আজ থেকে ১১০ বছর আগের কথা। ১৯১২ সালের ১৫ এপ্রিল। ভাসমান প্রকাণ্ড হিমশৈল সঙ্গে সংঘর্ষে আটলান্টিকের বুকে তলিয়ে গিয়েছিল আরএমএস টাইটানিক। প্রাণ হারিয়েছিলেন দেড় হাজারেরও বেশি মানষ। তবে আশ্চর্যের বিষয় হল, এই দুর্ঘটনার বেশ কিছুক্ষণ আগেই টাইটানিককে আগাম বিপর্যয়ের ব্যাপারে সতর্ক করেছিল ভিন্ন একটি বাণিজ্যতরী— এসএস মেসাবা। তবে সেই রেডিও বার্তা টাইটানিকের প্রধান নিয়ন্ত্রণকেন্দ্র পর্যন্ত পৌঁছায়নি। আর মেসাবা (SS Mesaba)? টাইটানিক-দুর্ঘটনার বছর ছয়েক পর ডুবেছিল এই জাহাজটিও। এক শতাব্দী পর এবার সন্ধান মিলল এই ঐতিহাসিক জাহাজটির ধ্বংসাবশেষের।
বছর খানেক আগের কথা। সমুদ্রের তলদেশের ভূপ্রকৃতি পর্যবেক্ষণ ও ম্যাপ তৈরির কাজে নেমেছিলেন যুক্তরাজ্যের ব্যাঙ্গর ও বোর্নেমাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-বিজ্ঞানীরা। মাল্টিসোনার বিমের ব্যবহারেই তৈরি করা হয় সমুদ্রগর্ভের এই মানচিত্র। আর সেই কাজ করতে গিয়েই একের পর এক হারিয়ে যাওয়া জাহাজের সন্ধান পেতে শুরু করেন তাঁরা। এসএস মেসাবারও অনুসন্ধান মিলল সেভাবেই। প্রশ্ন থেকে যায়, সমুদ্রগর্ভে ছড়িয়ে থাকা হাজার হাজার জাহাজের ধ্বংসস্তূপের মধ্যে মেসাবাকে কীভাবে চিহ্নিত করলেন গবেষকরা?
ওয়েলসের ব্যাঙ্গর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-বিজ্ঞানী মাইকেল রবার্টস জানাচ্ছেন, মাল্টিসোনার শব্দ তরঙ্গের ব্যবহারে জাহাজের ধ্বংসাবশেষের ডিজিটাল ছবি তৈরি করা হয় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্য। সেই ছবির সঙ্গে ঐতিহাসিক জাহাজগুলির গঠন মিলিয়ে দেখা হয় প্রথমে। তবে তাতে নিশ্চিত হওয়ার সুযোগ নেই। এরপর ডাইভারদের নামানো হয় সংশ্লিষ্ট ধ্বংসস্তূপ পর্যবেক্ষণের জন্য, কিংবা আনম্যানড ভেহিকল পাঠিয়ে ছবি তোলা হয় জাহাজের ধ্বংসবশেষের। আইরিস সমুদ্রে ডুবে যাওয়া এসএস মেসাবাকে শনাক্ত করার জন্যও নামানো হয়েছিল মেরিন ডাইভারদের।
কিন্তু কীভাবে ডুবেছিল ব্রিটেনের এই বাণিজ্যতরী? তা নিয়ে যথেষ্ট বিতর্ক ছিল এতদিন। অনেকের মতে টাইটানিকের মতোই দুর্ঘটনাগ্রস্ত হয়েছিল এসএস মেসাবা। আবার কিছু তথ্য বলে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের শেষলগ্নে জার্মান টর্পেডোর হানায় বিধ্বস্ত হয়েছিল এই জাহাজ। সাম্প্রতিক আবিষ্কারে ইতি পড়েছে এই জল্পনাতেও। ব্যাঙ্গর বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা নিশ্চিত করেছেন টর্পেডোর আঘাতেই ভেঙে গিয়েছিল জাহাজের নিচের অংশ। সেই গর্ত দিয়েই দ্রুত জল ঢুকতে শুরু করে জাহাজে। তার মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যেই আইরিস সাগরে ডুবে গিয়েছিল ব্রিটেনের অন্যতম কার্গো জাহাজটি। সম্প্রতি আইরিস সমুদ্রে পাওয়া জাহাজগুলির তথ্য ও ইতিহাস নিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ গ্রন্থও প্রকাশ করেছেন ব্যাঙ্গর বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ইনেস ম্যাককার্টনি। সেই গ্রন্থেই বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে এসএস মেসাবার…
Powered by Froala Editor