ঘড়ির কাঁটা এগিয়ে চলেছে নিজের ছন্দে। অথচ, গতিরুদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে গাড়ি। সেইসঙ্গে শহরের ক্যাকাফোনি, গাড়ির হর্ন, ধোঁয়া। সুযোগ নেই জায়গা ছেড়ে ওঠারও। মিনিট কয়েকের যানজট ঠিক কতটা দুর্বিষহ হয়ে উঠতে পারে, কম-বেশি তার অভিজ্ঞতা রয়েছে সকলেরই। অপেক্ষার প্রহর গুনতে গুনতে মিনিটের হিসাবও যেন ঘণ্টায় গিয়ে ঠেকে। কিন্তু এক টানা কয়েকদিন ধরে যদি এমনই ভোগান্তির মুখে পড়তে হয়, তবে?
বছর দশেক আগের ঘটনা। ২০১০ সালের আগস্ট মাসে ভয়াবহ যানজটে ফেঁসেছিল চিনের (China) কয়েক লক্ষ মানুষ। এক দিন-দু’দিন নয়, টানা ১২ দিন ধরে গতিরুদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়েছিল কয়েক লক্ষ মোটরগাড়ি। থমকে গিয়েছিল রাজধানী বেজিং-এর (Beijing) গতিময়তা। বিশ্বের ইতিহাসের দীর্ঘতম যানজট (Longest Traffic Jam) বলেই ধরে নেওয়া হয় এই ট্রাফিক জ্যামকে।
সেবছর আগস্ট মাসের শুরুতেই চিন প্রশাসন ঘোষণা করেছিল, সংস্কারের কাজের জন্য বন্ধ করা হবে দেশের একাধিক মহাসড়ক। যার ফলে ৫০ শতাংশ কমে আসবে এক্সপ্রেস ওয়েগুলির সক্ষমতা। ১৪ আগস্ট রাস্তা সংস্কারের কাজ শুরু হওয়ার পর থেকেই গোটা দেশজুড়ে থাবা বসায় স্থবিরতা। যানজটে নাকাল হয়েছে দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রাজপথগুলি। তবে ভয়াবহ পরিণতি হয় চিনের ১১০ নম্বর জাতীয় সড়কের। বেশ কয়েকটি লেন একসঙ্গে বন্ধ করে দেওয়ায় এমনিতেই কমেছিল গতিময়তা। সেইসঙ্গে পরিস্থিতি আরও দুরূহ করে তোলে অজস্র মালবাহী ট্রাক। এমন ঘটনার সম্মুখীন হতে হবে, তার বিন্দুমাত্র আঁচ পায়নি ট্রাফিক কন্ট্রোল বোর্ডও।
প্রায় দু’সপ্তাহ ধরে চলে এই যানজটে আটকে থাকা গাড়ির সারির দৈর্ঘ্য ছিল আনুমানিক ১০০ কিলোমিটার। সারাদিনে কারোর ভাগ্য জুটেছিল ১ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করার সুযোগ। কোনো গাড়ি আবার একই জায়গায় দাঁড়িয়ে ছিল টানা ২-৩ দিন।
আরও পড়ুন
আমাজন কেটে দীর্ঘতম মহাসড়ক নির্মাণ ব্রাজিলে, অনুমোদন আদালতের
তবে গোটা দেশে স্থবিরতা নেমে এলেও, এই যানজটের দরুণ গতিময়তা পেয়েছিল চিনের অর্থনীতি। কথায় আছে, ‘কারোর সর্বনাশ, তো কারোর পৌষ মাস’। এক্ষেত্রেও তেমনই। কয়েক দিনের ট্রাফিক জ্যামে ফুলে ফেঁপে উঠেছিলেন চিনের হকাররা। মানুষের অসহায়তার সুযোগে সেসময় খাবার তো বটেই, প্রায় ১৫ গুণ দামে বিক্রি হয়েছিল পানীয় জলের বোতল।
আরও পড়ুন
বিশ্বের দীর্ঘতম আকাশপথ, উত্তরমেরুর ওপর দিয়ে যাত্রা মহিলা-পরিচালিত ভারতীয় বিমানের
টানা ১২ দিন পর ২৬ আগস্ট চিনের এই ‘মেগা ট্রাফিক জ্যাম’ কাটলেও, মুক্তি মেলেনি চিনের। হঠাৎ জট কাটার পর আটকে থাকা গাড়ির স্রোতে গতিরুদ্ধ হয়ে পড়েছিল চিনের ছোটো ছোটো রাস্তাগুলিও। ভোগান্তি পোহাতে হয়েছিল কয়েক কোটি মানুষকে। তবে এই ঘটনার পরেও তেমন কোনো শিক্ষা নেয়নি চিন। ২০১৫ সালে পুনরায় একইরকম যানজট তৈরি হয়েছিল চিনের জি-৪ বেজিং-হংকং এক্সপ্রেসওয়েতে। যা স্থায়ী হয়েছিল ১০ দিন। শুধু শারীরিক ক্লান্তিই নয়, এমন দীর্ঘ ট্রাফিক মানসিকভাবেও যে কাউকে বিধ্বস্ত করে তোলার পক্ষে যথেষ্ট…
আরও পড়ুন
পৃথিবীর দ্বিতীয় দীর্ঘতম প্রাচীর রয়েছে ভারতেই, সন্ন্যাসী-হত্যায় পেয়েছিল ‘অমরত্ব’
Powered by Froala Editor