পৃথিবীর সবচেয়ে ‘পৈশাচিক’ হাতের লেখা, কী রহস্য লুকিয়ে এই হস্তাক্ষরে?

দূর থেকে এক ঝলক দেখলে মনে হবে, ছোট্ট শিশু যেন পেন দিয়ে আঁকিবুঁকি করেছে খাতার উপর। কিন্তু কাগজটা কাছে নিয়ে দেখলে স্পষ্ট বোঝা যাবে সেটা একটা হাতের লেখা। না, কোনো শিশুর নয়। লেখার টান থেকেই বেশ বোঝা যায় সেটা প্রাপ্তবয়স্ক কোনো মানুষের। হ্যাঁ, ওপরের ছবিটার কথাই হচ্ছে। এখন বিষয় হল, এই লেখাই বিশ্বের সবচেয়ে ‘পৈশাচিক’ হাতের লেখা (Most Evil Handwriting)। 

অনেকগুলো প্রশ্ন মনের মধ্যে ঘুরঘুর করছে নিশ্চয়ই? প্রথমত, ‘পৈশাচিক’ কথাটা যে হাতের লেখার আগের বিশেষণ হিসাবে বসতে পারে, তা কল্পনা করাই একটু কষ্টসাধ্য। আর হাতের লেখাই বা কার? লেখকের প্রসঙ্গে নয় পরেই আসা যাবে। আপাতত তার পৈশাচিকতা নিয়ে আলোচনা করা যাক বরং। এই দাবি মনগড়া কিংবা আমার-আপনার মতো সাধারণ মানুষের নয়। ইন্টারন্যাশনাল হ্যান্ডরাইটিং ইউনিভার্সিটির তাবড় গবেষক ও অধ্যাপকরাই এমন নামে চিহ্নিত করেছেন এই হাতের লেখাকে। কিন্তু তার কারণ?

হস্তলেখা বিশারদদের মতে, হাতের লেখার মধ্যেই লুকিয়ে থাকে যেকোনো মানুষের চরিত্র। এমনকি তার পরিপার্শ্ব এবং মানসিক অবস্থার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গেই বদলাতে থাকে তার হাতের লেখা এবং স্বাক্ষরও। ঠিক সেভাবেই এই লেখাটিকেও বিশ্লেষণ করেছেন হস্তলিপি বিশারদরা। কী বলছেন তাঁরা? এবার একটু মন দিয়ে লেখাটাকে দেখে নেওয়া যাক। 

হাতের লেখাটা একেবারে দুর্বোধ্য বা জঘন্য নয় মোটেই। কিন্তু তা পড়া দুঃসাধ্য হয়ে ওঠার অন্যতম কারণ হল একটা লাইনের সঙ্গে পরের লাইনের উপরিপাত। হস্তলিপি গবেষক বার্ট ব্যাগেটের মতে, বেসলাইনের সঙ্গে পরবর্তী লাইনের মিশ্রণ বেশ কিছু ব্যক্তিগত সমস্যাকে নির্দেশ করে। যার মধ্যে রয়েছে পিতামাতার সমস্যা, সাফল্যের ভয়, প্যারানইয়ার মতো বিষয়। পাশাপাশি কোনো শব্দের প্রথম অক্ষরের শুরুর অদ্ভুত স্ট্রোকের মধ্যে দিয়ে ফুটে ওঠে বিরক্তি, রাগ, প্রতিহিংসা। এবার ছোটো হাতের ল্যাটিন অক্ষর ‘ডি’ এবং ‘এফ’-এর দিকে চোখ দেওয়া যাক। সেখানেও লক্ষ করা যাবে, ‘ডি’-এর পাশের সোজা দাঁড়িটি একটি আস্ত বৃত্তের আকার ধারণ করেছে। ‘এফ’-এর ক্ষেত্রেও তলার টানের ক্ষেত্রে একইরকম ভঙ্গী। এই দুই চরিত্রের কারণে মানুষ হয়ে ওঠে আধিপত্যবাদী, ব্যঙ্গাত্মক এবং সমালোচনার প্রতি অসংবেদনশীল। আশৈশব যেন সমস্ত কিছুই ঘৃণ্য তাঁর কাছে। এখানেই শেষ নয়। এবার মন দিয়ে খুঁটিয়ে দেখলে বুঝতে পারবেন গায়ের জোরে কলমে চাপ দিয়ে প্রতিটি অক্ষর লেখা হয়েছে কাগজের ওপরে। এমন হাতের লেখা থেকে বোঝা যায়, এই ব্যক্তি রেগে গেলে খুন করতেও হাত কাঁপে না তাঁর। এবং সবথেকে আকর্ষণীয় বিষয় হল, সেই খুন বা অপরাধের দায় তিনি নিজে মুখে স্বীকার করতেও পিছপা হন না। কেননা, তাঁর কাছে এটা কোনো অপরাধই নয়। বরং, ন্যায্য ‘পুরস্কার’-ই দিয়েছেন তিনি। 

আরও পড়ুন
হাতের লেখা খারাপ; গিরিশ ঘোষের ‘গণেশ’দলে ছিলেন বিখ্যাতরাও

এবার নিশ্চয়ই মনের কোনো দানা বাঁধতে শুরু করেছে ভয়ের রেখা? যদিও এই গোটা বর্ণনাকে সারসংক্ষেপ বলাই চলে। এর বাইরেও বহু বহু চরিত্র লুকিয়ে রয়েছে হস্তাক্ষরের মধ্যে। এসব কিছু শুনে এই লেখাকে ‘পৈশাচিক’ বলতে আর দ্বিমতের নেই নিশ্চয়ই? সবশেষে এবার আসা যাক এই লেখার পিছনে থাকা সেই ব্যক্তিটির কথা। 

আরও পড়ুন
ধেয়ে আসছে ভয়ঙ্কর সৌরঝড়, পৃথিবীকে আঘাত করবে আজই

এই কাগজের টুকরোটা আসলে টমাস কেন নামক এক ব্যক্তির লেখা চিঠি। হ্যাঁ, হাতের লেখাটিও তাঁরই। কিন্তু কে তিনি? মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর অপরাধীদের মধ্যে অন্যতম একজন তিনি। হত্যা, অপহরণ, ধর্ষণ থেকে শুরু করে ডাকাতি কিংবা ড্রাগ পেডলিং— কোনোদিকেই কম যান না তিনি। বেশ কয়েক বছর আগেই তাঁকেই বন্দি করে মার্কিন প্রশাসন। আজও মুক্তি মেলেনি তাঁর। কোর্টে গড়াচ্ছে একাধিক কেস। যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের শাস্তি কমবে বলেও আশা নেই কোনো। তাঁর বাস্তবজীবনের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে হুবহু মিলে যায় হাতের লেখার বর্ণনা, তা নিয়ে সন্দেহই নেই কোনো। যাই হোক, এই ছিল পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়ঙ্কর এবং পৈশাচিক হাতের লেখার গল্প। আর আপনার হাতের লেখা? কী বার্তা দেয় সেই হস্তাক্ষর? একবার তা ভালো করে বিশ্লেষণ করে দেখবেন নাকি? ওই যে কথায় আছে, নিজেকে বাজিয়ে দেখে নেওয়া দরকার মাঝে মাঝে…

আরও পড়ুন
ইলিনয়ের রাসায়নিক কারখানায় ভয়ঙ্কর অগ্নিকাণ্ড, দীর্ঘস্থায়ী প্রভাবের আশঙ্কা

Powered by Froala Editor

Latest News See More