মহামারীতে বন্ধ হয়েছে যাতায়াতের পথ, পরিবহন। সেইসঙ্গে কোপ পড়েছে অর্থনীতিতেও। এসব বাধা পেরিয়েই তাই আর পৌঁছে ওঠা হচ্ছে না চিকিৎসকদের কাছে, স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। করোনায় সংক্রমিত না হলেও, দুর্ভোগের শেষ নেই মহারাষ্ট্রের উপজাতি জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত অঞ্চলগুলিতে। এই কঠিন পরিস্থিতিতে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন মহারাষ্ট্রের বছর সাতাশের যুবতী। ব্যক্তিগত উদ্যোগেই প্রান্তিক এই মানুষগুলির কাছেই পৌঁছে দিচ্ছে স্বাস্থ্য পরিষেবা।
রেলু বাসাবি। মহারাষ্ট্রেরই চিমলখাড়ি অঞ্চলের একটি অঙ্গনওয়ারিতে কাজ করেন তিনি। তবে নর্মদা তীরবর্তী অঞ্চলে বড়ো হয়ে ওঠা রেলু সামনে থেকে দেখেছিলেন অঞ্চলের আদি ভূমিপূত্রদের এই ভোগান্তি। আদিবাসীদের মধ্যে যাতে ভাইরাসের সংক্রমণ না ঘটে, তার জন্যই বাইরের জগতের সঙ্গে তাঁদের যোগ বিচ্ছিন্ন করেছিল সরকার। কিন্তু অভাব ছিল বিকল্প পরিকল্পনার। প্রত্যন্ত অঞ্চলে ব্যবস্থা করা হয়নি কোনো চিকিৎসাকেন্দ্রেরই।
অবস্থার সামাল দিতে স্থানীয় মৎস্যজীবীদের থেকে রেলু নিজেই ভাড়া করেছিলেন নৌকা। বাড়ি থেকে দাঁড় টেনে রোজ বেয়ে চলা ১৮ কিলোমিটার। তারপর আরও খানিকটা হাঁটা। আদিবাসী অধ্যুষিত দাদার এবং আলিগড় অঞ্চলের মহিলা এবং শিশুদের চিকিৎসার দায়িত্ব তুলে নেওয়া নিজের কাঁধে। প্রতি সপ্তাহে পাঁচ দিন এভাবেই অক্লান্ত পরিশ্রম করে তাঁদের কাছে পরিষেবা পৌঁছে দিচ্ছেন রেলু। গত এপ্রিল মাস থেকেই।
তাঁর দেখভালেই এখন রয়েছেন ২৫টি নবজাতক এবং ৭ জন অন্তঃসত্ত্বা মহিলা। পাশাপাশি চলছে অন্যদেরও রুটিন চেক-আপ। অনূর্ধ্ব ছ’বছরের শিশুদের পুষ্টির জন্য উপযুক্ত খাদ্যেরও সরবরাহ করছেন তিনিই। ওষুধ থেকে সেসব খাদ্যসামগ্রী— সব কিছুই নিজে কাঁধে করেই বয়ে নিয়ে যান রেলু। সকাল সাড়ে সাতটা থেকে বিকেল অবধি চলে কর্মযজ্ঞ। তারপর আবার ফিরে আসা নৌকা বেয়েই। এ যেন মানবিকতার এক অনন্য নিদর্শন। এই কর্মকাণ্ডের মধ্যেই রেলু হয়ে উঠেছেন গ্রামের অভিভাবক, গ্রামবাসীদের আত্মীয়া। একাই পরিপূরক হয়ে উঠেছেন সমগ্র স্বাস্থ্যব্যবস্থার...
Powered by Froala Editor