Powered by Froala Editor
পশ্চিমবঙ্গেই রয়েছে ইউনেস্কোর একাধিক ‘হেরিটেজ সাইট’, সম্ভাব্যের তালিকাও দীর্ঘ
১/৭
প্রাচীনকাল থেকেই দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় সংস্কৃতি ও শিল্পচর্চার অন্যতম পীঠস্থান ছিল ভারতবর্ষ। তার পিছনে কারণ হিসাবে যেমন রয়েছে ভারতের বৈচিত্র্যময় ভূপ্রাকৃতিক পরিবেশ, তেমনই রয়েছে একাধিক সংস্কৃতির সহাবস্থানও। ভারতের এই ঐতিহ্যকেই স্বীকৃতি জানিয়ে সবমিলিয়ে ৪০টি অঞ্চলকে ‘হেরিটেজ সাইট’-এর (World Heritage Sites) আখ্যা দিয়েছে ইউনেস্কো (UNESCO)। তার মধ্যে রয়েছে বাংলারও (West Bengal) দুটি অঞ্চল। তাছাড়াও সম্ভাব্যের তালিকেও রয়েছে পশ্চিমবঙ্গের একাধিক স্থানের নাম। দেখে নেওয়া যাক সেই তালিকা…
২/৭
সুন্দরবন ন্যাশনাল পার্ক— শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, অখণ্ড বাংলার সবথেকে বৈচিত্র্যময় বায়োস্ফিয়ার দক্ষিণবঙ্গের ব-দ্বীপ অঞ্চল তথা সুন্দরবন। গঙ্গা, পদ্মা, মেঘনার প্রবাহে সৃষ্ট এই ডেলটা বিশ্বের বৃহত্তম ব-দ্বীপ এবং বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ অরণ্যও বটে। প্রাকৃতিক এই বৈচিত্রকে সংরক্ষণ করতে ১৯৩৯ সালে সুন্দরবনকে ন্যাশনাল পার্ক হিসাবে ঘোষণা করে ব্রিটিশ সরকার। সংরক্ষণের কাজ চলেছে পরবর্তী আরও চার দশক ধরে। তবে শুধুমাত্র জীববৈচিত্রই নয়, সুন্দরবনের বাসিন্দাদের জনজীবন ও সংস্কৃতির কারণে ১৯৮৭ সালে ইউনেস্কো ‘ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট’-এর তকমা দেয় সুন্দরবনকে।
৩/৭
দার্জিলিং— গোটা বাংলা জুড়েই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিকতার ছাপ। তবে স্বাধীনতার পর কম-বেশি সব জায়গাতেই বদল এলেও, দার্জিলিং-এর গা থেকে মুছে যায়নি সাহেবি গন্ধ। ১৮৮০-র দশকের শুরুর সময় সেটা। পাহাড় কেটে রেলপথ স্থাপন করেছিল ব্রিটিশরা। শৈলশহর দার্জিলিং-কে জুড়ে দিয়েছিল সমতলের সঙ্গে। প্রায় দেড়শো বছর পেরিয়ে এসে আজও সেই ন্যারো গেজ রেলপথেই ছুটে যায় বাষ্পচালিত টয় ট্রেন। ১৯৯৯ সালে দার্জিলিং-এর এই ঐতিহ্যকে স্বীকৃতি জানায় ইউনেস্কো। মুকুটে বসে ‘ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট’-এর মুকুট।
৪/৭
বিষ্ণুপুর— মল্লরাজাদের শাসনকালীন সময় থেকেই বাংলার সংস্কৃতিচর্চার কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল বিষ্ণুপুর। টেরাকোটা থেকে শুরু করে বালুচরি শাড়ির জন্মও বাঁকুড়ার প্রাণকেন্দ্রে। বিষ্ণুপুরজুড়ে ছড়িয়ে থাকা অজস্র মন্দির, টেরাকোটার কাজ আজও বিস্ময় জাগায় যে-কারোর মনে। বিগত কয়েক বছরে বিষ্ণুপুরকে ‘হেরিটেজ সাইট’ হিসাবে ঘোষণা করার দাবি উঠেছে একাধিকবার। এমনকি অঞ্চলটি পরিদর্শনে বিশেষজ্ঞের বিশেষ দলও পাঠিয়েছিল ইউনেস্কো। বিষ্ণুপুরের মাথায় আগামী দিনে ঐতিহ্যের সেই মুকুট ওঠার সম্ভাবনা প্রবল বলাই চলে।
