রুনের কথা শোনেননি এমন মানুষ নেই বললেই চলে। সাধারণত, উইচক্রাফট কিংবা কালোজাদুর সঙ্গেই উচ্চারিত হয় রুনের কথা। বিশ্বসাহিত্যে একাধিক গল্প-উপন্যাসেই উল্লেখিত হয়েছে রুন লিপি এবং রুনস্টোনের কথা। তবে আদতে রুন (Rune) হল, একটি প্রাচীন স্ক্যান্ডেনেভিয়ান বর্ণমালা। যা মূলত ব্যবহার করত ভাইকিংরা। ৭৯০-১১০০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হত এই বিশেষ হরফ। তার আগেরও কিছু নিদর্শন মিলেছে ঠিকই, তবে ধরে নেওয়া হয় রুনের জন্ম ও বিকাশ হয়েছিল আনুমানিক ৪০০-৫০০ খ্রিস্টাব্দে। এবার এই ইতিহাস এক ধাক্কায় পিছিয়ে গেল অন্ততপক্ষে ৪০০ বছর।
হ্যাঁ, সম্প্রতি এমনই এক আশ্চর্য আবিষ্কার চমকে দিল গবেষকরা। অবশ্য সাম্প্রতিক আবিষ্কার বললে ভুল বলা হয় খানিক। ২০২১ সালের কথা। পূর্ব নরওয়ের হোল পৌরসভার নিকটবর্তী একটি প্রাচীন প্রত্নক্ষেত্রে খনন করতে গিয়েই ভাইকিংদের ব্যবহৃত বেশ কিছু সামগ্রী, কিছু হাড় এবং প্রাচীন শিলালিপির সন্ধান পান ওসলো বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্বের গবেষকরা। বলাই বাহুল্য, এই শিলালিপি (Runestone) লেখা রুন হরফে। বেলেপাথরের বা স্যান্ডস্টোনের ওপর শক্ত কোনো সামগ্রী দিয়ে খোদাই করেই তৈরি করা হয়েছে এই শিলালিপি। একটি নয়, কিছুদিন পর সংশ্লিষ্ট অঞ্চল থেকে আবিষ্কৃত হয়েছিল আরও বেশ কয়েকটি এই ধরনের পাথর।
প্রাথমিকভাবে এই ধ্বংসস্তূপে প্রাপ্ত মানুষের হাড়, দেহাবশেষ এবং অন্যান্য সামগ্রী পরীক্ষা করে গবেষকরা অনুমান করেছিলেন ৫০০ খ্রিস্টাব্দেরও আগে লেখা হয়েছিল এই রুন শিলালিপি। তবে নিশ্চিত হওয়ার জন্যই প্রস্তরখণ্ডের নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয় ল্যাবরেটরিতে। আর তাদের কার্বন ডেটিং-এর ফলাফল দেখেই রীতিমতো চমকে ওঠেন প্রত্নতাত্ত্বিকরা। কমপক্ষে পাথরগুলি খোদাই করা হয়েছিল ২০০০ বছর আগে। অর্থাৎ, প্রথম শতাব্দীতে।
বলতে গেলে এখনও পর্যন্ত পাওয়া স্ক্যান্ডেনেভিয়ান রুনস্টোনের মধ্যে প্রাচীনতম উদাহরণ নরওয়ের এই সদ্য-আবিষ্কৃত প্রত্নসামগ্রীটি। যার সৌজন্যে এক নতুন অধ্যায় যুক্ত হল স্ক্যান্ডিনেভিয়ার ইতিহাসে। সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের নামানুসারেই এক ফুট উচ্চতা এবং প্রস্থের লালচে বাদামি পাথরটির নামকরণ করা হয়েছে ‘সোইনজেরাড স্টোন’। বর্তমানে এই মহামূল্য প্রত্নসামগ্রীটির জায়গা হয়েছে নরওয়ের ‘মিউজিয়াম অফ কালচারাল হিস্ট্রি’ জাদুঘরে। আরও কিছু গবেষণা চালানোর পর তা প্রকাশ্যে আনা হবে বলেই জানাচ্ছেন কিউরেটর এবং প্রত্নতাত্ত্বিকরা…
Powered by Froala Editor