যত দিন যাচ্ছে, আমাদের চারিপাশে গজিয়ে উঠছে কংক্রিটের জঙ্গল। সবুজের পরিমাণ কমতে কমতে একেবারে হারিয়েই যাচ্ছে। লকডাউনের মাঝে প্রকৃতি আবার নিজেকে ফিরে পাচ্ছে; কিন্তু তারপর? এই আশঙ্কার মধ্যেই নতুন রিপোর্ট আনতে চলেছে রাষ্ট্রপুঞ্জের ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচার অর্গানাইজেশন। সেই রিপোর্ট অনুযায়ী, বিগত ২০ বছরে যত জঙ্গল হারিয়ে গেছে পৃথিবী থেকে, তার আয়তন লিবিয়ার মতো একটা দেশের সমান!
গোটা পৃথিবী জুড়েই প্রতিনিয়ত পরিবেশ সংক্রান্ত সমীক্ষা করা হয় বিভিন্ন সংস্থা থেকে। রাষ্ট্রপুঞ্জও এর ব্যাতিক্রম নয়। বিশেষ করে জঙ্গলের অবস্থা কীরকম, সেটা নিয়েই বিশেষ রিপোর্ট বের করা হয়। নাম ‘গ্লোবাল ফরেস্ট রিসোর্স অ্যাসেসমেন্ট’ বা জিএফআরএ। গোটা বিশ্বের ২৬৩টি দেশের থেকে নানা তথ্য সংগ্রহ করে প্রতি পাঁচ বছর অন্তর এই রিপোর্ট পেশ করা হয়। সেই রিপোর্টেই এমন ভয়াবহ দিক উঠে এল আমাদের সামনে।
জিএফআরএ অনুযায়ী, গত ২০ বছরে ৪৩৯ মিলিয়ন একরের মতো জঙ্গল সম্পূর্ণ হারিয়ে গেছে! কোনো বিশেষ দেশে নয়, গোটা পৃথিবী জুড়েই এমন ভয়াবহ অবস্থা। যা কিনা লিবিয়া দেশের আয়তনের সমান! ২০১০ থেকে ২০২০— এই দশ বছরে শুধুমাত্র আফ্রিকা থেকেই ৯.৬ মিলিয়ন একর আয়তনের জঙ্গল মুছে গিয়েছে। গাছের পর গাছ কেটে নেওয়া হয়েছে। সবথেকে বেশি ক্ষতি এখানেই হয়েছে। তার ওপর গত বছরের অ্যামাজন আর অস্ট্রেলিয়ার ঘটনা তো আছেই। আফ্রিকাতেও কঙ্গোতে বন পুড়েছে। ইন্দোনেশিয়া, মায়ানমার-সহ দক্ষিণ পশ্চিম এশিয়াও বেশ ক্ষতিগ্রস্ত। সব মিলিয়ে পৃথিবীর ফুসফুসে ক্ষত সৃষ্টি হচ্ছে ক্রমশ, এমনটাই বলছেন গবেষকরা।
তবে আশার খবরও আছে। ২০১০ থেকে ২০২০— এই দশ বছরে এশিয়াতে জঙ্গলের আয়তন বেড়েছে। অন্যত্রও এই প্রবণতা বাড়ছে। এমনকি, ১৯৯০ থেকে গাছ কাটার সংখ্যাও আগের থেকে কমছে। কিন্তু সেটা যথেষ্ট আশাব্যাঞ্জক নয়। কারণ অন্য দিক থেকে পরিবেশের ক্ষতি হয়েই চলেছে। তবে এই আশাটুকু ধরেই বেঁচে থাকা আমাদের। নিজেরা যাতে আরও চেষ্টা করি, পরিবেশ বাঁচাতে এগিয়ে আসি; সেটাই একমাত্র লক্ষ্য।