“মে দিস টাস্ক রুট আউট দ্য লাইস অফ দ্য হেয়ার অ্যান্ড দ্য বেয়ার্ড।”
বাংলায় অনুবাদ করলে, বাক্যটির অর্থ দাঁড়ায় অনেকটা এরকম— ‘চুল-দাড়ির উকুন নিপাত যাক’। না, কোনো নতুন তেল বা শ্যাম্পুর বিজ্ঞাপন নয়, অতিসাধারণ এই বাক্যই এখন ‘অমূল্য রতন’ গবেষকদের কাছে। যার দৌলতে সম্প্রতি পাল্টে গেছে বিশ্বের ইতিহাস।
ইজরায়েলের (Israel) লাচিশ শহরের প্রাচীন ধ্বংসাবশেষ খননের কাজ চলছে বিগত কয়েক বছর থেকেই। এর আগে বেশ কিছু মাটির পাত্র, কাঠ ও পাথরের হাতিয়ার উদ্ধার হয়েছিল সেখান থেকে। এবার এই শহরে সন্ধান মিলল ৩৭০০ বছরের প্রাচীন হাতির দাঁতের তৈরি একটি চিরুনির (Comb)। যার মধ্যে খোদাই করে প্রাথমিক কানানি লিপি লেখা ছিল ছোট্ট একটি শব্দবন্ধ। ১৭টি কানানি অক্ষরে সাজিয়ে যে শব্দবন্ধ তৈরি হয়েছে, তার ইংরাজি অনুবাদের কথা বলা হয়েছে এ-প্রতিবেদনের শুরুতেই। তবে অন্যান্য ভাষার মতো এলোমেলোভাবে শব্দের ব্যবহার নয়। বরং, কর্ম ও ক্রিয়াপদের সঠিক অবস্থানই রীতিমতো চমকে দিয়েছে গবেষকদের। তাঁদের কথায় বিশ্বের প্রাচীনতম লিখিত সম্পূর্ণ বাক্য এটিই।
কানানি লিপি ও কানানাইট বর্ণমালাকে বিশ্বের প্রাচীনতম বর্ণমালা হিসাবেই ধরে নেওয়া হত এতদিন। তবে সময়ের নিরিখে দেখতে গেলে, খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় সহস্রাব্দে কানানি থেকে দ্রুত বিস্তার লাভ করে ও বিবর্তিত হয় মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য ভাষা। তবে কানানি ভাষাভাষীর মানুষরা যে সম্পূর্ণ বাক্য রচনা করতে জানতেন সে-সময়েও, এতদিন তার প্রমাণ ছিল না কোনো। এবার সাম্প্রতিক আবিষ্কার প্রমাণ করল আজ থেকে ৩৮০০-৩৫০০ বছর আগে দক্ষিণ লেভান্টে অর্থাৎ বর্তমানের লেবানন, ইজরায়েল এবং সিনাই উপদ্বীপীয় অঞ্চলেই আবির্ভাব হয়েছিল আধুনিক ভাষার।
ইজরায়েলের জেরুজালেম হিব্রু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতাত্ত্বিক মুমকুওগ্লু ম্যাডেলিন জড়িত ছিলেন এই আশ্চর্য আবিষ্কারের সঙ্গে। তাঁর দেওয়া তথ্য অনুযায়ীই, ৩.৬ সেমি লম্বা ও ২.৫ সেমি চওড়া এই চিরুনিটিতে রয়েছে ১৪টি দাঁত। মূলত, চুল থেকে উকুন নিষ্কাশনের জন্যই ব্যবহৃত এই চিরুনি। এমনকি মাইক্রোস্কোপিক পরীক্ষায় চিরুনির দাঁত থেকে উকুনের দেহাবশেষও পেয়েছেন গবেষকরা। উল্লেখ্য, এই আবিষ্কারকে চলতি দশকের অন্যতম প্রত্নতাত্ত্বিক অনুসন্ধান বলেই দাবি করছেন ইজরায়েলের ইতিহাসবিদরা…
Powered by Froala Editor