উত্তরে কৃষ্ণ সাগর আর দক্ষিণে ক্যাস্পিয়ান সাগর। বিশালাকার এই দুই হ্রদকে জুড়ে রেখেছে ছোট্ট দার্দানেলিস প্রণালী। এশিয়া এবং ইউরোপ মহাদেশকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে এই প্রণালী। তবে এবার তাদের জুড়ে ফেলেছে তুরস্ক সরকার (Turkey)। দার্দানেলিস শহরে উদ্বোধন হল নতুন এক উড়ালপুলের। যা এশিয়া আর ইউরোপকে জুড়ে দিয়েছে। অবশ্য এমনটা এই প্রথম নয়। তুরস্কের বুকে এর আগেও এমন উড়ালপুল তৈরি হয়েছে। কিন্তু দার্দানেলিস সেতুর দৈর্ঘ্য তাদের চেয়ে অনেকটাই বেশি। বস্তুত সারা পৃথিবীর মধ্যেই দীর্ঘতম এই সেতু (Longest Bridge)।
১৯১৫ দার্দানেলিস সেতু। তার মোট দৈর্ঘ্য ৪.৬ কিলোমিটার। দুদিকের মিনারগুলির উচ্চতা প্রায় ৩১৮ মিটার। আর মিনারগুলির মাঝের সেতুর ঝুলন্ত অংশটুকুরই দৈর্ঘ্য ২ কিলোমিটারের বেশি। এত দীর্ঘ উড়ালপুল পৃথিবীর কোথাও নেই। তুরস্কের অসংখ্য ঐতিহাসিক নির্মাণের মধ্যে এই সেতু আরেক গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন বলেই মনে করছেন অনেকে।
কাজটা অবশ্য সহজ ছিল না। ৫ বছর আগে ২০১৭ সালে প্রথম দার্দানেলিস শহর থেকে সেতু তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর আগে তুরস্কের এশীয় এবং ইউরোপীয় অংশকে জুড়ে থাকা তিনটি সেতুই ছিল ইস্তানবুল শহরে। সেখানে প্রণালী অনেক কম প্রশস্ত। দার্দানেলিস শহরে সেতু তৈরি একরকম অসম্ভব বলেই মনে করেছিলেন অনেকে। কিন্তু হাল ছাড়েননি তুরস্কের ইঞ্জিনিয়াররা। দক্ষিণ কোরিয়ার একটি বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে মিলিতভাবে শুরু হয় কাজ। ২.৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থ বরাদ্দ করা হয় এই প্রকল্পের জন্য।
৫ বছর ধরে প্রায় ৫ হাজার কর্মীর অক্লান্ত পরিশ্রমে অবশেষে সাফল্য পেল এই প্রকল্প। আর তুরস্কের আসন্ন কেন্দ্রীয় নির্বাচনের আগেই সেখানে শুরু হয়ে গেল যান চলাচল। যে দূরত্ব জলপথে পাড় হতে এতদিন প্রায় ৬ ঘণ্টা সময় লাগত, এবার সেই দূরত্ব কয়েক মিনিটে অতিক্রম করা যাবে। নবনির্মিত এই সেতুটি অটোমান সাম্রাজ্যের দুর্ধর্ষ নৌবাহিনীর প্রতি উৎসর্গ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তুরস্ক সরকার। ১৯১৫ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় এই দার্দানেলিস শহরেই ফ্রান্স ও ইংল্যান্ডের মিলিত বাহিনীকে হারিয়ে দিয়েছিল অটোমান সেনাবাহিনী। সেই স্মৃতি মনে রেখেই সেতুর নাম রাখা হয়েছে ১৯১৫ দার্দানেলিস সেতু। আবার আগামী বছরেই শতবর্ষ পূর্ণ করবে তুরস্কের প্রজাতান্ত্রিক ব্যবস্থা। সব মিলিয়ে এক ঐতিহাসিক মুহূর্তের সামনে দাঁড়িয়ে আরেক ইতিহাস গড়ল তুরস্ক।
আরও পড়ুন
নিরুত্তাপ প্রশাসন, নিজেই বাঁশের সেতু তৈরি করলেন ওড়িশার নৌচালক
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
এই সেতুতে এলেই ‘আত্মহত্যা’র চেষ্টা করে কুকুররা, কেন?