৫/৭
কলকাতা— আঠারো শতকে ব্রিটিশদের হাত ধরেই গোড়াপত্তন হয়েছিল কলকাতার। বঙ্গভঙ্গের আগে পর্যন্ত দীর্ঘ সময় ধরে ব্রিটিশ ভারতের রাজধানীও ছিল তিলোত্তমা। শিল্প-শিক্ষা-সংস্কৃতি-স্থাপত্য-ভাস্কর্য— যেদিক থেকেই দেখা যাক না কেন, কলকাতা গোটা পশ্চিমবঙ্গের প্রাণকেন্দ্র। কলকাতার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে স্বাধীনতা সংগ্রামের দীর্ঘ ইতিহাসও। ২০১৯ সালে কলকাতাকে হেরিটেজ সাইট ঘোষণার জন্য ইউনেস্কোর দপ্তরে আবেদনপত্র জমা দেয় রাজ্য সরকার। নগরী পর্যবেক্ষণে এসেছিল ইউনেস্কোর বিশেষ দলও। সম্প্রতি আলিপুর সংশোধনাগারের সংস্কারের পর আরও জোরালো হচ্ছে ‘হেরিটেজ সাইট’ তকমা পাওয়ার সম্ভাবনা।
৬/৭
শান্তিনিকেতন— বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন বিখ্যাত ব্যক্তিত্বের বাড়িকেই হেরিটেজের আখ্যা দিয়েছে ইউনেস্কো। সেই তালিকায় রবীন্দ্রনাথের স্বপ্নের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তথা কর্মক্ষেত্র শান্তিনিকেতন নেই কেন— তা নিয়ে বিতর্ক চলেছে দীর্ঘদিন। ভারতের প্রথম নোবেলজয়ীর হাতে তৈরি বিশ্বভারতীর ছত্রে ছত্রে ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির ছাপ লেগে থাকলেও, সেইভাবে কোনো উদ্যোগই নেয়নি ভারত সরকার। শেষ পর্যন্ত কয়েকমাস আগে হেরিটেজ সাইটের মনোনয়ন পায় বিশ্বভারতী। গত সেপ্টেম্বর মাসে অঞ্চল পরিদর্শনে এসেছিল ইউনেস্কোর বিশেষ কমিটি। আদৌ শান্তিনিকেতন ‘হেরিটেজ সাইট’-এর তকমা পাবে কিনা তা বলবে ভবিষ্যৎই। তবে ইউনেস্কোর পরিদর্শন সফরের জন্য সংস্কার ও সংরক্ষণের ঝড় উঠেছে শান্তিনিকেতনে। যে কর্মসূচি স্থবির হয়েছিল এতদিন।
৭/৭
নেওড়া ভ্যালি ন্যাশনাল পার্ক— বিগত এক বছরে প্রাণী ও উদ্ভিদ মিলিয়ে পঞ্চাশটিরও বেশি নতুন প্রজাতির সন্ধান মিলেছে বাংলার বুক থেকে। আর তার অধিকাংশই আবিষ্কৃত হয়েছিল উত্তরবঙ্গের নেওড়া ভ্যালি ন্যাশনাল পার্কে। দার্জিলিং জেলার কালিম্পং-এ অবস্থিত এই জাতীয় উদ্যানের সম্পূর্ণ জীববৈচিত্র্য আজও সামনে আসেনি বলেই মনে করেন গবেষকরা। সুন্দরবন ‘হেরিটেজ সাইট’-এর আখ্যা পেলেও কেন ব্রাত্য রয়েছে নেওড়া ভ্যালি, তা নিয়ে একাধিকবার প্রশ্ন তুলেছিলেন জীববিজ্ঞানীরা। মনোনয়ন জমা পড়ার পর, ইউনেস্কোর দপ্তরে পর্যালোচনার স্তরে রয়েছে সংশ্লিষ্ট বিষয়টি। কয়েক বছরের মধ্যেই জুটতে পারে সেই সম্মাননা।