা হল। একবার নয়, বারবার চলল এই প্রক্রিয়া। সেইসঙ্গে কঠোরভাবে মানা হল কোয়ারেন্টাইন। যারা পর্যটক হিসেবে এসেছিলেন, তাঁদের ওপর আরও কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হল। একটু অসুবিধা দেখলেই সঙ্গে সঙ্গে কেরালার স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পাঠিয়ে দেওয়া হত।
একদিক থেকে দেখলে, পর্যটন থমকে আছে লাক্ষাদ্বীপের। অন্যতম প্রধান অর্থ উপার্জনের জায়গাটাই স্তব্ধ। কিন্তু আগে করোনা হটাও, তারপর বাকি কাহিনি। আর তার ফলও মিলল হাতেনাতে। আজ ভারতে যেখানে প্রতিদিন বন্যার মতো বেড়ে চলেছে করোনা আক্রান্ত-মৃতের সংখ্যা, সেখানে লাক্ষাদ্বীপকে ছুঁতেই পারেনি এই ভাইরাস। এখনও একইরকম কড়া ব্যবস্থা বজায় রেখেছে তারা। স্কুল হয়তো শীঘ্রই খুলে দেওয়া হবে পড়ুয়াদের জন্য, কিন্তু ওইটুকুই। যুদ্ধটা এখনও যে থেমে যায়নি। সতর্ক হয়েই থাকতে হবে বাকি সময়টা…
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
করোনায় আক্রান্ত সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, ভর্তি বেলভিউ-তে