যতদূর দেখা যায় শুধু বরফ আর বরফের স্তূপ। আর এই অপার্থিব পরিবেশের মাঝে জেগে রয়েছে বিশালাকার কয়েকটি রিসর্ট। সারাবছরই সেখানে ভিড় লেগে থাকে হাজার হাজার মানুষের। বা আরও ভালো করে বলতে গেলে অভিযাত্রী এবং স্কি স্কিয়ারদের। এককথায় তাঁদের কাছে এই অঞ্চল স্বর্গরাজ্যই বটে।
কথা হচ্ছে বলিভিয়ার (Bolivia) আন্দিজ পর্বতের চাকালতায়া হিমবাহের ওপর অবস্থিত স্কি-রিসর্ট (Ski-Resort) নিয়ে।
সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৫৩০০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত এই রিসর্টই বিশ্বের সর্বোচ্চ স্কি-রিসর্ট। হিসেব অনুযায়ী, এই রিসর্ট এভারেস্টের বেস ক্যাম্পের থেকেও উঁচুতে অবস্থিত। নাম রয়েছে গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডেও। তবে শুরুতে যে বর্ণনা দেওয়া হয়েছে, তার সঙ্গে আজকের দৃশ্য মেলাতে গিয়ে ভিরমি খেতে হবে যে কাউকে।
না, তুষারের দেখা নেই কোনো। নেই পর্যটকও। প্রায় পরিত্যক্ত অবস্থাতেই ধুঁকছে বিলাসবহুল স্কি-রিসর্ট। শীতকাল ছাড়া বরফের দেখা পাওয়াও দুষ্কর। গোটা অঞ্চলটাই পরিণত হয়েছে ধূসরে। চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে পাথরের টুকরো ও শিলাখণ্ড। জলবায়ু পরিবর্তন (Climate Change) এমনই ভয়ঙ্করভাবে থাবা বসিয়েছে আন্দিজের বুকে।
আরও পড়ুন
শুকিয়ে যাচ্ছে হিমবাহ, ভাঙছে গ্রামের ঐক্যও; জলবায়ু পরিবর্তনের কোপ কাশ্মীরে
২০০৫ সালের কথা। বিজ্ঞানীদের গবেষণা জানিয়েছিল, ফুরিয়ে আসছে চাকালতায়া হিমবাহের আয়ু। ১৮ হাজার বছরের পুরনো এই হিমবাহ মাত্র এক দশক স্থায়ী হবে বলেই জানিয়েছিলেন তাঁরা। তবে সেই ভবিষ্যদ্বাণীও মিথ্যে হয়ে যায়। ২০০৯ সালেই গলে যায় সম্পূর্ণ হিমবাহটি। অবশ্য তার পরেও ইতিউতি বরফের দেখা মিলত চাকালতায়ায়। ধীরে ধীরে বদলে যাচ্ছে সেই পরিবেশটাও। আবহাওয়ার পরিবর্তনে কমে এসেছে তুষারপাতের পরিমাণও। বর্তমানে গোটা অঞ্চলটির ভূপ্রকৃতি যা চেহারা নিয়েছে, তাতে স্কিইং তো বটেই, পর্বতাভিযানও দুরূহ ব্যাপার।
আরও পড়ুন
শিল্পীদের তুলিতে পরিবেশ ও জলবায়ুর পরিবর্তন, প্রদর্শনী মার্কিন রেস্তোরাঁয়
তবে শুধু বরফ গলনই একমাত্র চিন্তার বিষয় নয় পরিবেশবিদদের। ভাবাচ্ছে বায়ুদূষণের মাত্রাও। চাকালতায়া থেকে খানিকটা নিচে নামলেই নজরে আসে লা পাজের বৃহত্তম স্যাটালাইট শহর এল অল্টো। পর্বতের উপর থেকে দেখলে, খালি চোখেই স্পষ্ট বোঝা যায় তার মাথায় জমে রয়েছে ঘন ধোঁয়াশা। জলবায়ুর পরিবর্তনে বিগত দু’দশকে বদলেছে সেখানকার সাধারণ মানুষের দৈনিক যাপনও।
আরও পড়ুন
জলবায়ু পরিবর্তনের হাত থেকে পৃথিবীকে বাঁচাতে পারে ‘ব্লু কার্বন সিঙ্ক’
বর্তমানে বলিভিয়া কার্বন নির্গমনের তালিকায় ১৮১টি দেশের মধ্যে রয়েছে ৮০তম স্থানে। ইউনেস্কো-সহ একাধিক আন্তর্জাতিক সংস্থা জানিয়েছে ২০৫০ সালের মধ্যেই গলে যাবে বলিভিয়ার ৫০ শতাংশ পার্মাফ্রস্ট। কিন্তু এই সতর্কতার তারপরেও নিরুত্তাপ প্রশাসন। চাকালতায়ার মতো সম্পূর্ণভাবে গলে না গেলেও, ইতিমধ্যেই ধুঁকছে বলিভিয়ান আন্দিজের আরও বহু হিমবাহ। পানীয় জলের ৯৫ শতাংশের উৎস ছিল যেগুলি। হিমবাহের গলনে পানীয় জলের সংকটও একটি বড়ো সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে সাম্প্রতিক সময়ে। এমনকি বিগত পাঁচ বছরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে চালু করতে হয়েছে জলের রেশন। পরবর্তীতে এই সমস্যা কোথায় গিয়ে পৌঁছাবে তা সহজেই অনুমেয়। প্রশ্ন থেকে যায়, এই আসন্ন বিপদ সম্পর্কে অবগত হয়েও কি সচেতনতা গড়ে উঠবে না আমাদের মধ্যে?
Powered by Froala Editor