আগুনের হাত থেকে বাঁচাতে, অন্য প্রাণীদের নিজের বাসায় আশ্রয় দিল এই প্রাণী

কথায় বলে, চরম বিপদের সময় যে পাশে দাঁড়ায়, আশ্রয় দেয়, সে-ই প্রকৃত বন্ধু। শুধু মানুষ নয়, এই কথাটি অন্যান্য জীবজন্তুদের ক্ষেত্রেও খাটে। তারই প্রতিফলন দেখা গেল অস্ট্রেলিয়ায়। প্রবল অগ্নিকাণ্ডের হাত থেকে বাঁচতে বেশ কিছু প্রাণী আশ্রয় নিল ওমব্যাটের বাসায়। আর তাদের থাকতে দিয়ে ওমব্যাট নিজেরা তো রক্ষা পেলই, সঙ্গে রক্ষা পেল ওই প্রাণগুলোও।

সম্প্রতি এমনই চমকপ্রদ খবর ভাইরাল হল নেট দুনিয়ায়। অস্ট্রেলিয়ার অন্যতম বিপন্ন প্রাণী হল এই ওমব্যাট। নামে ‘ব্যাট’ হলেও, আসলে এরা স্তন্যপায়ী চতুস্পদ প্রাণী। দেখতে গিনিপিগের থেকে খানিক বড় আর কোয়ালার মতো। অত্যন্ত নিরীহ এই প্রাণীটি মাটির নিচে সুড়ঙ্গ তৈরি করে বসবাস করে। সেই বাসাই প্রাণ বাঁচাল তাদের।

অস্ট্রেলিয়ার ভয়াবহ ‘বুশফায়ার’-এর পর অনেকে ওমব্যাটদের নিয়ে চিন্তিত ছিলেন। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল, মাটির নিচে দিব্যি সুস্থ সবল আছে তারা। একজনও আগুনে ঝলসে যায়নি। কিন্তু তখনও আসল জিনিসটি সামনে আসেনি। প্রাণীবিদ, পরিবেশকর্মীরা দেখলেন, মাটির নিচে ওমব্যাটের সুড়ঙ্গে আশ্রয় নিয়েছে আরও বহু প্রাণী। সেখানে যেমন আছে খরগোশ, টিকটিকি, তেমনই আছে শজারু, ওয়ালাবি। সবাই নিজের প্রাণ বাঁচাতে আশ্রয় নিয়েছে মাটির নিচে। আর ওমব্যাট তাদেরকে আশ্রয়ও দিয়েছে! যতদিন বাইরের বন জ্বলছিল, ততদিন মাটির নিচে এই প্রাণীরা সুরক্ষিত ছিল। এই খবর সামনে আসার পরই, অস্ট্রেলিয়ার বুশফায়ারের নতুন ‘হিরো’ বলা হচ্ছে ওমব্যাটকে।

একটা কথা আমরা অনেক সময়ই ব্যবহার করে থাকি - ‘পারস্পরিক সহাবস্থান’। একজন আরেকজনের অসুবিধায় এগিয়ে আসবে, সাহায্য করবে, এই গুণগুলিই আমরা একে অন্যের মধ্যে দেখতে চাই। বাস্তব জীবনে কতটা দেখতে পাওয়া যায় সেটা আলাদা তর্কের বিষয়। কিন্তু অন্যান্য জীবজন্তুদের মধ্যেও যে এই ‘মানবিক’ গুণ রয়েছে, ওমব্যাটের ঘটনা সেটা প্রমাণ করে দিল। বাস্তুতন্ত্রকে রক্ষা করার আজ কতটা প্রয়োজন সেটাও উঠে আসছে। আজ ওমব্যাট রক্ষা করেছে, কাল কী হবে কেউ বলতে পারবে না। সেই আগামীর দিনগুলোকে সুরক্ষিত করার দায়িত্ব আমাদের সবার। একটা একটা করে নতুন অগ্নিকাণ্ড ঘটছে, আর নতুন করে মুছে যাচ্ছে প্রাণীদের সংখ্যা। ওমব্যাটের কাজ আমাদের আবার মনে করিয়ে দেয় দায়িত্বের কথা। যে দায়িত্ব থেকে প্রতিদিন সরে যাচ্ছি আমরা।