২০১৮-এর ডিসেম্বরের শেষের দিক। বছর শেষের অপেক্ষায় রয়েছে শহর কলকাতা। এমন সময় শোনা গেল ‘বোমাতঙ্ক’। কলকাতা বন্দরের নেতাজি সুভাষ ডকের দুই নম্বর বার্থে ড্রেজিং করার সময় উদ্ধার করা হয় প্রায় ৪৫০ কেজির এই বোমা। না, কোনও উগ্রপন্থি বাহিনি রেখে যায়নি। কারণ, বোমাটি অত্যন্ত ‘বৃদ্ধ’; এবং ঐতিহাসিকও বটে! পরীক্ষা করে জানা গিয়েছিল, এই ধরণের বোমা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্যবহার করা হত। ২০১৮-তে দাঁড়িয়ে কলকাতা আবারও উস্কে নিয়েছিল সেই ভয়াবহ মুহূর্তের স্মৃতি।
শুধু কি কলকাতা? স্মৃতি উস্কে নেওয়ার কথা কলকাতা বন্দরেরও। ১৯১৮ সালে লর্ড আরউইন ১৫০ বছর পুরনো এই বন্দরের সঙ্গে জড়িয়ে আছে কত স্মৃতি, কত অঘটন। তাদের মধ্যে অবশ্যই আসবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। বোমা পাওয়া গিয়েছিল যে জায়গা থেকে, সেই নেতাজি সুভাষ ডকই যুদ্ধের সময় ছিল আমেরিকান সৈন্যদের দখলে। কাজেই উদ্ধার হওয়া বোমা যে মার্কিনি, তা সহজেই গবেষণায় বেরিয়ে আসে। সম্ভবত যুদ্ধ শেষ হয়ে যাওয়ার পর এখানেই বোমাটি রেখে চলে যায় আমেরিকান সৈন্যরা।
শুধু কি আমেরিকা? সেই সময়ের ব্রিটিশদের পাশাপাশি জড়িয়ে রয়েছে জাপানিরাও। কলকাতা সরাসরি যুদ্ধক্ষেত্র না হলেও, পূর্ব প্রান্তের যুদ্ধক্ষেত্রগুলির সঙ্গে যোগাযোগের অন্যতম রাস্তা ছিল। তাই জাপানি সেনাদের অন্যতম লক্ষ্য ছিল এই শহর। আর তারপর? ‘সা রে গা মা পা ধা নি/ বোম ফেলেছে জাপানি’। কলকাতার বুকে ধেয়ে এল জাপানি আক্রমণ। ১৯৪২-৪৩ সালে শহরের বেশ কিছু জায়গায় বোমা পড়ে। আকাশপথে হামলা চালায় জাপানি বিমান। লক্ষ্য ছিল চিনের সঙ্গে যাবতীয় যোগাযোগ ব্যবস্থাকে ভেঙে ফেলা। কিন্তু, ততটা করতে পারেনি। শহরকে বাঁচানোর জন্য বড় বড় হিলিয়াম বেলুনেরও ব্যবস্থা করেছিল ব্রিটিশ প্রশাসন। তবে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল বিস্তর।
হাতিবাগান, সেন্ট জনস চার্চের মতো জায়গা ছাড়াও বোমা পড়ে কলকাতা বন্দরেও। ১৯৪৩ সালের ৫ ডিসেম্বর ছিল সেই দিন। রাতের বদলে এই ক্ষেত্রে দিনে হামলা চালিয়েছিল জাপানের বোমারু বিমান। ৪২ জন মারা গিয়েছিলেন এই আক্রমণে। সাময়িক বিধ্বস্তও হয়েছিল বন্দর। কিন্তু যোগাযোগ ব্যবস্থায় কোনোরকম চিড় ধরেনি।