প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে ১-০ গোলে বড়ো জয়। ফলত, স্বাভাবিকভাবেই উচ্ছ্বসিত ছিলেন দলের খেলোয়াড়রা। আর সেজন্যই তাঁরা জড়ো হয়েছিলেন লেমোরেন্সের একটি বারে। খাওয়াদাওয়া, পানীয়ের আয়োজন হয়েছিল পুরোদমে। পোস্ট-ম্যাচ সেলিব্রেশন যাকে বলে। কিন্তু এমন সময়ই বারে কার্যত হামলা চালালেন একদল সমর্থক। স্পষ্ট দাবি, অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বীর বিরুদ্ধে কেন ম্যাচ জিতল প্রিয় দল? তাতে যে ঐতিহ্য নষ্ট ক্লাবের!
ভাবছেন এ কেমন কথা! নিজের দলের সমর্থকরাই হারাতে চাইছে দলকে? এমনটা আবার হয় নাকি? হ্যাঁ, এমনই আশ্চর্যকর ঘটনাই ঘটেছিল বছর দুয়েক আগেই। কথা হচ্ছে ব্রাজিলের পাউলিস্তার ফুটবল ক্লাব ‘ইবিস স্পোর্টস’-কে নিয়ে। বিশ্বের ‘নিকৃষ্টতম’ ক্লাবের তকমা রয়েছে এই ক্লাবটির কাছেই। ম্যাচের পর ম্যাচ জুড়ে হারের ধারা বজায় রাখাই এই ক্লাবের ঐতিহ্য পরিণত হয়েছে। আর সেখানে দাঁড়িয়ে পর পর তিন ম্যাচের জয়, তাও আবার টুর্নামেন্টের শীর্ষস্থানীয় ক্লাবের বিরুদ্ধে— তা তো ঐতিহ্যের পরিপন্থীই বটে। সে কারণেই এমন প্রতিবাদ!
তবে বিশ্বের এই নিকৃষ্টতম ক্লাবই এবার দৌড়ে নামল মেসিকে দলে টানার জন্য। হ্যাঁ, সম্প্রতি আর্জেন্টাইন তারকার কাছে পৌঁছাল ইবিসের প্রস্তাব। কিছুদিন আগেই বার্সেলোনার সঙ্গে চুক্তি শেষ হয়েছে ফুটবল রাজপুত্রের। আপাতত তিনি ফ্রি-এজেন্ট। অর্থাৎ, যে কোনো ক্লাবই সই করাতে পারে তাঁকে। মেসিকে দলে পাওয়ার আশায় ইতিমধ্যেই ইঁদুরদৌড়ে নেমেছে পিএসজি, ম্যাঞ্চেস্টার সিটি-সহ প্রবাদপ্রতিম একাধিক ক্লাব। সেই তালিকায় বাদ থাকল না ইবিসও।
তবে ইবিসের শর্ত শুনলে চোখ কপালে উঠে যাবে সকলেরই। দু’-এক বছরের নয়। একেবারে ১৫ বছরের জন্য মেসিকে স্বাক্ষর করাতে চায় ব্রাজিলের এই ক্লাব। পাশাপাশি বলা হয়েছে ভালো খেললেও, গোল করা যাবে না প্রতি ম্যাচে। এমনকি দলকে চ্যাম্পিয়ন করলেও কোপ পড়তে পারে চাকরিতে। আর সবথেকে বড়ো কথা ১০ নম্বর জার্সিটাই পাবেন না এলএম১০! কেননা দলের ১০ নম্বর জার্সি কেবলমাত্র দলের লেজেন্ড ফুটবলার মাউরো শ্যাম্পোর জন্য বরাদ্দ। গোটা কেরিয়ারে মাত্র ১টি গোল করেছিলেন তিনি। আশির দশকে তিনি খেলা ছেড়ে দেওয়ার পর থেকে ১০ নম্বর জার্সি আর কাউকেই দেয়নি ইবিস।
আরও পড়ুন
সালকিয়ার মাঠ থেকে বায়ার্ন মিউনিখ, রূপকথার উড়ান বাঙালি ফুটবলারের
