খ্রিষ্টপূর্ব ৪৩১-৪০৫ অব্দ। গ্রিসে তখন স্বর্ণযুগ। আর সেই সময়েই পেলোপনেশিয়ান যুদ্ধে সমুদ্রের তলায় তলিয়ে গিয়েছিল একটি প্রাচীন জাহাজ। ভূমধ্যসাগরের ডুবে থেকে প্রায় ২৪০০ বছরের সেই ধ্বংসস্তূপ ঘিরেই সম্প্রতি তৈরি হয়েছে একটি আন্ডার-ওয়াটার জাদুঘর। উল্লেখ্য পৃথিবীর মধ্যে এমন মিউজিয়াম এই প্রথম। সেইসঙ্গে রয়েছে কোরাল-উদ্যানও। গত অক্টোবর মাসের শেষেই উদ্বোধন হয়েছিল এই মিউজিয়ামের। এবার দর্শকদের জন্যেও খুলে গেল এই জাদুঘর।
তবে এই নিদর্শন দেখতে গেলে জলতল থেকে ৮০ ফুট গভীরে ডাইভিংয়ের মাধ্যমেই পৌঁছাতে হবে দর্শকদের। থাকছে বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ডুবুরি গাইডরাও। ৯০ ফুট দৈর্ঘ্যের এই জাহাজটি মূলত ছিল একটি মাদক-পরিবাহী কার্গো। ডুবে যাওয়ার পরেও সেখানে প্রাচীন মাদকের বোতল এবং বিভিন্ন মাটির চেয়ার-টেবিল সংরক্ষিত রয়েছে এখনও।
১৯৮৫ সালে প্রথম স্থানীয় মৎস্যজীবীরা এই জাহাজটি আবিষ্কার করেছিলেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও জনসমক্ষে সেইভাবে আসেনি এর অস্তিত্ব। বছর সাতেক পর আর্কিওলজিস্ট এলপিডা হাটজিডাকি অনুসন্ধান করেন এর পিছনে লুকিয়ে থাকা ইতিহাসের। জাহাজটির আয়তন ৩৯ ফুট বাই ৮০ ফুট। যা তৎকালীন অন্যান্য বাণিজ্যতরীর থেকে অনেকটাই বড়ো। সব মিলিয়ে ৪ হাজার দুই হাতল বিশিষ্ট মাটির ওয়াইন-জগ অক্ষত রয়েছে জাহাজটির মধ্যে।
সম্ভবত অ্যাথেনিয়ানদের দ্বারাই ব্যবহৃত হত। এথেন্স এবং স্পার্টাদার যুদ্ধের শিকার হয় এই বাণিজ্যতরী। জাহাজের অবশিষ্ট কঙ্কালের মধ্যেও বেশ কিছু দহনের দাগ চিহ্নিত করেছেন আর্কিওলজিস্টরা।
মিউজিয়ামটি উদ্বোধনের পর থেকে এখনও অবধি মোট ৩০০ জন যাত্রী ঘুরে এসেছেন সেখানে। তার মধ্যে রয়েছে ২৫০ জন পর্যটক ডাইভার। তবে কোভিড পরিস্থিতির কারণেই এই মিউজিয়াম এখনও পর্যটনের মূল হটস্পট হয়ে উঠতে পারেনি বলে ধারণা বিশেষজ্ঞদের। ২০২১ সালের জুন মাসের পর থেকে ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে উঠতে পারে বলেই মনে করছেন তাঁরা।
পর্যটকদের জন্য ডাইভার-গাইড বাধ্যতামূলক করেছে গ্রিস প্রশাসন। অন্যথায় ডাইভিং-এর সার্টিফিকেট দেখিয়েও মিউজিয়াম দর্শনে যেতে পারেন পর্যটকরা। তবে জলে নামতে না চাইলেও বঞ্চিত থাকবেন না তাঁরা। থাকছে ২৪ ঘণ্টার লাইভ স্ট্রিমিংয়ের ব্যবস্থাও। কিন্তু সে ব্যাপারে এখনও সবটা প্রকাশ্যে আনেনি মিউজিয়াম কর্তৃপক্ষ।
আরও পড়ুন
অনলাইনেই মিউজিয়াম, ঐতিহাসিক সামগ্রীর সম্ভার নিয়ে নেটদুনিয়ায় যাদবপুরের ছাত্র
ভূমধ্যসাগরের গভীরে ডুব দিলে শুধু যে এই ইতিহাসের সন্ধান পাওয়া যাবে, তেমনটা নয় একেবারেই। সেইসঙ্গেই দেখতে পাওয়া যাবে ৩০০ প্রজাতির মাছ, মেডিটেরিয়ান মঙ্ক শিল এবং কোরালের অবিশ্বাস্য সজ্জা। যে সৌন্দর্য এক ধাক্কায় বাড়িয়ে দেবে যে কারোর সমুদ্র-বিহ্বলতাকে। বিস্মিত করবে অপরূপ প্রাকৃতিক দৃশ্যে...
Powered by Froala Editor