মহা সমারোহে চলছে গঙ্গাসাগর মেলা। যাত্রীদের ভিড় নিয়ন্ত্রণ করতে পুলিশের পাশাপাশি ঘুরে বেড়াচ্ছেন সিভিল ডিফেন্স কর্মীরাও। সেখানেই দেখা গেল একটি মেয়েকে। হাতে লাঠি, পরনে সিভিল পুলিশের ড্রেস, আর লাইফ জ্যাকেট। অথচ মাত্র কয়েক মাস আগেও ছবিটা অন্যরকম ছিল। মেয়েটির গায়ে ছিল জাতীয় দলের জার্সি। বিশ্বকাপে ভারতকে প্রতিনিধিত্বও করেন, জিতেও দেশে ফেরেন। কিন্তু খেলাটির নাম যে কবাডি, তার ওপর মহিলাদের বিশ্বকাপ। কাজেই, দক্ষিণ ২৪ পরগণার বছর আঠাশের বিশ্বকাপজয়ী মেয়ে সঙ্গীতা মণ্ডল আপাতত জীবনযুদ্ধে লড়ছেন; গঙ্গাসাগরের ভিড়ে।
ছোট থেকেই কবাডির সঙ্গে ভাব সঙ্গীতার। হবে নাই বা কেন! গ্রাম বাংলায় আজও দাপিয়ে খেলা হয় এই খেলা। বলা ভালো, বাংলা এবং অবশ্যই ভারতের নিজস্ব খেলা এটি। সেই ছোটো জায়গা থেকেই একসময় দেশের জার্সি গায়ে দেওয়া। সাত বার জাতীয় প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছেন। শুধু জাতীয় নয়, আন্তর্জাতিক স্তরেও প্রতিনিধিত্ব করেছেন ভারতের হয়ে। তারপর ২০১৯ সালে মালয়েশিয়ায় মেয়েদের কবাডি বিশ্বকাপে তাইওয়ানকে হারিয়ে কাপ জেতেন।
জীবনটা বোধহয় বদলে যাবে এবার, এমনটাই ভেবেছিলেন সঙ্গীতা। একপ্রকার নিঃশব্দেই বাড়ি ফিরেছিলেন এই বিশ্বকাপার, কোথাও কোনো হইচই হয়নি। তাও ভেবেছিলেন, একটা চাকরি হয়ে যাবে। কিন্তু, বিধি বাম। খেলাটা যে ক্রিকেট নয়! যতই হোক বাংলা-ভারতের ঐতিহ্য, লো-প্রোফাইল খেলায় তো জাঁকজমক নেই। এদিকে ঘরে অভাব, শাড়িতে পাড় বসিয়ে ও ঠোঙা বানিয়ে কোনোমতে সংসার চলে। বাবা মারা গেছেন কোন ছোটোবেলায়। সেসব বাদে মেদিনীপুরে কবাডির খেপ খেলে সামান্য রোজগার। তাই পেট বাঁচাতে গঙ্গাসাগর মেলায় সিভিল ডিফেন্স কর্মী হিসেবেই নেমেছেন বিশ্বকাপার সঙ্গীতা। পরনের জার্সির জায়গায় এসেছে সিভিল কর্মীর পোশাক।
নিজের কথা বলতে গিয়ে অজান্তেই গলা ধরে আসে। কয়েক দিন পর দিল্লিতে সংবর্ধনা দেওয়া হবে সঙ্গীতাদের। কিন্তু রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে কোনো যোগাযোগই করা হয়নি। আবেদন করা সত্ত্বেও, হয়নি চাকরি। এই মুহূর্তে বাংলার মহিলা কবাডি দল অন্ধ্রপ্রদেশে। সঙ্গীতা যাননি। তাহলে টাকা রোজগার হবে কেমন করে! গঙ্গাসাগরের ভিড় সামলে এই জিজ্ঞাস্যগুলোই আমাদের সবার কাছে রেখে গেলেন সঙ্গীতা মণ্ডল।