এ যেন কোনো অলৌকিক লোককথা। নদীর ওপর দিয়েই হেঁটে যাচ্ছে মানুষ। অথচ জল স্পর্শ করতে পারছে না তাঁর পা। সম্প্রতি এমনই ছবি দেখা গেল ব্রাজিলে। ভাইরাল হওয়া একগুচ্ছ ছবিতে দেখা গেল সারাপুই নদীর ওপর দিয়েই টাল সামলে হেঁটে চলেছেন এক ব্যক্তি। তবে বাস্তবে অলৌকিকতা নেই এতটুকু। এই ঘটনার সৌজন্যে রয়েছে প্লাস্টিক দূষণ।
হ্যাঁ, ব্রাজিলের সারাপুই নদীর দূষণ পৌঁছেছে এই মাত্রাতেই। নদীতে প্লাস্টিক, থার্মোকল, বর্জ্য আর ওয়েস্ট ব্যাগের সংখ্যা এতটাই বেড়ে গেছে, যে সমগ্র নদী জুড়েই ভেসে রয়েছে তারা। তৈরি হয়ে গেছে এক ভাসমান পথ। দুর্গন্ধ কিংবা জমে থাকা জলে মশা-মাছির বাড়-বাড়ন্তের কথা না বললেও চলে।
রিও ডি জেনেইরো রাজ্যের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয়েহে এই সারাপুই নদী। রিও’র মধ্যেই রয়েছে যার ৩৬ কিলোমিটার দীর্ঘ পথ। আর এই পুরো অঞ্চল জুড়েই সারাপুই শিকার মাত্রাতিরিক্ত দূষণের। চরম অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের মধ্যেই নদী তীরবর্তী অঞ্চলে বসবাস করছেন কয়েক লক্ষ মানুষ। বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে তাঁদের। অন্যদিকে নদীর প্রবাহ সরু হয়ে যাওয়ায় মাঝে মাঝেই বন্যার কবলে আক্রান্ত হয় গোটা এলাকা।
তবে শুধুই কি মানবসভ্যতাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এই দূষণে? নদীর ভৌগলিক অবস্থানের কারণে শঙ্কিত হয়ে উঠছেন বিজ্ঞানীরা। কারণ জাতীয় উদ্যানের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে এই নদী। আর জঞ্জালের পাহাড় বাড়তে বাড়তে উদ্যানের পরিধির ভেতরেও ঢুকে গেছে বেশ খানিকটা। ফলত জলজ প্রাণীদের সঙ্গেই প্রভাবিত হচ্ছে বনভূমির জীববৈচিত্র্যও। অন্যদিকে রিও’র গুয়ানাবারা উপসাগরে ১০ শতাংশ মিষ্টি জল সরবরাহ করত সারাপুই। পরিশুদ্ধ জল তো দূরের কথা, সেখানেও ছড়াচ্ছে দূষণ।
অলিম্পিকের সেইলিং গেমের স্থান হিসাবে নির্বাচিত হয়েছিল এই গুয়ানাবারা উপসাগর। আর সে সময়ই উপসাগর পরিষ্কার ও দূষণমুক্ত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল ব্রাজিল প্রশাসন। তবে তা আর বাস্তবায়িত হয়নি। বাড়তি বর্জ্য ফেলার বিরুদ্ধে নেওয়া হয়নি কোনো পদক্ষেপও। সব মিলিয়ে ক্রমশ সঙ্গিন হয়ে উঠছে ব্রাজিলের পরিবেশ। যার জন্য বিন্দুমাত্রও ভাবিত নয় সরকার, এমনটাই অভিযোগ জানাচ্ছেন স্থানীয়রা...
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
বাঙালির প্রযুক্তিতে বাজিমাত, কলকাতায় অঞ্চলভেদে দূষণের মাত্রা জানাবে নয়া যন্ত্র