অতিবিরল বলতে যা বোঝায়, সাদা কিউয়ি পাখি তেমনই। ২০১১ সালে নিউজিল্যান্ডের একটি সংরক্ষণ কেন্দ্রে জন্ম নিয়েছিল অতিবিরল একটি সাদা কিউয়ি। যা পৃথিবীর ইতিহাসে একমাত্র বন্দি অবস্থায় জন্ম নেওয়া সাদা-কিউয়ি। সম্প্রতি বেশ কয়েকটি অস্ত্রোপচারের পর মারা গেল বিরলতম এই প্রাণীটিই।
নিউজিল্যান্ডের রাজধানী ওয়েলিংটন থেকে ১২৫ কিলোমিটার দূরের পাকাহা জাতীয় বন্যপ্রাণ কেন্দ্রের বিবৃতিতে সম্প্রতি জানানো হয় কিউয়িটির মৃত্যুর খবর। ২০১১ সাল থেকে ‘মানুকুরা’ নামের এই কিউয়িটির ঠিকানা ছিল পাকাহা-ই। একটি বিরল জিনগত বৈশিষ্টের জন্য জন্মের সময় থেকেই পাখিটির পালকের রং খয়েরির বদলে সাদা।
সংরক্ষণ কেন্দ্রের কর্মচারীদের তো বটেই স্থানীয় উপজাতি সম্প্রদায়ের কাছেও বিগত বছরগুলিতে অত্যন্ত প্রিয় হয়ে উঠেছিল মানুকুরা। স্থানীয় রাঙ্গিটান ও ওয়াইররাপা উপজাতির মানুষেরা মনে করতেন ‘ঈশ্বরেরআশীর্বাদ’ এই পাখিটি। শুধু মানুষের মনেই নয়, লোকসাহিত্য এবং উপাখ্যানেও জায়গা করে নিয়েছিল মানুকুরা। নিউজিল্যান্ডের অন্যতম কথাসাহিত্যিক জউও কাউলির লেখা একটি শিশু-সাহিত্য উপন্যাসের মূল চরিত্রই ছিল বিরল এই সাদা কিউয়ি। তাছাড়াও তার অনুকরণে নিউজিল্যান্ডের বাজার ছেড়ে গিয়েছিল সফট-টয়ে।
চলতি ডিসেম্বরেই গোড়ার দিকেই গর্ভবতী হয় কিউয়িটি। তবে অপরিণত ডিমের নিঃসরণ না হওয়ার কারণে ধীরে ধীরে শারীরিক অবনতি হতে থাকা মানুকুরার। প্রয়োজন পড়ে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তা বার করার। প্রথম অপরেশন সফল হলেও, পরবর্তী সপ্তাহে অবনতি হতে থাকে মানুকুরার স্বাস্থ্যের। খাওয়াও বন্ধ করে দেয় বিরলতম পাখিটি। দ্রুত কমতে থাকে ওজন। অনেক যত্নের পরেও শেষ অবধি রক্ষা করা গেল না তাকে।
সাদা কিউয়ির মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে নিউজিল্যান্ডের পাকাহা সংরক্ষণ-কেন্দ্রে। গত দশ বছরে কর্মচারীদের মতোই সেও হয়ে উঠেছিল পাকাহা-র বৃহত্তম পরিবারের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
বন্য অঞ্চলে সাদা কিউয়ির উপস্থিতি লক্ষ করা গেলেও, তা অত্যন্তই বিরল। পাশাপাশি কুকুর, বেড়াল, স্টোটিস, ফেরেটের মতো শিকারি প্রাণীদের উপস্থিতির কারণে যথেষ্ট আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাদের অস্তিত্বও। প্রতি বছর ২ শতাংশ সাদা কিউয়ি পাখির সংখ্যা কমছে বলেই জানান বন্যপ্রাণ সংরক্ষণের আধিকারিকেরা। মানুকুরার মৃত্যুর পর নতুন উদ্যমে সাদা কিউয়ির সংরক্ষণ শুরু হবে বলেই আশ্বস্থ করেছেন তাঁরা। বিরল এই পাখির অস্তিত্ব মুছে যাওয়ার বিরুদ্ধে কাউকে না কাউকে ঢাল হয় দাঁড়াতে যে হবেই...
আরও পড়ুন
নতুন সর্প-প্রজাতির সন্ধান দিলেন তরুণ গবেষক, শুরুতেই আশঙ্কা অবলুপ্তির
Powered by Froala Editor