জম্মু-কাশ্মীরে বিশ্বের সর্বোচ্চ রেলব্রিজ, সম্পূর্ণ প্রাথমিক নির্মাণ

তলা দিয়ে বয়ে গেছে চেনাব নদী। তার ওপরে ঝুলে রয়েছে বিশাল লোহার খিলান। হ্যাঁ, ভূস্বর্গের কথাই হচ্ছে। সোমবার শেষ হল বিশ্বের সর্বোচ্চ রেলওয়ে ব্রিজের প্রাথমিক নির্মাণ। ইতিহাস তৈরি করল ভারত। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এই ব্রিজের উচ্চতা প্রায় ১৩১৫ মিটার। আর নদী থেকে উচ্চতা ৩৫৯ মিটার। অর্থাৎ, ব্রিজের একেবারে তলায় যদি আইফেল টাওয়ারকেও দাঁড় করানো হয়, সেই নির্মাণও ছুঁতে পারবে না এই ব্রিজকে। তাঁর থেকেও ৩৫ মিটার বা ১০৫ ফুট উঁচু চেনাব রেলওয়ে ব্রিজ।

জম্মু-কাশ্মীরের চেনাব বা চন্দ্রভাগা নদীর ওপর তিন বছর আগে শুরু হয়েছিল এই ব্রিজের নির্মাণ। উদ্দেশ্য ছিল দেশের অন্যান্য অংশের সঙ্গে ভূস্বর্গের উপত্যকার রেলপথে সংযোগস্থাপন। তবে দুর্গম পার্বত্য অঞ্চলে এমন একটি ঝুলন্ত সেতু নির্মাণ, সবথেকে বড়ো চ্যালেঞ্জ ছিল ভারতীয় প্রকৌশলীদের কাছে। সেই চ্যালেঞ্জের প্রাথমিক ধাপ সাফল্যের সঙ্গেই উতরোলেন তাঁরা। এবার বাকি শুধু রেলপথ স্থাপনের কাজ। 

উদামপুর-বারামুল্লা সংযোগকারী রেলপথ পরিকল্পনার সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল এই সেতুটি। ৩২৬ কিলোমিটার দীর্ঘ সেই রেল-প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছিল ২০০৪ সালে। তবে চেনাব নদীর গভীর উপত্যকার জন্যই এতদিন অসম্পূর্ণ ছিল সংযোগস্থাপনের কাজ। হিসাব বলছে ব্রিজটি চালু হয়ে গেলে ১২ ঘণ্টার পথ অতিক্রম করা যাবে মাত্র ৬ ঘণ্টায়। আর আগামী আড়াই বছরের মধ্যেই সম্পূর্ণভাবে চালু হয়ে যাবে এই রেলপথ।

৪৭৬ মিটার দৈর্ঘ্যের এই খিলানটি প্রস্তুত করতে ব্যবহৃত হয়েছে ১০ হাজার ৬১৯ মেট্রিক টন ইস্পাত। আর এই ব্রিজ তৈরিতে ব্যয় হয়েছে প্রায় ১ হাজার ২৫০ কোটি টাকা। ১৪ মিটার প্রশস্ত এই ব্রিজে স্থাপিত হবে ডুয়েল ক্যারেজ লাইন। তাতে ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার বেগে ছুটতে পারবে রেলইঞ্জিন।

আরও পড়ুন
১৫০০ বছর আগেও ভারতে প্রচলিত ছিল ভূমিকম্প-প্রতিরোধক নির্মাণকৌশল, তাজ্জব প্রত্নতাত্ত্বিকরা

তবে শুরু থেকে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছিলেন এই সেতুর নিরাপত্তা নিয়ে। কাশ্মীরের মতো যুদ্ধ-বিধ্বস্ত অঞ্চলে কতটা দীর্ধস্থায়ী হবে সরকারের এই পরিকল্পনা? যেখানে দু’দিন ছাড়া ছাড়াই লেগে রয়েছে সন্ত্রাসবাদী হামলা, সেখানে এমন সেতু তো যে কোনো সময়ে আক্রান্ত হতে পারে বিস্ফোরণে। তবে এই সম্ভাবনা উড়িয়ে আশ্বস্ত করছেন প্রযুক্তিবিদরা। জানাচ্ছেন, উচ্চমাত্রার বিস্ফোরণ তো বটেই, পাশাপাশি এই ব্রিজ সহ্য করে নেবে ৮ রিখটার মাত্রার ভূমিকম্পকেও। প্রতি ঘণ্টায় ২৬৬ কিলোমিটার গতিবেগের বায়ুপ্রবাহও প্রভাব ফেলতে পারবে না চেনাব ব্রিজে।

আরও পড়ুন
হাইওয়ে নির্মাণের সিদ্ধান্তে সংকটে পিরামিড, সমালোচনায় ঐতিহাসিক এবং সংরক্ষকরা

অন্যদিকে এই ব্রিজের নির্মাণ ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে অঞ্চলের অর্থনীতিতেও, ধারণা বিশেষজ্ঞদের। আগামী দিনে পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ হয়ে উঠতে চলেছে এই রেলব্রিজ। আর পর্যটকদের আনাগোনাই বাড়িয়ে দেবে আঞ্চলিক আয়কে। 

আরও পড়ুন
বন্যা রোধ থেকে নতুন শহর নির্মাণ – এম বিশ্বেশ্বর ও ভারতের ‘ইঞ্জিনিয়ার দিবস’

এতদিন পর্যন্ত বিশ্বে সর্বোচ্চ রেলব্রিজের মর্যাদা পেয়ে এসেছে চিনের বেইপানজিয়াং রেলব্রিজ। দুর্গম থেকে দুর্গমতম স্থানে রেল পরিষেবা প্রদানের জন্য, জাপানের সঙ্গে প্রায় একইসঙ্গে উচ্চারিত হয় চিনের কৃতিত্বও। পিছিয়ে রইল না ভারত। ঐতিহাসিক এই ব্রিজ তৈরির মাধ্যমেই সেই অধ্যায়ের সূচনা করতে চলেছে ‘ইন্ডিয়ান রেলওয়ে’…

Powered by Froala Editor