সালটা ১৯৩০। বারমুডা দ্বীপের কাছে আটলান্টিক মহাসাগরের ওপর জাহাজে দাঁড়িয়ে আছেন দুইজন ব্যক্তি। উইলিয়াম বিব এবং অটিস বার্টন। দুজনেই প্রস্তুত জলের নিচে যাওয়ার জন্য। পাশেই রয়েছে বিশালাকার একটি গোলাকার সাবমারসিবল। এই যন্ত্রে চেপেই জলের নিচে যাবেন বিজ্ঞানী উইলিয়াম বিব। ঘুরে দেখবেন সমুদ্রের বাস্তুতন্ত্র। এর আগে কোনো জীববিজ্ঞানীকে এমনটি করতে দেখেনি বিশ্ব। ইতিহাসের এই সন্ধিক্ষণের অন্যতম অংশ হয়েছিলেন মেয়েরাও। জলের নিচে দুজন পুরুষ থাকলেও, ডাঙায় পুরো কাজটার তদারকি করছিলেন তাঁরা।
সমুদ্রের তলায় জীবনটা ঠিক কীরকম? ওখানকার উদ্ভিদ, প্রাণী ও পরিবেশের সহাবস্থানই বা কী? সেই কবে থেকে গবেষণা করে এসেছে মানুষ। কিন্তু সমুদ্রের নিচে গিয়ে আপাদমস্তক পর্যবেক্ষণ করা, ওই পরিবেশে গিয়ে দেখে আসা সবটা— এই কাজগুলো সেভাবে হয়নি। একজন জীববিজ্ঞানী গিয়ে নিজের মতো করে পর্যবেক্ষণ করবেন, সেই উদ্যোগ প্রথম নেওয়া হল গত শতাব্দীর বিশের দশকের শেষে। উদ্যোগ নিলেন আমেরিকান ইঞ্জিনিয়ার অটিস বার্টন। তৈরি করলেন একটি গোলাকার সাবমারসিবল জলযান, যেটা এক-দুইজন মানুষকে সমুদ্রের গভীরে নিয়ে যেতে পারবে। নাম দেওয়া হল ‘বাথিস্ফিয়ার’। এই পুরো উদ্যোগে সঙ্গে নেওয়া হল জীববিজ্ঞানী উইলিয়াম বিব’কে। ঠিক হল, ‘বিখ্যাত’ বারমুডা দ্বীপের কাছেই আটলান্টিক মহাসাগরের নীচে অনুসন্ধান চালানো হবে।
আরও পড়ুন
ছদ্মবেশে তুখোড়, হাজারো রহস্য ভেদ করা ভারতের প্রথম মহিলা গোয়েন্দার গল্প
কিন্তু এই কাজ করার জন্য জলের নীচে যেমন থাকবেন উইলিয়াম আর বার্টন, তেমনই ওপরেও তো পুরো কাজটা পরিচালনার জন্য কাউকে থাকতে হবে! সেই কাজটাই করলেন একদল মহিলা বিজ্ঞানী। এককথায়, তাঁরাই এই পুরো মিশনটার পরিচালক। ছিলেন ল্যাব অ্যাসিসটেন্ট জোসেলিন ক্রেন গ্রিফিন, ডিপার্টমেন্ট অফ ট্রপিকাল রিসার্চের চিফ টেকনিকাল অ্যাসোসিয়েট গ্লোরিয়া অ্যানাবেল। আরও কয়েকজন যুক্ত হয়েছিলেন এই কাজে। এঁরা সবাই ছিলেন অবিচ্ছেদ্য অংশ। জোসেলিন প্রাণীগুলোকে শনাক্ত করার কাজ করছিলেন। সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বটি ছিল গ্লোরিয়া’র। গভীর সমুদ্রে উইলিয়ামের সঙ্গে একমাত্র টেলিফোনিক যোগাযোগ রক্ষার দায়িত্ব ছিল তাঁর। সেখানে সামান্য কিছু ভুলচুক হলেই সমস্তটার ক্ষতি হত।
কিন্তু সেসব কিছুই হয়নি। সবকিছু সামলেছিলেন গ্লোরিয়া, জোসেলিনরা। সবার সম্মিলিত পরিশ্রমেই উঠে আসে একের পর এক ‘গভীর রহস্যের’ ছবি। সেই প্রথম একজন বিজ্ঞানীর চোখ দিয়ে গভীর সমুদ্রকে চিনল পৃথিবী। সেখানে ছড়িয়ে আছে বিস্ময়, রয়েছে কোনো নাম-না-জানা প্রাণীর হদিশ। পরে অনেকেই স্বীকার করেছেন, এই সম্পূর্ণ কাজটা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্নই হত না, যদি না ওই মহিলা বিজ্ঞানীরা না থাকতেন। এমন মুহূর্তে, তাঁদের অবদানের কথাও একটু মনে করে নিই আমরা…
Powered by Froala Editor