দেখতে অনেকটা যেন গিনিপিগ। তবে আয়তনে প্রায় এক মিটার পর্যন্ত লম্বা হয় ওয়ামব্যাট। অস্ট্রেলিয়ার এই প্রাণীটিই এখন ত্রাতা হয়ে দাঁড়িয়েছে শতাধিক প্রজাতির। নিউ সাউথ ওয়েলসে তীব্র খরার মধ্যে জলের সন্ধান এনে দিচ্ছে ওয়ামব্যাটরা।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যম অনুযায়ী, এমনই ঘটনা ঘটতে দেখা গেছে হান্টার উপত্যকার টেড ফিনি গো খামারে। বিগত তিন বছরে কেবল মাত্র একবারই বৃষ্টিপাত হয়েছে অস্ট্রেলিয়ার এই অঞ্চলে। তাও সামান্যই। কাজেই শুকিয়ে গিয়েছে সম্পূর্ণ তৃণভূমি। ফলে বিপাকে পড়েছে ওই অঞ্চলের কয়েকশো প্রজাতির প্রাণী।
কিছুদিন আগেই ওই খামারের মধ্যে অনুপ্রবেশ করতে দেখা যায় ওয়ামব্যাটদের। বেশ কয়েকবার তাদের তাড়িয়ে দিয়েও লাভ হয়নি। তবে তাদের অনুপ্রবেশের কারণ সম্পূর্ণ অজানা ছিল খামারের মালিকের। সম্প্রতি তিনি লক্ষ্য করেন খামার সংলগ্ন অঞ্চলে তৈরি হয়েছে ২০ মিটার ব্যাসের এবং ৪ মিটার গভীরতার একটি বিশাল গর্ত। বিষয়টি নজরে আসতেই তিনি খবর দেন বনদপ্তর কর্তৃপক্ষকে। অনুসন্ধানে আশেপাশের গাছগুলিতে ক্যামেরা ট্র্যাপ বসিয়েছিলেন বনদপ্তরের আধিকারিকেরা। তাতেই ধরা দেয় চাঞ্চল্যকর ভিডিও ক্লিপিং।
আসলে এই গর্তের পিছনে দায়ী নিশাচর প্রাণী ওয়ামব্যাটরাই। কয়েকদিন পর্যবেক্ষণের পরে বোঝা যায় তাদের আসল উদ্দেশ্য। বৃহদাকার ওই গর্তের মধ্যে ছোটো ছোটো টানেল খনন করতে দেখা যায় ওয়ামব্যাটদের। আর সেই টানেলের মাধ্যমেই এখন উঠে আসছে ভূগর্ভস্থ জলের গোপন ভাণ্ডার। জলের সন্ধান পেয়ে বর্তমানে সেখানে আসছে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি, গোনা, কোসাম, ইকিডনাস, ইমা, ক্যাঙ্গারু-সহ বহু প্রজাতির প্রাণী। প্রাণ ফিরে পেয়েছে শুকিয়ে যাওয়া বাস্তুতন্ত্র।
অস্ট্রেলিয়ার জীববিজ্ঞানী জুলি ওল্ড জানান, এক কথায় নজিরবিহীন এই ঘটনা। এর আগে ওয়ামব্যাটদের জলের অনুসন্ধানে এমন খনন করার রেকর্ড নেই কোথাও। তবে আরও অবাক করেছে তাদের খননকার্যের প্রকৃতি। ছোটো ছোটো টানেলগুলি ওয়ামব্যাটরা সংযুক্ত করেছে বড়ো বড়ো গাছের গোড়ার সঙ্গে। যা বাড়তি দৃঢ়তা প্রদান করছে টানেলগুলিকে। আশঙ্কা থাকছে না মাটির ধস নেমে গর্তগুলি বুজে যাওয়ার।
তবে এই প্রথম নয়। অস্ট্রেলিয়ায় বিধ্বংসী দাবানলের সময়ও ত্রাতা হয়ে দাঁড়িয়েছিল ওয়ামব্যাটরা। তাদের তৈরি এই ধরণের গর্তে জায়গা নিয়ে প্রাণ বেঁচেছিল কোয়ালা-সহ ছোট ছোট বিভিন্ন প্রাণীর। আর এই অদ্ভুত চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের জন্যই ওয়ামব্যাটদের ‘বাস্তুতন্ত্রের প্রযুক্তিবিদ’ হিসাবেই অভিহিত করেছেন গবেষক জুলি ওল্ড…
আরও পড়ুন
ভারতের পাখি প্রজাতির এক-তৃতীয়াংশই সুন্দরবনে, বাড়ছে সংখ্যাও
Powered by Froala Editor