যতদূর দেখা যায় শুধু বরফ আর বরফ। তার মাঝেই জেগে রয়েছে অর্ধগোলাকৃতি ছোট্ট একটি বরফের স্তূপ। ইগলু। এই তুষারগৃহেই বসবাস করেন মেরু অঞ্চলের ইনুইট মানুষরা। বৈদেশিক পর্যটকদের কাছে তার জনপ্রিয়তা নেহাত কম নয়। প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা খরচ করে বহু পর্যটক, এই অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করতে পাড়ি দেন সুইজারল্যান্ড কিংবা নরওয়েতে। দিন কাটিয়ে আসেন ইগলুর ভিতর। এবার এই ‘হিমশীতল ঘরে’ বসে চা-পান কিংবা আহারাদি করার অভিজ্ঞতা নেওয়া যাবে ভারতেও। হ্যাঁ, সম্প্রতি কাশ্মিরের (Kashmir) গুলমার্গে তৈরি হল এমন এক আশ্চর্য ইগলু ক্যাফে (Igloo Cafe)।
‘কোলাহই গ্রিন’ গ্রুপের স্কি রিসর্টের তত্ত্বাবধানে প্রথমবার তুষারগৃহের সাক্ষী হল ভূস্বর্গ। ফলে, এই ইগলুই এখন কাশ্মিরের পর্যটকদের কাছে অন্যতম আকর্ষণ, তা আর বলার অপেক্ষা থাকে না। এশিয়া তো বটেই, গুলমার্গের এই ইগলু ক্যাফে গোটা বিশ্বের মধ্যে বৃহত্তম। এমনটাই দাবি করছে হোটেল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ভারতের মতো দেশে হঠাৎ এই ইগলু ক্যাফে তৈরির পরিকল্পনা কেন?
বিগত দু’বছর ধরেই রীতিমতো চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন কাশ্মিরের পর্যটনশিল্প। আর তার অন্যতম কারণ হল করোনাভাইরাস মহামারী। কাশ্মিরিদের আয়ের পথে ফেরাতেই এই উদ্যোগ সংশ্লিষ্ট হোটেল সংস্থাটির। সুইজারল্যান্ডে এই ধরনের ক্যাফের অস্তিত্ব থেকেই অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন সংশ্লিষ্ট হোটেলমালিক। তার জনপ্রিয়তা দেখেই ভারতের বুকে এই ক্যাফে তৈরির চিন্তাভাবনা করেন তিনি।
তবে খুব কিছু সহজ ছিল না এই কাজ। প্রথমত, ইগলু তৈরি করা যেমন সময়সাপেক্ষ, তেমনই ইগলুর রক্ষণাবেক্ষণ করাও বেশ চ্যালেঞ্জের ব্যাপার। পাশাপাশি ভারতীয় আবহাওয়ায় ইগলুর চিরকালীন স্থায়ি হবে না, তাও এক প্রকার নিশ্চিত। হোটেল কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছে, দীর্ঘ ৬৪ দিনের প্রচেষ্টায় ২৫ জন শ্রমিক তৈরি করেছেন এই ইগলু। যার ব্যাস প্রায় ৪৪.৫ ফুট ও উচ্চতা ৩৭ ফুট। পাশাপাশি তার দেওয়ালও ৫ ফুট চওড়া।
আরও পড়ুন
কাশ্মিরের প্রথম মহিলা হুইলচেয়ার বাস্কেটবল খেলোয়াড়, স্বপ্ন দেখাচ্ছেন বাসির
এতদিন পর্যন্ত গিনেস বুকের পাতায় বৃহত্তম ইগলু ক্যাফের তকমা ছিল সুইজারল্যান্ডের একটি ক্যাফের মুকুটে। যার উচ্চতা ৩৩ ফুট। তার থেকেও এই ক্যাফের আয়তন বৃহত্তর হওয়াই, গুলমার্গের এই ক্যাগেই এখন বৃহত্তম ইগলু ক্যাফেটেরিয়া। তবে অস্থায়ী হওয়ার কারণে আদৌ গিনেস বুক তাকে স্বীকৃতি জানাবে কিনা, সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে তা নিয়ে।
আরও পড়ুন
চরম অবহেলায় ধুঁকছে কাশ্মিরের প্রথম প্রকাশনা সংস্থা
এই ইগলুর মধ্যেই রয়েছে ৪টি ডিনার টেবিল। কাজেই, একইসঙ্গে পরিষেবা নিতে পারবেন ১৬ জন। অবশ্য বর্তমানে পর্যটন মরশুমের কথা মাথায় রেখে, আরও ৬টি অস্থায়ী টেবিল স্থাপন করেছে হোটেল কর্তৃপক্ষ। আগামী মার্চের ১৫ তারিখ পর্যন্ত পাওয়া যাবে এই পরিষেবা। তারপর রিসর্ট কর্তৃপক্ষই ধ্বংস করে দেবে এই ইগলুকে। কেননা, গরমে বরফ গলতে শুরু করলে ঘটতে পারে দুর্ঘটনা। তবে এখনও হাতে সময় রয়েছে মাসখানেক। তার মধ্যে ঘুরে আসবেন নাকি কাশ্মিরের এই অভিনব ক্যাফেতে?
আরও পড়ুন
কাশ্মিরি শালের আদলে নকশিকাঁথা, নেপথ্যে বাঙালি শিক্ষক
Powered by Froala Editor