ডিসঅ্যাসোসিয়েটিভ আইডেন্টিটি ডিসঅর্ডার বা ডিআইডি। এমনই এক মানসিক ব্যাধি, যার দরুণ একজন মানুষের মধ্যেই ‘বাস’ করতে পারে একাধিক ব্যক্তিত্ব। ঠিক কোন পরিস্থিতিতে কোন ব্যক্তিত্বটি বেরিয়ে এসে ধরা দেবে অন্যদের সামনে— সে ব্যাপারে নিজেও জানেন না রোগী। এমনই অদ্ভুত একটি মানসিক রোগ নিয়েই সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে প্রথম কোনো পূর্ণ দৈর্ঘ্যের তথ্যচিত্র। ‘বিজি ইনসাইড’—এই ছবিই আগামী মঙ্গলবার প্রথমবারের জন্য সম্প্রচারিত হবে টেলিভিশনে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সান দিয়েগো শহরের থেরাপিস্ট এবং মনোবিদ কারেন মার্শাল এবং তাঁর কয়েকজন রোগীর ওপরেই নির্মিত হয়েছে ৫৩ মিনিটের এই তথ্যচিত্র। ২০১৫ সাল থেকেই শুরু হয়েছিল এই তথ্যচিত্র নির্মাণের কাজ। ২০১৯ সালেই কয়েকটি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হলেও আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশের কথা ছিল ২০২০ সালে। তবে করোনা মহামারীর কারণে থমকে যায় ছবিটির প্রকাশানুষ্ঠান। গত সপ্তাহে রাশিয়ায় প্রিমিয়ার করা হয় ছবিটি। এবার দেখার সুযোগ মিলবে মার্কিন নাগরিকদেরও।
আশ্চর্যের বিষয় হল, মার্শাল নিজে একজন ডিআইডি রোগী। তা সত্ত্বেও তিনি একজন সফল থেরাপিস্ট এবং মনোবিদ। বয়স তখন মাত্র ২০ বছর। ট্রেকিংয়ে গিয়ে প্রথমবারের জন্য তিনি বুঝতে পেরেছিলেন তাঁর ভিতরেই বসবাস করছে আরও একজন ব্যক্তি। যার কণ্ঠস্বর সম্পূর্ণ ভিন্ন। নিজের ভেতর থেকে বেরিয়ে এসে সে কথা বলে যাচ্ছে তাঁরই সঙ্গে।
প্রাথমিকভাবে বিষয়টি ভয় পেয়েই কাউকে জানাননি তিনি। তবে যতদিন যায়, ততই বাড়তে থাকে এই আগন্তুকের আনাগোনা। কখনও কখনও মার্শালের অজান্তেই তাঁর মধ্যে অবাধে বিচরণ করে তারা। তবে এই পরিস্থিতিকে বিন্দুমাত্র ভয় পাননি তিনি। পরবর্তীকালে এই বিষয় নিয়েই পড়াশোনা করেছেন। হয়েছেন একজন সফল থেরাপিস্ট। ২০০০ সাল থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের একটি ট্রমা-কেন্দ্রে লাইসেন্সপ্রাপ্ত চিকিৎসকের কাজ করছেন মার্শাল। গত ১৫ বছরে চল্লিশেরও বেশি রোগীর চিকিৎসা করেছেন তিনি।
আরও পড়ুন
শিল্পীর মানসিক স্বাস্থ্যেরই ইঙ্গিত দেয় ‘দ্য স্ক্রিম’, জানাচ্ছে সাম্প্রতিক গবেষণা
মার্শাল এবং তাঁর আরও তিন রোগীর দেখা মিললেও গোটা তথ্যচিত্র জুড়ে যে পঞ্চাশের অধিক চরিত্র রয়েছে— তা জানিয়েছেন চিকিৎসক। লুকোছাপা না রেখেই তিনি স্বীকার করেছেন শুধু তাঁর মধ্যে রয়েছে ১৭টি অল্টার বা ব্যক্তিত্ব। তাদের মধ্যে কেউ হিংস্র, কেউ নরম স্বভাবের আবার কেউ কেউ অত্যন্ত অবসাদগ্রস্ত। তবে থেরাপি এবং চিকিৎসার স্বার্থেই বাকি তিন রোগীর নাম প্রকাশ্যে আনেননি চিকিৎসক মার্শাল।
কিন্তু এই ডিআইডি’র কারণ কী? মার্শাল জানাচ্ছেন, কোনো শারীরিক, মানসিক কিংবা যৌন নির্যাতন অথবা চরমতম হিংসার সাক্ষী থাকলে শিশুদের মধ্যে তার পরিপার্শ্বের বিভিন্ন ব্যক্তিত্বের স্থায়ী প্রভাব পড়ে।
আরও পড়ুন
টিম ম্যানেজমেন্টের অবহেলা, মানসিক অত্যাচার; অবসর নিলেন পাক ক্রিকেটার মহম্মদ আমির
১৯৯৮ সালে মার্শাল তাঁর স্ত্রী ট্রেসি অ্যাল্ডারম্যানের সঙ্গে ‘অ্যামংগস্ট আওয়ারসেলভস’ নামের একটি বই প্রকাশ করেন। সহ-লেখক ছিলেন আরও এক ডিআইডি বিশেষজ্ঞ। সেই বই-ই নজরে এসেছিল রাশিয়ান চলচ্চিত্র নির্মাতা ওলগা লভফের। তারপর তিনিই যোগাযোগ করেন মার্শালের সঙ্গে। উদ্যোগ নেন এই তথ্যচিত্র নির্মাণের।
ডিআইডি নিয়ে আজও বিতর্কের জায়গা রয়েছে। এই মানসিক রোগে আক্রান্তদের এখনও স্বাভাবিক চোখে দেখতে অভ্যস্থ নয় সাধারণ মানুষ। আর সেই কারণেই টেলিভিশনে বিনামূল্যে ব্রডকাস্টের উদ্যোগ নিয়েছেন তথ্যচিত্রের নির্মাতা। আর এই সিনেমার মধ্যে দিয়েই সেই বেড়াজাল ভেঙে যাবে, সে ব্যাপারে যথেষ্টই আশাবাদী মার্শাল…
আরও পড়ুন
একইসঙ্গে অফিস ও সংসার – মানসিক চাপে বিপর্যস্ত কর্মরত মহিলারা
Powered by Froala Editor