টিকাকরণে সর্বাধিক সাফল্য, তবু সংক্রমণে ভারতকেও হার মানায় এই দেশ

ভারতে দ্রুত করোনা সংক্রমণের অন্যতম কারণ হিসাবে অনেকেই ভ্যাকসিনেশনের অভাবকে দাবি করছেন। এখনও অবধি মাত্র ৩ শতাংশ মানুষ ভ্যাকসিনের দুটি ডোজ পেয়েছেন। বৃহৎ স্তরে প্রতিষেধক দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হলেও এখনও যথেষ্ট জোগান নেই। এই সমস্ত তথ্যই উঠে আসছে। কিন্তু এর মধ্যেই অবাক করেছে ভারত মহাসাগরের উপর ছোট্ট দ্বীপ সিচেলিস। সেদেশের জনসংখ্যা ১ লক্ষেরও কম। আর এর মধ্যেই শতকরা হিসাবে সবচেয়ে বেশি ভ্যাকসিনেশন হয়েছে এই সিচেলিস দ্বীপেই। অথচ সেখানে করোনা সংক্রমণের হার ভারতের চেয়েও অন্তত ৭ গুণ বেশি। সব মিলিয়ে চলতি প্রতিষেধকগুলির কার্যকারিতাকেই আবার প্রশ্নের মুখে তুলেছে এই ঘটনা।

অতিমারীর প্রথম তরঙ্গে সিচেলিস তেমন কঠিন সময়ের মধ্যে পড়েনি। তবু সতর্কতার জন্য লকডাউনের পথে হেঁটেছিল সরকার। ছোট্ট এই দ্বীপটির অর্থনীতি প্রায় সম্পূর্ণ পর্যটন শিল্পের উপর নির্ভরশীল। ফলে অতিমারীতে দেশের অর্থনীতি বড়ো ক্ষতির মুখে পড়ে। অবশেষে মার্চ মাসে পর্যটকদের জন্য সীমান্ত খুলে দেয় সরকার। এতে অবশ্য আশঙ্কার কোনো কারণ দেখেননি কেউই। কারণ ইতিমধ্যে চিনের সিনোফার্মার তৈরি প্রতিষেধক দেওয়া হয়েছে দেশের বড়ো অংশের জনগণের মধ্যে। সিরাম ইনস্টিটিউটের কোভিশিল্ড ভ্যাকসিন দেওয়ার কাজও শুরু হয়েছে ততদিনে। বর্তমান হিসাব অনুযায়ী সিচেলিসের ৬০ শতাংশ মানুষ ভ্যাকসিনের দুটি ডোজই পেয়েছেন। আর একটি অন্তত ডোজ পেয়েছেন এমন মানুষের সংখ্যাও ৭০ শতাংশের বেশি। ইসরায়েলের মতো দেশে ভ্যাকসিনের একটি ডোজ পাওয়া মানুষের সংখ্যা বেশি হলেও দুটি ডোজ পেয়েছেন এমন মানুষের সংখ্যায় সিচেলিস পৃথিবীতে প্রথম। অথচ এপ্রিলের শেষ থেকেই দ্রুত সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে সিচেলিসে। মে মাসের প্রথম সপ্তাহে দৈনিক সংক্রমণের সংখ্যা ১০০ ছাড়িয়ে যায়।

আপাত দৃষ্টিতে দৈনিক ১০০ জনের সংক্রমণ একটি দেশের পক্ষে তেমন মারাত্মক মনে না হতে পারে। কিন্তু যেদেশের জনসংখ্যা ১ লক্ষেরও কম, সেখানে এই পরিসংখ্যান সত্যিই আতঙ্কের কারণ। ভারতে এখনও অবধি প্রতি লক্ষে দৈনিক সংক্রমণের সংখ্যা ২০ জনের কিছু বেশি। ফলে একথা বলাই যায়, সবচেয়ে বেশি প্রতিষেধক দেওয়ার পরেও করোনার দ্বিতীয় তরঙ্গে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে সিচেলিস। তাহলে কি সত্যিই ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা উচিৎ? এই নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন দেশ-বিদেশের চিকিৎসকরাও। ইতিমধ্যে গড়ে উঠেছে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটিও। সমস্ত তথ্য খতিয়ে দেখে শেষ অবধি তাঁরা কী সিদ্ধান্তে আসেন, সেটাই দেখার।

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
সীমান্ত ছেড়ে, করোনা মোকাবিলায় এবার সামিল সামরিক চিকিৎসকরাও