স্প্রিন্টার নয়, ক্রিকেটার হতে চেয়েছিলেন উসেইন বোল্ট

চলছে ভারত বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিকেট ম্যাচ। টসে জিতে ব্যাট করতে নেমেছে ভারতীয় দল। উলটো দিকে আগুনে গতিতে প্রথম ওভার করার জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন উসেইন বোল্ট। হ্যাঁ, ঠিকই পড়েছেন, উসেইন বোল্ট! নিছক কল্পনা নয়, এমনটা হতে পারত বাস্তবেও। ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন নিয়েই পথচলা শুরু হয়েছিল তাঁর।

ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জের জামাইকার একটি ছোট্ট শহরে ১৯৮৬ সালে জন্ম বোল্টের। ছোটোবেলা থেকেই অত্যন্ত চঞ্চল প্রকৃতির। সমস্ত কাজই দ্রুততার সঙ্গে করে ফেলা অভ্যাস। সারাদিন মেতে থাকতেন ফুটবল-ক্রিকেট নিয়ে। মা জেনিফারের মতে নির্ধারিত সময়ের কিছুক্ষণ পরে জন্ম নেয় বোল্ট। ওই একবারই নাকি সামান্য দেরি হয়ে গেছিল বোল্টের। 

ক্রিকেটের আঁতুরঘর ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জ। গ্যারি সোবার্স, ভিভিয়ান রিচার্ডস, ব্র্যায়ান লারা, কোর্টনি ওয়ালশ থেকে শুরু করে হালের ক্রিস গেইল—কিংবদন্তি ক্রিকেটারের অভাব নেই ওয়েস্ট ইন্ডিজে। ক্যালিপ্সোর রঙিন ছন্দে তাঁরা ফুল ফোটাতেন ক্রিকেট মাঠে। বোল্টেরও প্রথম ভালোবাসা হয়ে উঠল ক্রিকেট। নয়ের দশকের শেষে পাকিস্তান দলের দ্রুতগতির বোলারদের দেখে ঠিক করলেন ফাস্ট বোলার হবেন। ওয়াকার ইউনিস ছিলেন তাঁর প্রিয়তম ক্রিকেটার। ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে আগুনের গতিতে উইকেট ছিটকে দেওয়ার স্বপ্নে তখন বিভোর বোল্ট।

বাধ সাধলেন বাবা ওয়েলেসলি বোল্ট। পেশায় মুদি দোকানদার। নিজে অন্ধ ক্রিকেটভক্ত। কিন্তু বুঝেছিলেন জামাইকার ক্রিকেট পরিকাঠামোয় জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়া মুশকিল। প্রতিভাবান খেলোয়াড়দের দীর্ঘ লাইন সেখানে। ছেলের প্রতিভা সম্বন্ধে সম্যক ধারণা ছিল তাঁর। স্কুলের ক্রিকেট কোচও বোল্টকে উৎসাহিত করলেন স্প্রিন্টার হওয়ার জন্য। একদিন খেলার ছলে ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে ১০০ মিটার স্প্রিন্টে বাজিমাত করে বোল্ট নজরে পড়ে গেলেন প্রাক্তন দৌড়বিদ পাবলো ম্যাকনিল ও কোচ ডোয়েন ব্যারেটের।

আরও পড়ুন
গয়না চুরির অভিযোগ অধিনায়কের বিরুদ্ধে! বিশ্বকাপ খেলার আগেই আটক ববি মুর

বাকিটা তো ইতিহাস। ২০০১ সালে জামাইকার হয়ে ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জের দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েই জিতে নেন রুপো। বয়স মাত্র ১৫ হলেও উচ্চতায় তখনই প্রায় ছয় ফুট। তারপর শুধুই রেকর্ডের ছড়াছড়ি। ১০০ মিটার, ২০০ মিটার, ৪০০ মিটারের রিলে রেসে করেছেন বিশ্বরেকর্ড। জিতেছেন আটটি অলিম্পিক স্বর্ণপদক। ২০০৯ বিশ্ব অ্যাথলেটিক চ্যাম্পিয়নশিপে ১০০ মিটার মাত্র ৯.৫৮ সেকেন্ডে দৌড়ে হয়ে ওঠেন ‘বিশ্বের দ্রুততম মানুষ’।

আরও পড়ুন
ব্র্যাডম্যানের খেলা দেখতে চেয়ে কারাগারে মহাত্মা গান্ধীর ছেলে!

তবে ক্রিকেটের প্রতি ভালোবাসা কোনোদিন কমেনি। নিয়মিত ক্রিকেট দেখেন, সুযোগ পেলে ব্যাট-বল হাতে নেমে পড়েন মাঠে। অবসরের পর অস্ট্রেলিয়ার টি-টোয়েন্টি লিগ ‘বিগ-ব্যাশ’-এর মেলবোর্ন স্টার্সের হয়ে পেশাদারি ক্রিকেট খেলার বিষয়ে রীতিমত আলোচনা শুরু করে দেন। ক্রিস গেইল বা ম্যাথু হেডেনের আক্রমণাত্মক ক্রিকেটের ভক্ত। ভারতীয়দের মধ্যে সচিন তেন্ডুলকর ও মহেন্দ্র সিং ধোনির ক্রিকেট দর্শনকে শ্রদ্ধা করেন। আর ওয়াকার তো রইলেনই।

শুধু ক্রিকেট নয়। বোল্টকে দেখা গেছে ফুটবল মাঠেও। ইংল্যান্ডের ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ও জার্মানির বরুসিয়া ডর্টমুন্ডের হয়ে একাধিক প্রীতি ম্যাচে অংশগ্রহণ করেছেন। প্রায়ই নেমে পড়েন চ্যারিটি ম্যাচে। জার্সির পিছনে লেখা ‘বোল্ট’। তার নিচে ৯.৫৮। যে সংখ্যার জন্য তিনি হয়ে উঠেছেন ‘বিশ্বের দ্রুততম মানুষ’।

Powered by Froala Editor