একটা সময় মানুষের হাস্যরসের অন্যতম উপাদান ছিল কমিক্স কিংবা কার্টুন। সেই রীতিই সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বদলেছে ক্রমশ। জন্ম নিয়েছে ‘মিম কালচার’। বিগত কয়েক বছর ধরে ইন্টারনেট মাধ্যমে যার প্রভাব ও প্রসার বেড়ে চলেছে অপ্রতিরোধ্য গতিতে। আর লকডাউন ও ভাইরাসের সংক্রমণ তার জনপ্রিয়তা বাড়িয়ে দিয়েছে বহুগুণ। শুধু খোরাক বা নিছক হাস্যরস নয়; সাম্প্রতিক ঘটনা, সংবাদও ব্যঙ্গাত্মকভাবে ফুটিয়ে তুলছে মিম। যা শিল্পের থেকে কম কিছু নয়। এবার এই জনপ্রিয় মাধ্যমকে নিয়েই খুলে গেল আস্ত এক প্রদর্শনশালা। গোটা বিশ্বে এহেন ঘটনা এই প্রথম।
অকুস্থল হংকং শহর। সেখানে কে১১ আর্ট মলের বিশাল কমপ্লেক্সজুড়ে বসেছে এই মিমের আসর। মল কর্তৃপক্ষ এবং জনপ্রিয় ইন্টারনেট প্ল্যাটফর্ম ‘৯গ্যাগ’ যৌথ উদ্যোগে গত এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সময়েই পথচলা শুরু হয় এই মিউজিয়ামের। যা শুধু প্রদর্শনশালাই নয়, বরং একুশ শতকের এই ‘মিম কালচার’-এর সংরক্ষণাগারও বটে। আঞ্চলিক এবং বৈশ্বিক— সব ধরনের জনপ্রিয় মিমই প্রদর্শিত হচ্ছে হংকং-এর ‘মিম মিউজিয়াম’-এ।
তবে শুধু ক্যানভাসের ওপরে ডিজিটাল প্রিন্টিং নয়, ত্রিমাত্রিক মূর্তি, ভিডিও এমনকি বিভিন্ন সুগন্ধীর মাধ্যমে এক অভিনব পরিবেশ তৈরি করেছে হংকং-এর এই মিউজিয়াম। এ যেন এক সব পাই-এর দুনিয়া। সব মিলিয়ে এই মিউজিয়ামে জায়গা পেয়েছে বিশ্বের ১০০টির বেশি জনপ্রিয় মিম টেমপ্লেট। এমনকি মিউজিয়ামের মধ্যে রয়েছে আস্ত ট্যাটু পার্লারও। তবে শুধুমাত্র মিম-এর ট্যাটুই করা হচ্ছে সেখানে। সাধারণ মানুষকে ইন্টারনেট সংস্কৃতির প্রভাব থেকে সরিয়ে এনে ভিন্ন অভিজ্ঞতা দেওয়াই আসল লক্ষ্য এই উদ্যোগের।
তবে জুলাইতে এই মিউজিয়াম চালু হলেও, সম্প্রতি হঠাৎ করেই ভাইরাল হয়েছে তার অস্তিত্ব। নেপথ্যে, পাকিস্তান দলের সমর্থক সারিম আখতার। ২০১৯-এর বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার কাছে পাকিস্তানের বড়ো ব্যবধানে হারের পরই ভাইরাল হয়েছিলেন তিনি। লাল চেক শার্ট ও পাফার জ্যাকেট পরিহিত, কোমরে হাত রেখে হতাশ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা সারিমের ছবি আগুনের মতো ছড়িয়ে পড়েছিল ইন্টারনেটে। আর তা প্রায় লুফে নিয়েছিলেন মিম-স্রষ্টারা।
আরও পড়ুন
শামুকের ভিতর হাতজোড় সৈন্য, ব্রিটেনে আবিষ্কৃত ‘মধ্যযুগীয় মিম’-মূর্তি
হংকং-এর মিউজিয়ামে জায়গা পেয়েছেন তিনিও। বিষয়টি সম্প্রতি নজরে আসে সারিমের বোনের। তিনি তো বটেই, পরবর্তীতে সারিম নিজেও সেই সুসংবাদ ভাগ করে নেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। জানান, বিশ্বের প্রথম মিম মিউজিয়ামে পাকিস্তানের প্রতিনিধিত্ব করতে পেরে গর্বিত তিনি। এক কথায় বলতে গেলে তাঁর সুবাদেই, মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই গোটা দক্ষিণ এশিয়ায় একচেটিয়া আলোচনায় উঠে আসে হংকং-এর ‘মিম মিউজিয়াম’।
আরও পড়ুন
মিম-সংস্কৃতির হাত ধরে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠছে বাংলা সাহিত্যও?
তবে সাম্প্রতিক সময়ে, মিমের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে বিতর্কও। কোথাও কোথাও নিছক আনন্দ কিংবা মজার পাশাপাশি মিম হয়ে উঠেছে ব্যক্তিগত আক্রমণের মাধ্যমও। কখনও আবার মিমের মজার আড়ালে লুকিয়ে পড়েছে, কোনো ছবি বা ঘটনার আসল প্রেক্ষাপট। সেই হারিয়ে যাওয়া গল্পদেরই শুলুকসন্ধান দিচ্ছে মিম মিউজিয়াম। সেখানে দাঁড়িয়ে হংকং-এর এই উদ্যোগ শুধু অভিনবই নয়, বরং প্রশংসনীয়ও বটে…
আরও পড়ুন
কমিক্সের বই থেকে সোশ্যাল মিডিয়া; নতুন প্রজন্মের হাত ধরে মিমের জগতেও উজ্জ্বল টিনটিন
Powered by Froala Editor