১৯৩৮ সাল। ফুটবলজগতে আত্মপ্রকাশ করেছিল ইবিস। তখন অবশ্য ইবিস নাম ছিল না তার। জামা-কাপড় তৈরির কারখানা ‘তেসেলাজেম’ নামেই ছিল দলের নাম। আসলে এই কারখানার মালিক জাও পেসোয়াই কর্মীদের বিনোদনের জন্য তৈরি করেছিলেন ক্লাবটি। মোটা অঙ্কের টাকাও ঢেলেছিলেন ক্লাবের পেছনে। তৈরি হয়েছিল স্টেডিয়াম। রাখা হয়েছিল পেশাদার কোচও। তবে কারখানার কর্মীর ছাড়া আর কেউই এই ক্লাবে খেলার ছাড়পত্র পেতেন না।
আরও পড়ুন
মিস করেননি একটিও ম্যাচ, সদ্যপ্রয়াত দম্পতিকে বিরল সম্মাননা তুর্কির ফুটবল ক্লাবের
পেসোয়ার মৃত্যুর পর ধীরে ধীরে হারিয়ে বসতে বসে ক্লাবের অস্তিত্ব। নতুন কর্ণধার একেবারেই ইচ্ছুক ছিলেন না ফুটবলের ব্যাপারে। তবে ত্রাতা হয়ে এগিয়ে আসেন দলের ম্যানেজার ওনিলডো র্যা মোস। তিনিই দত্তক নেন ক্লাবটিকে। নাম রাখেন ইবিস। তাঁর হাত ধরেই ইবিসে খেলতে শুরু করে কর্মী ছাড়া বাইরের খেলোয়াড়রাও। তবে অর্থের অভাবে খুব কিছু সাজিয়ে উঠতে পারেননি দল। ফলত, ধারাবাহিকভাবেই খারাপ পারফর্মেন্স করতে থাকে ইবিস।
আরও পড়ুন
ইউরোপের ক্লাবে খেলা প্রথম ভারতীয় ফুটবলার; কলকাতা মনে রেখেছে এই বাঙালিকে?
আর ১৯৮০ থেকে ১৯৮৪ সালের মধ্যে দুরাবস্থার শিখরে পৌঁছেছিল ব্রাজিলের ক্লাবটি। টানা ৩ বছর ১১ মাস একটি ম্যাচেও জয় পায়নি ইবিস। আর তার দৌলতেই তাদের নাম উঠে গিয়েছিল গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে। আর স্বয়ং ক্লাব কর্তৃপক্ষই ‘নিকৃষ্টতম’ ক্লাব হিসাবে অভিহিত করেছিল নিজেদের।
তবে সে যাই হোক না কেন, ‘খারাপ’-এর দিকে শ্রেষ্ঠ হলেও ১৯৪৮ এবং ১৯৫০ সালে টোরনেয়ো ইনিসিও এবং ১৯৭৫ ও ৭৬ সালে টোরনেয়ো ইনসেন্টিভো টুর্নামেন্টের ট্রফি ঘরে এনেছিল ইবিস। আর তার পিছনে কৃতিত্ব ছিল র্যা মোসেরই। বর্তমানে চ্যাম্পিয়ন না হলেও মোটামুটি ‘ভালো’ ফর্মেই রয়েছে ইবিস। কিন্তু লক্ষ্য সেই এক, না জেতার ধারা বজায় রাখা। ফলত, শীর্ষস্থানীয় ক্লাবের বিরুদ্ধে জয় এলেই উপচে ওঠে গণরোষ।
সম্প্রতি মেসিকে পাঠানো চুক্তিপত্র নিজেদের টুইটার হ্যান্ডেলে পোস্ট করেছিল ইবিস। তবে মেসির তরফ থেকে এখনও কোনো প্রতিক্রিয়া মেলেনি। এহেন ক্লাবের অফার পেয়ে মেসির প্রত্যুত্তর যে কী হবে— তা জানতেই অগাধ আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে আছে ফুটবলপ্রেমী বিশ্ববাসী। সেই সঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়া উথলে উঠেছে হাসির রোলে…
Powered by Froala Editor