এখনও আঠেরো পেরোয়নি মেয়েটি। চোখে তার স্বপ্ন, রাইফেল হাতে আন্তর্জাতিক মঞ্চে দেশের প্রতিনিধিত্ব করবে। সেই স্বপ্নে প্রস্তুতিও চলছিল। সামনেই ছিল শুটিংয়ের জাতীয় মিট। তার আগেই ধরা পড়ল মারণ রোগ! পরিবারে তো বটেই, ঝটকা লাগল কোচ, সতীর্থদের মধ্যেও। জানা গেল, সতেরো বছরের শুটার রীতিকা কর্মকার লিউকেমিয়া, অর্থাৎ ব্লাড ক্যানসারে আক্রান্ত।
২০১৫ সাল থেকে জয়দীপ কর্মকার শুটিং অ্যাকাডেমিতে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে রীতিকা। হাসিখুশি, প্রাণচঞ্চল একটি মেয়ে। সবসময় পজিটিভ থাকত সব বিষয়। রাজ্যস্তরের টুর্নামেন্টেও পদক এনেছে সে। প্রস্তুতি চলছিল জাতীয় মিটের জন্য। হঠাৎই গত বছর নভেম্বরে, খেলা শুরুর আগেই শরীর খারাপ হয় ওর। খিঁচুনি, সঙ্গে কাপুনি দিয়ে জ্বর। সেই সময় ডেঙ্গুর উপদ্রব বেড়েছে কলকাতায়। মনে করা হয়, ডেঙ্গুই হয়তো হবে। সেই মতো পরীক্ষাও হয়। সেখানেই বেরিয়ে পড়ে আসল জিনিস।
এর আগেও বিভিন্ন সময় স্বাস্থ্য পরীক্ষা হয়েছে রীতিকার। কিন্তু কিছুই ধরা পড়েনি। সামান্য জ্বর, শরীর খারাপ ছাড়া সেরকম রোগও হয়নি। এবারেও তাই ভেবেছিলেন সবাই। কিন্তু ব্লাড রিপোর্টে অস্বাভাবিক কিছু নজরে আসে ডাক্তারদের। হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর জানা যায়, ডেঙ্গু নয়। লিউকেমিয়ায় আক্রান্ত শুটার রীতিকা…
এই মুহূর্তটার জন্য কেউই প্রস্তুত ছিলেন না। এমনিতে খেলতে খেলতে একটু তাড়াতাড়িই ক্লান্ত হয়ে যেত ও। কিন্তু পরক্ষণেই সামলেও নিত নিজেকে। সেটা যে অসুখের ইঙ্গিত হতে পারে, সে কথা মাথায়ও আসেনি কারোর। সঙ্গে সঙ্গেই ভর্তি করা হয় কলকাতা টাটা মেডিক্যাল ক্যানসার হাসপাতালে। সেখানেই চলছে রীতিকার চিকিৎসা। এখনও অবধি একটি কেমো সম্পূর্ণ হয়েছে। দ্বিতীয়টি চলছে। এখনও দুটি কেমো বাকি। চারটে কেমোর ধকল কতটা নিতে পারবে শরীর, বোঝা যাচ্ছে না। সংশয় যে কমেছে, সেটা এখনই বলা যাচ্ছে না।
তার ওপর দেখা দিয়েছে আরও একটি সমস্যা। হাসপাতালে, বা ব্লাড ব্যাঙ্কে যে সঞ্চিত রক্ত আছে, তা রীতিকার ক্ষেত্রে কোনোমতেই ব্যবহার করা যাচ্ছে না। ব্যবহার করলেই, দেখা দিচ্ছে ইনফেকশন, নিউমোনিয়া। দিতে হচ্ছে বেড-টু-বেড রক্ত। অর্থাৎ, দাতা’র থেকে সরাসরি ওর শরীরে যাচ্ছে। তাও করতে হচ্ছে বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা করে। আপাতত, টাটা ক্যানসার হাসপাতালে আরোগ্যের অপেক্ষায় তার পরিবার। এই অবস্থাতেও, রীতিকা আগের মতই পজিটিভ। যেন কিছুই হয়নি, এমন মনের জোর তার। দেখলে বুঝতেই পারবেন না যে, ওর হার্ট অবধি একটা চ্যানেল করা আছে। কেমো এখনও শেষ হয়নি। শরীরের যন্ত্রণা সরিয়ে রীতিকা প্রবলভাবে ফিরতে চায় শুটিং গ্রাউন্ডে।
ইতিমধ্যেই তিরিশ লাখের ওপর খরচ হয়ে গেছে। রীতিকার পারিবারিক অবস্থা সম্পন্ন হলেও, এই বিপুল খরচের ধাক্কা নিতে পারছেন না তাঁরা। জয়দীপ কর্মকার এবং তাঁর অ্যাকাডেমির প্রশিক্ষক, বন্ধু ও অন্যান্য শুটাররাও এগিয়ে এসেছেন ওর জন্য। আর্থিক দিকের পাশাপাশি মানসিক জোরও তো দরকার! আসুন, আমরাও সবাই মিলে রীতিকা কর্মকারের পাশে এসে দাঁড়াই। আবার সুস্থ হয়ে ও রাইফেল তুলে নিক, দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করুক, সেই স্বপ্নই আবার জাগিয়ে তুলি ওর মনে।