লকডাউন ও আমফানের জোড়া ধাক্কায় ধ্বস্ত কুমোরটুলি, এগিয়ে এলেন তরুণ-তরুণীরা

বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ। আর যখনই উৎসব আসে, বাংলার চোখ চলে যায় কলকাতার একটি বিশেষ অঞ্চলের দিকে। আশ্বিনের মাঝামাঝি বাজনা বেজে উঠলে ভিড় জমে এখানে। মাটি আর খড়ের ওপর ফুটে ওঠে প্রতিমার অবয়ব। কুমোরটুলি শুধু দুর্গাপূজা নয়, বাংলার সংস্কৃতি ঐতিহ্যের ভেতর তীব্রভাবে মিশে আছে। 

শুধু শারদোৎসব নয়, বছরের অন্যান্য সময়ও ব্যস্ত থাকে মৃৎশিল্পীদের বাড়ি। বড়ো বড়ো কাঠামো, দেবতাদের মধ্যেই তাঁদের বাস। এরই মধ্যে ২০২০-তে নেমে এল দুর্যোগ। প্রথমে করোনা ভাইরাসের জন্য গোটা দেশে জারি হল লকডাউন। বন্ধ হয়ে গেল কুমোরপাড়ার কাজ। তার মধ্যেও টিকে থাকার চেষ্টা করছিলেন কোনোক্রমে। তার ওপরই জোর ধাক্কা দিয়ে গেল সুপার সাইক্লোন আমফান। লণ্ডভণ্ড হয়ে গেল কলকাতা, দুই চব্বিশ পরগনা। 

সেই ধ্বংসের ঝাপটা এসে পড়েছিল কুমোরটুলিতেও। সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরে বেড়াচ্ছে একের পর এক মর্মান্তিক সব দৃশ্য। কোথাও চাল ভেঙে পড়েছে, জল জমেছে। কোথাও মূর্তি ভেসে গেছে জলে। জমা জলের ওপর পড়ে আছে দুর্গা প্রতিমা— এই ছবি ঘুরে বেড়াচ্ছে সবার ফোনে। একেই লকডাউনের জেরে থমকে ছিল সবটা, তার ওপর এই আমফান কুমোরটুলিকে অসহায় করে দিল। কুমোরটুলি মৃৎশিল্পী সমবায় সমিতি’র সদস্য সুজিত পাল জানাচ্ছিলেন, “এই সময় থেকে কাজ শুরু হয়ে যায় আমাদের। এবার সেসব বন্ধ। এখনও অবধি অর্ডারের পরিমাণও খুব কম। আমরা তো তাও সারাবছর ধরে কাজ করি। এই ঝড় ও লকডাউনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছে অন্যান্য কারিগররা। এঁরা ডাকের কাজ, শোলার কাজ, প্রতিমার গহনা ইত্যাদি বিভিন্ন জিনিস নিয়ে বসেন কুমোরটুলিতে। তাঁদের অসম্ভব ক্ষতি হয়েছে। তাঁদের মাইনেও খুব অল্প আমাদের তুলনায়।”

এমন অবস্থাতেই আমফান ও লকডাউনে বিপর্যস্ত কুমোরটুলির পাশে দাঁড়াতে উদ্যোগ নিয়েছেন একদল তরুণ-তরুণী। উদ্যোগের নাম ‘কুমোরটুলির পাশে’। সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমেই নিজেদের বার্তাগুলো পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করছেন তাঁরা। সামান্য কিছু অর্থের বিনিময়ে বিভিন্ন মানুষের ক্যারিকেচার, কার্টুন ইত্যাদি এঁকে দিচ্ছেন তাঁরা। আর সেই টাকার সাহায্যেই কিছু ত্রাণ পৌঁছে দেওয়া হবে কুমোরটুলির শিল্পীদের। উদ্যোগে যুক্ত আছেন মণিদীপা শীল, শুভদীপ দে, ঋত্বিকা চক্রবর্তী, উজান, অভিনন্দা-সহ আরও কয়েকজন শিল্পী। 

এখানেই থেমে থাকেননি তাঁরা। হোয়াটসঅ্যাপেই খোলা হয়েছে একটি লাইব্রেরি। সেখানে প্রায় ১৯০০ জন সদস্যের থেকেও সাহায্য আসছে। ঠিক করা হয়েছে, যারা একশো টাকার বেশি সাহায্য করবেন তাঁদের জন্য ক্যারিকেচার এঁকে দেওয়া হবে। এভাবেই ত্রাণ জোগাড়ের চেষ্টা চলছে। সব মিলিয়ে কুমোরটুলির সমস্ত শিল্পীদের পাশে দাঁড়াতে এগিয়ে এলেন শিল্পীরাই। যাতে এই দুর্যোগের মুহূর্তে তাঁরাও বাঁচতে পারেন, সেটাই তো আসল। আমাদের উৎসবের আনন্দের অন্যতম স্তম্ভ এই মানুষগুলো। তাঁরা যাতে সুস্থ থাকেন, ভালোভাবে থাকেন সেটাই তো চাওয়া… 

সঙ্গে রইল ব্যাঙ্ক ডিটেলস- 

GPay- 9836232708
PhonePe- 9836232708
Account No.- 37071574059
Monideepa Sil
IFSC- SBIN0007961

Powered by Froala Editor