বয়স দুশোরও বেশি, পৃথিবীর একমাত্র ভাসমান ডাকঘর রয়েছে ভারতেই

পর্বতে ঘেরা জাবারওয়ান উপত্যকা। ছবির মতো সাজানো দৃশ্য। পাহাড়ের কোলের মধ্যেই বিশাল একটি হ্রদ। আর সেখানেই বসবাস কমপক্ষে ৫০ হাজার মানুষের। বাসস্থান, বাণিজ্য-ব্যবসা সবটাই ছোটো ছোটো নৌকায়। হাউসবোটে। হ্যাঁ, শ্রীনগরের ডাল লেকের কথাই হচ্ছে। হ্রদের জলে ভাসমান শতাব্দীপ্রাচীন এই সভ্যতার মধ্যেই অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছে ভারত তথা গোটা বিশ্বের একমাত্র ভাসমান ডাকঘর। 

যে-কোনো সভ্যতার মূলমন্ত্রই হচ্ছে যোগাযোগ। শ্রীনগরের ডাল লেকের বুকে যখন ছোট্ট এই জনপদ গড়ে ওঠে, তখন ইন্টারনেট কিংবা ফোন— সবটাই স্বপ্নাতীত। সেসময় যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম বলতে চিঠি। আর শ্রীনগরের সঙ্গে কাশ্মীরের অন্যান্য অংশের যোগাযোগের সেই সেতু হিসাবেই গড়ে উঠেছিল ভাসমান ডাকঘর। কিন্তু ঠিক কবে এই ডাকঘরের জন্ম— সে ব্যাপারে নিশ্চিত তথ্য নেই কোনো। স্থানীয়দের মতে কাশ্মীরের এই ভাসমান ডাকঘরের বয়স কমপক্ষে ২০০ বছর। জম্মু-কাশ্মীরের ডোগরা শাসনের বিভিন্ন নথিতে (১৮৪৬-১৯৪৭) উল্লেখ পাওয়া যায় এই ডাকঘরের।

অবশ্য স্বাধীনতার পূর্বে দীর্ঘ সময় এই ডাকঘরের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ছিল ব্রিটিশ শাসকদের হাতে। ‘ফ্লোটিং পোস্ট অফিস’ নামকরণটিও করেন ব্রিটিশ পোস্টমাস্টার জন স্যামুয়েল। সেসময় জম্মু-কাশ্মীর এবং উত্তর ভারতের মধ্যে যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম হয়ে উঠেছিল এই ডাকঘর। পরবর্তীতে এই ডাকঘরকে কেন্দ্র করেই পিন কোডও পায় ডাল লেকের ভাসমান সভ্যতা।

ছোট্ট কাঠের শিকারায় ভাসমান এই ডাকঘরে রয়েছে দু’টি কক্ষ। যার একটিতে রয়েছে ডাকঘরের কার্যনির্বাহী অফিস। অন্যটিতে রয়েছে আস্ত একটি জাদুঘর। যেখানে সংরক্ষিত আছে বহু ঐতিহাসিক ডাকটিকিট এবং ভারতীয় ডাকবিভাগের ইতিহাসের বিভিন্ন নথি। যদিও ২০১৪ সালে বন্যায় ভয়ঙ্করভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর আর নতুন করে প্রাণসঞ্চার হয়নি এই মিউজিয়ামে।

আরও পড়ুন
বন্যা-মোকাবিলায় ভাসমান গোটা শহর, ইউরোপকেও টেক্কা দিচ্ছে নাইজেরিয়ার লাগোস

বর্তমানে প্রযুক্তি আর ইন্টারনেটের যুগে দাঁড়িয়েও আজ নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছে কাশ্মীরের এই শতাব্দীপ্রাচীন ডাকঘর। হয়ে উঠেছে ডাল লেকের অন্যতম ঐতিহ্য। আজও চিঠি চালাচালি কিংবা কুরিয়ারে সমান দায়িত্ব পালন করে ডাল লেকের ভাসমান ডাকঘর। তাছাড়াও লেকে বসবাসকারী স্থানীয় ব্যবসায়ীদের ব্যক্তিগত সঞ্চয়েরও অন্যতম মাধ্যম এটি। প্রতি মাসে প্রায় ২ কোটি টাকার লেনদেন হয় এই ডাকঘরের মাধ্যমেই। ২০১১ সালে ভারত সরকারের নতুন রূপে উব্দোধন করে এই ডাকঘরের। নাম পাল্টে রাখা হয় ‘নেহরু পার্ক পোস্ট অফিস’। তবে নামবদল হলেও সাধারণের কাছে ‘ভাসমান পোস্ট অফিস’ বলেই খ্যাত এই ডাকঘর। এমনকি এই নামটিই স্বীকৃতি পেয়েছে গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে…

আরও পড়ুন
শূন্যে ভাসমান স্তম্ভ ও অন্ধ্রপ্রদেশের প্রাচীন মন্দিরের ‘রহস্য’

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
ভাসমান হাসপাতালেই চিকিৎসা, বরিশালের নদীতে দুঃস্থদের পাশে চার চিকিৎসক