ছোট বটতলা, গড়িয়া। ঘামতে ঘামতে সন্ধ্যা ৭টা। কিন্তু পৌঁছতেই হবে। ভূমিকম্প হয়ে যাক, সুনামি আসুক, কিন্তু এখানে একটিবার না গেলে সারাজীবন মাটি। ভারতের সবচেয়ে বড় রোল খাওয়ার সুযোগটা মিস করে যাবেন। বটতলা, গড়িয়ার ৪৫ বাস-স্ট্যান্ডের উল্টোদিকে রয়েছে শেফ আলাদিন! এখানেই পাওয়া যায় স্পেশাল রোল! এই রোল যে ব্যক্তি একা খেতে পারবে, তাকে হয়তো বিশেষ কোনো পুরস্কার দেওয়া উচিৎ…
কলকাতা রোলের জন্য বিখ্যাত। এটা কে না জানে। সূর্য পূর্বদিকের ওঠার মতোই এও এক ধ্রুব ব্যাপার। খাদ্যারসিকরা পার্ক স্ট্রিটের কাটি রোল, বা নিজামের বিফ রোলের সঙ্গে পরিচিত। কিন্তু ২৬ ইঞ্চির রোল দেখলে তাঁদের চক্ষু চড়কগাছ হতে বাধ্য। আজ্ঞে হ্যাঁ। রোলের সাইজ ২৩-২৬ ইঞ্চি! আলাদিনের বিখ্যাত এই রোলের জন্য করোনার ভয়কে উপেক্ষা করেই হাজির যুবক যুবতীর দল। অর্ডার আসছে ঘনঘন। কর্মচারীদের বিশ্রামের বালাই নেই! গরম তাওয়ায় সেঁকা চলছে বিশাল পরোটা। তার ব্যাস সহজেই অনুমেয়। এরপর এই রোলে পড়বে ডিম। ডিম-পরোটা হয়ে ড্রেসিং হতে চলে যাবে অন্য কাউন্টারে। এখানে ঠাসা হবে মুরগি-পাঁঠা-পনির সহ হরেক জিনিস। ফিনিশিং টাচ দিয়ে তারপর সেই সেই পরোটাকে মোড়া হবে এলুমিনিয়াম ফয়েলে। তারপর সোজা রংচং-এ কাপড়ের ব্যাগে খদ্দেরর হাতে হাতে। আলাদিন কর্তৃপক্ষের দাবি, তাঁদের রোল এখনো পর্যন্ত বৃহত্তম। তবে তাঁরা রোলকে চারটি টুকরো করেও পরিবেশন করেন। দাম ৩৪৯ টাকা!
কিন্তু গড়িয়ার এই ‘অজগর রোল’ শুরু হয়েছিল ন-বছর আগে। ২০১২ থেকে। অজগর? হ্যাঁ, এই নামেই ডাকা হত এই রোলকে পরে অবশ্য নাম বদলে ‘স্পেশাল রোল' হয়েছে। কিন্তু এতবড় রোল? কেন?
আরও পড়ুন
মুক্তিযুদ্ধের সমর্থনে কলকাতার সঙ্গীতশিল্পীরা, প্রকাশ পেল একের পর এক রেকর্ড
“মূলত মেসের বাসিন্দাদের কথা ভেবেই এই রোলের আইডিয়া!” বলছিলেন, আলাদিনের ‘কো-ওনার' রাজদীপ সাহা। সত্যিই তো! এতক্ষণ মাথায় আসেনি কেন? গড়িয়া-বিজয়গড়-বিক্রমগড় জুড়ে কলেজ পড়ুয়াদের মেসবাড়ি। ফাস্টফুডের খদ্দের অনেকেই। কিন্তু, জন্মদিন ইত্যাদিতে খরচ খরচা বেড়েই যায়। মেসে ফিস্টিটাও ঠিক জমে ওঠে না। কেকের দাম যে অনেকটাই। পেটও ভরে না তাতে।
“আমরা ভাবলাম, যদি সবার জন্য বার্থডে কেক হতে পারে, হোয়াই নট বার্থডে রোল? দেখুন খরচ কিন্তু কেকের থেকে কম, অথচ সাধারণ এক চিকেন রোলের থেকে ভারী। একটি টুকরো দিয়েই ডিনার সারতে পারবেন... ”
আরও পড়ুন
অন্ত্যেষ্টি থেকে পারলৌকিক ক্রিয়া— মৃত্যুর পরে ‘ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট’ কলকাতার বুকেই
বিগত কয়েকদিন ধরে করোনার বাড়বৃদ্ধির কারণে বন্ধ শেফ আলাদিন রেস্তোরাঁ। নয়তো শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে বসে নির্বিঘ্নে রোল ভক্ষণ করতে পারতেন। কুছ পরোয়া নেই। প্রকৃত খাদ্যারসিকরা এসব মানেন না। সুতরাং একটা অটো ধরে পৌঁছে যেতে পারেন আলাদিনে।
বাকিটা আপনার নোলার উপরেই ছেড়ে দেওয়া যাক!
আরও পড়ুন
কলকাতার বুকে, মাত্র দশ টাকার কবরেই শুয়ে আওয়াধের এই নবাব
ছবি সৌজন্যে : রাজদীপ দত্ত, শেফ আলাদিন
Powered by Froala Editor