মুম্বাই শহরের অজানা ইতিহাসকে তুলে ধরতে উদ্যোগ তরুণদের

ভারতের অন্যতম প্রাচীন শহরগুলির একটি মুম্বাই (Mumbai)। মারাঠা সাম্রাজ্যের খুব কম নিদর্শনই আর বেঁচে আছে। তবে ব্রিটিশ শাসনকালের নিদর্শনের অভাব নেই এখনও। রাস্তার ধারে সেইসব অট্টালিকা দেখে একবার থমকে দাঁড়াতেই হয়। ইতিহাসের গন্ধ কার না ভালো লাগে? কিন্তু সেই ইতিহাসের খোঁজ রাখেন না অনেকেই। আর সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আধুনিক হাইরাইজের নিচে চাপা পড়ে যায় এইসব স্থাপত্য। ইতিহাসকে ধরে রাখতে, ইতিহাসের (History) তথ্য (Document) এবং সাক্ষ্য ধরে রাখতে এবার তাই এগিয়ে এসেছেন নচিকেত যোশী এবং মল্লিকা কিয়ার।

মারাঠি সাহিত্যের গবেষক নচিকেত যোশী মুম্বাইয়ের চেম্বুর অঞ্চলের বাসিন্দা। শহরের প্রাণকেন্দ্র বলা যায় এই অঞ্চলকে। আশেপাশে ছড়িয়ে আছে নানা প্রাচীন অট্টালিকা। কিছুদূর গেলেই মুম্বাই রেলওয়ে স্টেশন। নিজের আশেপাশে ছড়িয়ে থাকা এইসমস্ত অট্টালিকার ইতিহাস খোঁজার নেশা তাঁর ছোটো থেকেই। অবশ্য ইতিহাস নিয়ে পড়াশোনা করা হয়ে ওঠেনি। বরং প্রথাগত শিক্ষার জন্য সাহিত্যকেই বেছে নিয়েছেন তিনি। আর সাহিত্যের সঙ্গে ইতিহাসের যোগাযোগও তো খুব দূরের নয়। প্রাচীন বাড়িগুলোও কবিতার মতোই মনে হয় নচিকেতের।

অন্যদিকে আর্কিটেক্ট মল্লিকা কিয়ারের এইসমস্ত ইতিহাসের প্রতি আকর্ষণ জন্মায় তাঁর বাবার কাজের সূত্রে। তিনি একটি নির্মাণ সংস্থার কর্ণধার। পুরনো বাড়ি কিনে সেখানে আধুনিক অট্টালিকা বানানোই তাঁর কাজ। মল্লিকার সেটা ছোটো থেকেই পছন্দ হত না। ছোটো থেকেই শিবাজী নগরের নানা প্রাচীন অট্টালিকা দেখে বড়ো হয়েছেন তিনি। উচ্চশিক্ষার জন্য মাঝে বছর তিনেকের জন্য বাইরে যেতে হয়। ফিরে এসে দেখেন সেইসব বাড়ির অধিকাংশই আর নেই। তাঁর চোখের সামনেও অনেক বাড়ি ভেঙে নতুন অট্টালিকা উঠেছে। তাদের ইতিহাস হয়তো আর জানা যাবে না কোনোদিনই।

২০১৯ সালে দুজনেই পৃথক পৃথকভাবে এইসমস্ত তথ্য সংগ্রহের কাজ শুরু করেন। পাশাপাশি সেই তথ্য প্রচারের জন্য বেছে নেন সামাজিক মাধ্যমকে। আশেপাশের বিভিন্ন বাড়ির ছবি তুলে তা সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করতে থাকেন। দেখতে দেখতে মানুষের নজর কাড়ে সেইসব ছবি। এভাবেই দুজনের মধ্যে যোগাযোগও হয়ে যায়। নচিকেত চেম্বুর এলাকার বাড়িগুলির ছবি তোলেন। আর মল্লিকা ছবি তোলেন শিবাজী নগর এলাকার বাড়িগুলির। মুম্বাইয়ের ইতিহাস মানে যে শুধুই কিছু প্রসিদ্ধ স্থাপত্য নয়, বরং দৈনন্দিন জীবনের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে থাকা সমস্ত উপাদান নিয়েই সেই ইতিহাস তৈরি, এটা প্রচার করাই উদ্দেশ্য নচিকেত এবং মল্লিকার। মানুষের মধ্যে সচেতনতা গড়ে তুলতে পারলে একদিন তাঁরাই এই অট্টালিকাগুলি ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচাবেন। এমনটাই আশা করেন তাঁরা।

আরও পড়ুন
বহনযোগ্য মেজি ও ভেলাঘর, ঐতিহ্য বাঁচাতে উদ্যোগ গুয়াহাটির ব্যক্তির

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
রোবটিক্সের মাধ্যমে পুতুল নাচ, ঐতিহ্যবাহী শিল্পকে বাঁচাতে উদ্যোগ ইঞ্জিনিয়ারের