লকডাউনের শুরু থেকেই বাতাস অত্যন্ত নির্মল। পৃথিবীর সমস্ত দেশের মানুষেরই এমন অভিজ্ঞতা হয়েছে। কমেছে দূষণের পরিমাণ। কিন্তু ঠিক কতটা কমল বাতাসে কার্বনের অনুপাত? সম্প্রতি সেই হিসাব সামনে আনলেন পৃথিবীর নানা প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা পরিবেশবিজ্ঞানীদের একটি দল। ‘আর্থ সিসটেম সায়েন্স ডেটা’ পত্রিকায় প্রকাশিত সেই রিপোর্টে বলা হয়েছে গত বছর, অর্থাৎ ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২০ সালে বাতাসে কার্বনের পরিমাণ কমেছে প্রায় ৭ শতাংশ।
পৃথিবীর প্রায় সমস্ত দেশের কলকারখানা, যানবাহন এবং অন্যান্য কাজের হিসাবের ভিত্তিতে তৈরি এই রিপোর্ট বলছে, ২০১৯ সালে সব মিলিয়ে বায়ুমণ্ডলে মিশেছিল ৩৬.৪ বিলিয়ন টন কার্বন। আর ২০২০ সালে সেই পরিমাণটা এসেছে ৩৪ বিলিয়ন টনে। অর্থাৎ প্রায় ৭ শতাংশ কম কার্বন মিশেছে এবছর। পাশাপাশি, রিপোর্টে জানানো হয়েছে, সম্ভবত গত ৫০ বছরে এই প্রথম বাতাসে কার্বনের পরিমাণ কমেছে। আর তার জন্য অন্যতম ভূমিকা পালন করেছে লকডাউন। যদিও পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৮ সালের তুলনায় ২০১৯ সালে কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ বেড়েছে মাত্র ০.১ শতাংশ। যেটা বছর ২০ আগে প্রতি বছর ৩ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেত। এখন ২০১৯ সালের কার্বন নিঃসরণের পরিমাণকেই সর্বোচ্চ মাপকাঠি হিসাবে ধরে রাখা যায় কিনা, সেটাই দেখতে চাইছেন বিজ্ঞানীরা।
গবেষণাদলের অন্যতম সদস্য ইস্ট অ্যাঞ্জিলা ইউনিভার্সিটির গবেষক কোরিন লেকুরি মনে করছেন, লকডাউন কখনও পরিবেশ রক্ষায় প্রধান নিয়ামক হয়ে উঠতে পারে না। ফলে তাঁর আশঙ্কা, করোনা পরিস্থিতি পেরিয়ে গেলেই আবারও পাল্লা দিয়ে বাড়বে দূষণের পরিমাণ। অন্যদিকে স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির গবেষক ক্রিস ফিল্ডের মতে, লকডাউন মানুষের অভ্যাসেও বেশকিছু পরিবর্তন এনেছে। মানুষ বিকল্প যোগাযোগ ব্যবস্থার উপর অনেক বেশি নির্ভরশীল হয়ে উঠেছে। ফলে করোনা পরবর্তী সময়েও তার প্রভাব থেকে যাবে। পাশাপাশি রিপোর্ট থেকে এটাও স্পষ্ট যে, মূলত পরিবহণ ব্যবস্থা বন্ধ থাকার কারণেই দূষণ কমেছে। কলকারখানা থেকে নির্গত কার্বনের পরিমাণ প্রথমে কিছুটা হ্রাস পেলেও আবার পাল্লা দিয়ে বেড়েছে শেষ কয়েক মাসে। পরিবেশকে বাঁচাতে গেলে সেই মাত্রাটা কমিয়ে আনার কথাও ভাবতে হবে, মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।
Powered by Froala Editor