প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিনে দেশজুড়ে পালিত বেকারত্ব দিবস, সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্ষোভ উগড়ে দিল যুবসমাজ

বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সত্তর পেরিয়ে পা দিলেন একাত্তরে। আর সকাল থেকেই তাই ধূমধাম করে শুরুও হল সে আয়োজন। পক্ষ কিংবা বিপক্ষের সকলেই যেমন ভালো থাকতে বললেন হাসি মুখে, কেউ আবার ‘কৃষ্ণের অবতার’ ক্যাপশন লিখে পোস্ট করলেন ছবি। তেমনই সুরাট থেকে এল ৭১ ফুটের ৭৭১ কেজির কেক। তবে জন্মদিন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর হলেও কেকের থিমে থাকলেন দেশের করোনা-যোদ্ধারা। দশের কথা ভেবেই। কেকের বিভিন্ন অংশ গেল বিভিন্ন আউটলেটেও।

এত অবধি ঠিকই ছিল সব। ঝামেলা শুরু তারপর থেকেই। প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিবসে যুব-সম্প্রদায় দল বেঁধেই সোশ্যাল মিডিয়ায় বিড়ম্বনায় ফেললেন প্রধানমন্ত্রীকে। দেশে চাকরির হাহাকার, সরকারি ক্ষেত্রে নিয়োগের উদাসীনতার বিরুদ্ধেই যেন রাগে ফেটে পড়লেন তাঁরা। #জাতীয়বেরোজগারদিবস হ্যাজট্যাগ ২৫ লক্ষের সীমানা ছাড়িয়ে উপচে পড়ল ট্যুইটারে। যার ভিড়ে শুভেচ্ছাবার্তাদের খুঁজে পাওয়াই দায়।

প্রতিবছর ২ কোটি কর্মসংস্থানের মৌখিক প্রতিশ্রুতি থাকলেও প্রকৃতপক্ষে তার সিকিভাগও পূরণ করেনি কেন্দ্র। বরং উলটে কাজ হারিয়েছেন বহু বহু মানুষ। এখনও হারিয়ে চলেছেন অনেকে। পরীক্ষা হয়ে যাওয়ার পরেও অনেক ক্ষেত্রেই থমকে আছে নিয়োগের প্রক্রিয়া। গত ৪৫ বছরে বেকারত্বের গ্রাফ শিখরে পৌঁছেছে বর্তমানে। এর আগেও সেই প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছিল যুবসমাজ। 

#স্পিকআপফরএসএসসিরেলওয়ে_স্টুডেন্টস লিখে ট্রেন্ডে উঠে এসেছিল ছাত্রদের হতাশার বহিঃপ্রকাশ। তার মাস ঘুরতে না ঘুরতেই জন্মদিনের দিনই এমন ট্রেন্ডিংয়ে প্রতিবাদের তীরবিদ্ধ হলেন দেশের সর্বোচ্চ শাসক। সারাদেশে ‘সুন্দর’ দিনেই পালিত হল ‘জাতীয় বেকারত্ব দিবস’। বেকারত্বের জন্মদাতা হিসাবেও কেউ কেউ উল্লেখ করলেন নরেন্দ্র মোদীর নাম। 

দেশের অর্থনৈতিক মেরুদণ্ড ভেঙেছে বেশ কিছুদিন আগেই। তাকে আরও বড় আঘাত করে গেছে মহামারী। ফলে দেশের জিডিপি ঠেকেছে ঋণাত্মকে। -২৩.৯ শতাংশের ঘাটতি মেটাতে সরকার বেছে নিচ্ছে বেসরকারিকরণের পথ। সরকারি ক্ষেত্রেও বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে ৫৫ বছরে স্বেচ্ছাবসরকে। বিশ্বকর্মা পুজোর দিনেই এমন একটা ঘটে যাওয়া ডিজিটাল-বিক্ষোভ যেন সেই ট্র্যাজিডিকেই তুলে আনছে। তবে প্রত্যক্ষভাবে বেকারত্বের প্ল্যাকার্ড ঝোলানো থাকলেও; দেশের অর্থনৈতিক ভাঙন, করোনা পরিস্থিতিতে সরকারি মডেলের ব্যর্থতা এবং সব ঠিক থাকার অভিনয় - সবকিছুই কি মিশে গেল প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিনের এই ব্যাঙ্গাত্মক শুভেচ্ছায়? 

তবে আশ্চর্যের বিষয়, এই অপবাদের পরও নিরুত্তর প্রশাসন। তা কি আসন্ন নির্বাচনের কথা ভেবেই? যদিও এর অন্যদিকে ডিজিটাল মিডিয়ার ক্ষমতায় লাগাম লাগাতে চলেছে কেন্দ্র। তা কি প্রশাসনের পাল্টা মার? থেকে যাচ্ছে প্রশ্ন...

আরও পড়ুন
গ্রেপ্তার রিয়া চক্রবর্তী; টিআরপি-র লড়াইয়ে পিছনের সারিতে অর্থনীতি থেকে বেকারত্ব

(মতামত লেখকের ব্যক্তিগত)

Powered by Froala Editor

More From Author See More