১৯৪৯-এ প্রতিষ্ঠার পর থেকে, শেষ ৭১ বছরের ইতিহাসে এই প্রথমবার। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে দর্শকদের জন্য বন্ধ রয়েছে পৃথিবীর সুন্দরতম বাগান, কিউকেনহফ। এর আগে কোনো বছরই পর্যটকদের ফেরায়নি নেদারল্যান্ডের এই ফুলের স্বর্গরাজ্য।
লকডাউনে গৃহবন্দি হয়ে আটকে রয়েছে মানুষ। বিরত রয়েছে বাইরের কর্মযজ্ঞ থেকে। তবে প্রকৃতি সেই সুযোগেই মেলে ধরছে তার রঙিন পাখনা। সম্প্রতি প্রকাশ্যে এল তার ছবি। চিত্রগ্রাহক অ্যালবার্ট ড্রোসের ক্যামেরায় ধরা পড়ল জনশূন্য কিউকেনহফ বাগানের নৈসর্গিক দৃশ্য। পর্যটকের অভাবের মধ্যেও থমকে নেই বাগানের পরিচর্যা। নিজের ছন্দেই দিব্যি সেজে আছে কিউকেনহফ।
দক্ষিণ হল্যান্ডের ৩২ হেক্টর জায়গা জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে এই প্রাকৃতিক শোভা। পৃথিবীর বৃহত্তম ফুলের বাগান এটি। দুষ্প্রাপ্য কালো টিউলিপসহ প্রায় নানান প্রজাতির টিউলিপের অবস্থান এখানে। সারা বছরে প্রায় ৭০ লাখ ফুলের রঙিন ছটায় ঝলমল করে কিউকেনহফ। টিউলিপ ছাড়াও রয়েছে ড্যাফোডিল, চেরিসহ কয়েক হাজার ধরনের ফুল। বাগানের মধ্যে দিয়েই বয়ে গেছে স্বচ্ছ পরিখা। রয়েছে নীল ফুলের সমুদ্র ঘেরা অপূর্ব একটি লেক, কিছু হাওয়াকল আর অসংখ্য আঁকাবাঁকা পথ। তার দু’ধারে বিছানো নানান রঙের গালিচা। ভাড়া নেওয়া বাইক বা নৌকায় যেতে যেতে উপভোগ করা যায় বর্ণ-গন্ধে মোড়া এই অবাক পৃথিবী। সেই ছবিই তুলে ধরেছেন অ্যালবার্ট ড্রোস।
স্থানীয় ভাষায় কিউকেনহফের অর্থ ‘হেঁশেল বাগিচা’। একসময় নিকটবর্তী একটি দূর্গে এই বাগান থেকেই সরবরাহ করা হত সব্জি এবং ফলমূল। সেখান থেকেই এর নাম। তবে পরবর্তী কালে শুধুমাত্র ফুলের চাষের জন্যই ব্যবহৃত হয় এই বাগান। এই বাগান থেকে ফুল রপ্তানি হয় সারা বিশ্বে। প্রতি বছর মার্চ থেকে মে পর্যন্ত সময় পর্যটকদের জন্য খোলা হয় কিউকেনহফ। এই সময় জনজোয়ারে ভেসে যায় পৃথিবীর সুন্দরতম বাগান। মে মাসের প্রথম সপ্তাহে উৎসবেরও আয়োজন করে কর্তৃপক্ষ। অনুষ্ঠিত হয় ‘ফ্লাওয়ার প্যারেড’।
লকডাউনের কারণে কিউকেনহফের সৌন্দর্য থেকে বঞ্চিত হাজার হাজার মানুষ। তাদের খানিকটা হলেও আক্ষেপ কমাতেই অ্যালবার্টের এই উদ্যোগ। গন্ধ না থাকলেও বর্ণের ছটায় সেই ছবি মুগ্ধ করবে যে কাউকে। দেখাবে এই অস্থির পরিস্থিতিতেও বসন্ত চলছে কিউকেনহফে।