আল্পস পর্বতের বুকে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে রয়েছে একাধিক আকাশচুম্বী সেতু। কোথাও আবার পাহাড় কেটে বানানো হয়েছে টানেল। আর তার ওপর দিয়ে ছুটছে লাল রঙের বেশ কিছু ট্রেন। নিচে গলফের মাঠ, রাস্তা, ছোটো ছোটো বাড়ি-ঘর আর ছবির মতো প্রাকৃতিক দৃশ্য— সবমিলিয়ে এই ছবিতে চোখ আটকে যাওয়াই স্বাভাবিক। তবে আরেকটু খুঁটিয়ে দেখলেই বোঝা যাবে, এই ছবির বিভিন্ন অংশে যে-সকল ট্রেনের বগি দেখা যাচ্ছে আলাদা আলাদাভাবে, সেগুলি একটি ট্রেনেরই অংশ!
হ্যাঁ, সম্প্রতি এমনই এক আশ্চর্য ট্রেন ছুটতে দেখা গেল সুইজারল্যান্ডে (Switzerland)। যার বগির সংখ্যা ১০০! দৈর্ঘ্য ১.৯ কিলোমিটার! অর্থাৎ, প্রায় দু’কিলোমিটার। দেখতে গেলে, কলকাতার বুকে পর পর দুটি মেট্রো স্টেশনের দূরত্বও যেন ম্রিয়মাণ এই ট্রেনের দৈর্ঘ্যের কাছে। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে এমন আশ্চর্য ট্রেন তৈরির কারণ কী?
রেলগাড়ির আবিষ্কার এবং বিশ্বব্যাপী তার প্রচলনের জন্য কৃতিত্ব পায় ব্রিটেনই। তবে রেল তৈরির প্রযুক্তির দিক থেকে পিছিয়ে ছিলেন না সুইসরাও। এমনকি ব্রিটিশদের উদ্ভাবন করা এই আশ্চর্য যানটিকে নিজেদের দেশের প্রাকৃতিক পরিস্থিতির সঙ্গে মানানসই করে নিতে, একাধিক বদল এনেছিলেন সুইস প্রযুক্তিবিদরা। তাছাড়াও রেলগাড়িকে বিলাসবহুল করে তোলার পিছনেও সুইসদের ভূমিকা কম নয়। চলতি বছরেই ১৭৫ বছরে পা দিয়েছে সুইস রেলওয়ে। আর সেই উপলক্ষেই রেল-নির্মাণে সুইস প্রকৌশলীর বিশ্বের সামনে তুলে ধরতে এই বিশেষ উদ্যোগ সুইস প্রশাসনের।
প্রেডা থেকে অ্যালভেনিউ— সুইস আল্পসের মধ্যবর্তী এই রেলপথকে বহু আগেই আন্তর্জাতিক ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসাবে চিহ্নিত করেছিল ইউনেস্কো। কাজেই দেশের কৃতিত্ব প্রচারের জন্য এই পথটিকেই বেছে নিয়েছিল সুইস প্রশাসন। সবমিলিয়ে ২২টি টানেল এবং ৪৮টি সেতু পেরিয়ে ২৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই পথ অতিক্রম করতে ঐতিহাসিক ট্রেনটির সময় লাগে প্রায় এক ঘণ্টা। আর তার পরেই তৈরি হয় এক নতুন বিশ্বরেকর্ড। সাড়ে ৪ হাজার আসন সংখ্যা বিশিষ্ট এই ট্রেনটিই বর্তমানে বিশ্বের দীর্ঘতম যাত্রীবাহী রেলগাড়ি।
বছর দুয়েক আগের কথা। তখনও পর্যন্ত দেশজুড়ে জারি রয়েছে কড়া লকডাউন। তারই মধ্যে এক অনন্য নজির গড়েছিল ভারতীয় রেল। কৃষিজ পণ্য পরিবহন ও সরবরাহের জন্য প্রকাণ্ড এক পার্সেল ট্রেন বা মালগাড়ির ব্যবস্থা করেছিল ভারত। যার দৈর্ঘ্য প্রায় ২ কিলোমিটার। এবার ভারতের সেই আশ্চর্য কৃতিত্বকেও যেন ছাপিয়ে গেল সুইজারল্যান্ড…
Powered by Froala Editor