রোহিত গিরি। বয়স মাত্র ২১ বছর। যে-বয়সে আর পাঁচজন অন্যান্য বিলাসিতা আর বিনোদনে ব্যস্ত থাকে, সে-বয়সেই এক অভিনব শখ নেপালের এই যুবকের। কী সেই শখ? শুনলে অবাক হবেন বইকি! মানুষের হাত থেকে সাপকে উদ্ধার ও তাকে তার নিজের জায়গায় ফিরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা। প্রায় নিজের চেষ্টাতেই এই লড়াইয়ে সামিল হয়েছে রোহিত।
সভ্যতার অগ্রগতির দাপট থাবা বসিয়েছে বন ও বন্যপ্রাণীর জীবনে। এই তথ্য আমাদের কাছে নতুন কিছু না এখন। জঙ্গল কেটে আমরা দিনের পর দিন নিজের বাসস্থান বাড়িয়ে চলেছি। বন্যেরা হারাচ্ছে তাদের মাতৃক্রোড়। প্রতিদিন খবরের কাগজ খুললে বাঘের আক্রমণ থেকে শুরু করে হাতির আক্রমণের খবর প্রায় রোজনামচা হতে চলেছে। কিন্তু বাঘ, হাতির মতই প্রতিদিন নজরে না এলেও একইভাবে বেড়ে চলেছে সাপের আক্রমণ। বলা বাহুল্য, এই মহাদেশে রোগের শিকার হয়ে যতজন মানুষ মারা যান সাপের কামড়ে তার থেকে কিছু কম মরে না। অথচ এমন বহু ঘটনা তুচ্ছ ঘটনা হয়েই থেকে যায়। লোকচক্ষুর ভিড়ে জায়গা পায় না। কারণ অবশ্য সাপ নিয়ে অজ্ঞানতা আর অহেতুক ভয়।
করোনা আতঙ্কের মধ্যেও রোহিত নিজের চেষ্টায় বিগত বছরে মোট ৪৫৪টি সাপ উদ্ধার করেছেন। পেশায় প্রাণীবিদ্যার ছাত্র রোহিত। নেপালের পৃথ্বী নারায়ণ ক্যাম্পাস থেকে পড়াশুনা। পড়াশুনার সূত্রেই প্রাণীজগতের প্রতি ভালোবাসা। আর সেখান থেকেই শুরু ওয়ার্ল্ডলাইফ ফটোগ্রাফি। বর্তমানে সাপ সংরক্ষণ আর মানুষ - সাপের দ্বন্দ্ব নিয়ে পড়াশুনা করছেন রোহিত।
আরও পড়ুন
দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে সাপের সঙ্গে ‘ঘর’ করছেন বৌদ্ধ ভিক্ষু!
ভারত, বাংলাদেশ, নেপাল সহ এশিয়ার বহু দেশের মানুষ পৃথিবীর মধ্যে সবথেকে বেশি সাপের আক্রমণের শিকার। এমনকি বহু জায়গায় মেলে না প্রকৃত চিকিৎসা। তবে রোহিতের মতো সর্প-বন্ধুদের মতামত, সাপ কখনোই মানুষের সাথে দ্বন্দ্বে যেতে আগ্রহী নয়, বরং মানুষই চলে আসে তার জীবনযাত্রার পথে। এই দ্রুত বিশ্বায়ন ও তার সঙ্গে ঘটে চলা দ্রুত জলবায়ুর পরিবর্তনই আসলে এই মানুষ-সাপ দ্বন্দ্বের মূল কারণ।
আরও পড়ুন
দত্তক নিতে পারেন রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার, বিষধর সাপ – ‘অফার’ বেঙ্গালুরুর চিড়িয়াখানার
রোহিত জোর গলায় জানিয়েছে সাপ আমাদের শত্রু না, বরং এই প্রকৃতির বন্ধু। আর সেই বন্ধুদের বাঁচিয়ে রাখতে রোহিতের লড়াই। গবেষণার পাশাপাশি রোহিত নিজের উদ্যোগে লোকালয়ে ঢুকে পড়া সাপ উদ্ধার করেন, তারপর কোন ফাঁকা স্থানে ছেড়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। মানুষকে বোঝাবার চেষ্টা করে যাতে তারা সাপ না মারেন, কারণ এই প্রকৃতির বুকে অন্যান্য প্রাণীর মতো সাপেরও প্রয়োজন আছে।
আরও পড়ুন
সাপের 'ত্রাতা' ছিলেন তিনি, মৃত্যু হল সর্পদংশনেই
রোহিতের ছবি তোলার শখ দীর্ঘদিনের। তাই এই সাপ উদ্ধার ও সংরক্ষণের কাজে যখন মিলল না কোনো সরকারি বা বেসরকারি সাহায্য, রোহিত হাতে তুলে নিয়েছেন ক্যামেরা। বিচিত্র ওয়াইল্ডলাইফ ছবি বিক্রি করে সেই টাকাতেইই তিনি চালিয়ে যাচ্ছেন এই কাজ। বিগত বছরের রোহিতের এই কীর্তি অনেক পশুপ্রেমী মানুষকেই উদ্বুদ্ধ করেছে। বিগত পাঁচ বছর ধরে রোহিত সাপ নিয়ে চালিয়ে যাচ্ছেন এই কাজ। আগামী দিনেও সাপ সংরক্ষণ ও মানুষের সচেতনতা বাড়াতে উদ্যমে ঘাটতি হবে না, স্থির বিশ্বাস তাঁর।
Powered by Froala Editor