লকডাউন এবং কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে গোটা বিশ্বে হয়ত অনেক বদল হয়েছে। সবাই ঘরবন্দি হয়ে আছি, না থাকলেও চট করে আগের মতো কারোর বাড়ি যেতে পারছি না। অনেক নিয়ম, অনেক নিষেধাজ্ঞা মেনে চলতে হচ্ছে। কিন্তু দূরত্ব আমাদের যোগাযোগের পক্ষে বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। সঙ্গে ছিল ডিজিটাল মাধ্যম; ছিল ভিডিও কল। অফিসের মিটিং, অনলাইন ক্লাস হোক, বা বন্ধুদের সঙ্গে নির্ভেজাল আড্ডা— সবেতেই সহায় ছিল এই ভিডিও কল। কিন্তু কবে থেকে এমন বিপ্লব শুরু হয়েছিল? কী ছিল সেই কাহিনি? চলুন যাওয়া যাক ইতিহাসের এক মজাদার দুনিয়ায়…
সাল ১৯৭০, ১ জুলাই। আজ থেকে ঠিক ৫০ বছর আগের কথা। দু’দুটো বিশ্বযুদ্ধ দেখে নিয়েছে সভ্যতা। মানুষ চাঁদেও পা রেখে ফেলেছে তখন। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির এত ব্যাপক বিস্ফোরণ না হলেও, শুরুটা টের পাওয়া যাচ্ছিল তখন। এই গল্প সেই সময়ের। নায়কের আসনে বসে আছেন দুজন; পিটসবার্গের মেয়র পিটার ফ্ল্যাহার্টি এবং অ্যালকোয়া কোম্পানির সিইও জন হারপার। সঙ্গে ছিল আরও একটি জিনিস, প্রকৃতপক্ষে যার মাধ্যমেই তৈরি হয়েছিল ইতিহাস। দেখতে বেশ ছোটখাটো একটি টিভি; কিন্তু আদতে তা নয়। শুধু ভিডিও কল করার জন্যই বানানো হয়েছিল যন্ত্রটিকে। নাম ‘পিকচারফোন মোড টু’। বিশ্বের প্রথম ভিডিও কলিং মেশিন!
তবে আজকের ফোনের সঙ্গে গুলিয়ে ফেললে একদম ঠিক হবে না। এই যন্ত্রের মাধ্যমে আর কিছু করা যেত না। সামনে থাকত ৫.৫ ইঞ্চির একটি সাদা-কালো সিআরটি ডিসপ্লে; সঙ্গে থাকত একটি ক্যামেরা আর স্পিকার। ১৯৭০-এর হিসেবে এই ফিচার অত্যন্ত মূল্যবান ও আধুনিক ছিল। সবথেকে বড়ো কথা, একদম নতুন কাজ করা যাবে এখানে। ঠিক সেই জিনিসটিরই পরীক্ষা করা হল ’৭০-এর ১ জুলাইতে। একদিকে মেয়র পিটার ফ্ল্যাহার্টি, অন্যদিকে অ্যালকোয়া কোম্পানির সিইও। শুরু হল ভিডিও কলিং। পৃথিবীর ইতিহাসের প্রথম কমার্শিয়াল ভিডিও কল! ঠিক ৫০ বছর আগে যে বিপ্লব শুরু হয়েছিল, তারই বিবর্তিত রূপ আজ দেখছি আমরা। সাক্ষীও থাকছি সেসবের।
তবে যেরকম হইচই ফেলে শুরু হয়েছিল পিকচারফোন মোড টু-এর, সেই উন্মাদনা কমে আসে কয়েক বছর পরেই। না প্রযুক্তির কারণে নয়, দামের জন্য। সেই সময় দাঁড়িয়ে এই প্রযুক্তি যথেষ্ট উন্নত ছিল। কাজেই দামও ছিল সেইরকম। প্রথমত মাত্র ৩০ মিনিট সময় মিলত ভিডিও কল করার জন্য। দ্বিতীয়ত এর জন্য মাসে চার্জ করা হত ১৬০ ডলার করে; যা আজকের হিসেবে প্রায় হাজারখানেক ডলার। ভারতীয় টাকার হিসেবে এই অঙ্ক আরও বেড়ে যাবে। কাজেই উৎসাহও পড়ে আসে। তৃতীয়ত, ক্যামেরা কোয়ালিটি অত ভালো ছিল না। ইতিমধ্যেই আরও অনেক টেকনোলজি চলে আসে বাজারে। কিন্তু শুরুটা তো করে দিয়ে গিয়েছিল এই ভিডিও যন্ত্রটিই।
আরও পড়ুন
১৫০ বছর আগে কাগজ তৈরি দিয়ে শুরু, দিনে দিনে মোবাইলে বিশ্বজয় নোকিয়া-র
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
ধ্বংস হচ্ছে পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্র, সংকটে মানব সভ্যতা; চিন্তায় বিজ্ঞানীরা