১৯৪৭ সাল। তখন মাত্র ১৭ বছর বয়স তাঁর। এক অস্থির সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে ভারত। দেশভাগ নিয়ে সাম্প্রদায়িক হিংসার আগুন ছড়িয়ে পড়েছে চারিদিকে। বিশেষ করে বাংলা এবং পাঞ্জাব ভয়াবহ শিকার হয়েছিল এই ঘটনার। সেইসময়ই পৈত্রিক বাড়ি ছাড়তে হয়েছিল তাঁকে। পরবর্তীতে সেই অস্থির সময় কাটলেও আর পৈত্রিক বাসস্থানে ফেরা হয়নি কখনও। এবার প্রায় ৭৫ বছর পরে ফের জন্মভিটেয় পা রাখার অনুমতি পেলেন ভারতীয় বৃদ্ধা।
রীনা ছিবার (Reena Chibber)। বর্তমানে হিমাচলপ্রদেশের বাসিন্দা হলেও, তাঁর জন্ম ও বেড়ে ওঠা অখণ্ড পাঞ্জাব প্রদেশের রাওয়ালপিণ্ডিতে। দেশভাগের মাস কয়েক আগের কথা। সন্তানদের প্রাণ বাঁচাতে, বাধ্য হয়ে তাঁদের ভারতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন রীনার বাবা-মা। রাতারাতি বাড়ি ছাড়তে হয়েছিল তাঁকে। দাদার হাত ধরেই চার ভাই-বোন উঠে পড়েছিলেন ভারতগামী ট্রেনে। এ-দেশে এসে আশ্রয় নেন সালোনে। ছেড়ে আসতে হয়েছিল পছন্দের সবকিছুই। এমনকি শৈশবের বন্ধুদের বিদায় জানানোর সুযোগটুকুও পাননি তিনি। দেশ স্বাধীন হওয়ার মাস খানেক বাদে তাঁর বাবা-মাও পাকিস্তানের বাড়ি ছেড়ে চলে আসেন ভারতে।
কিন্তু জন্মভিটের টান কি ভোলা যায়? তবে চাইলেই তো আর ঘুরে আসা যায় না। দুই দেশের মধ্যে যে কাঁটাতার উঠে গেছে। ৬০-এর দশকে ভারত সরকারের কাছে পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেন রীনা। তবে লালসুতোর ফাঁসে পড়ে সেই অনুমতিপত্র আসতে সময় লেগে যায় প্রায় ৫ বছর। ১৯৬৫ সালে হাতে পাসপোর্ট পান ঠিকই, কিন্তু পত্রপাঠ তাঁর পাকিস্তান যাওয়ার প্রস্তাব খারিজ করে দিয়েছিল ভারত সরকার। ততদিনে যে যুদ্ধের ডঙ্কা বেজে উঠেছে আবার।
তবে হার মানেননি রীনা। এর পরও বহুবার আবেদন করেছেন জন্মভিটে পরিদর্শনের জন্য। কখনও ভারত অনুমতি দিলেও, তা খারিজ করেছে পাকিস্তান। আবার কখনও ঘটেছে ঠিক তার উল্টোটা। ২০২২ সালের মার্চেই তাঁর এই আবেদন প্রত্যাখ্যান করেছিল পাকিস্তান। তবে সোশ্যাল মিডিয়ার সৌজন্যেই ভাগ্য খুলে গেল তাঁর। সম্প্রতি উর্দু সংবাদমাধ্যম ‘ইনডিপেন্ডেন্ট’-এ প্রকাশিত হয়েছিল তাঁর এই করুণ কাহিনি। তাঁর সেই সাক্ষাৎকারের ভিডিও রীতিমতো ভাইরাল হয়েছিল সোশ্যাল মিডিয়ায়। স্বাভাবিকভাবেই যা চোখে পড়ে পাকিস্তান হাইকমিশনের।
এই ঘটনার পরেই সিদ্ধান্ত বদল করে পাক সরকার। সম্প্রতি, ৯২ বছর বয়সি বৃদ্ধাকে বিশেষ শুভেচ্ছাপত্র পাঠিয়ে দেশে আহ্বান করে পাকিস্তান। অনুমোদন দেয় ৩ মাসের বিশেষ ভিসার। গত শনিবার, ১৬ জুলাই, ওয়াঘা-আটারি সীমান্ত দিয়ে পুরনো বাড়ির পথে পাড়ি দিয়েছেন রীনা। শৈশবের বন্ধুরা আদৌ জীবিত আছে কিনা জানেন না তিনি। জানেন না, জীবিত থাকলেও পুরনো পাড়াতেই তাঁদের সন্ধান মিলবে কিনা। তাও অনুসন্ধান চালাতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ তিনি। তাঁদের হদিশ না পাওয়া গেলেও ক্ষতি নেই। নিজের জন্মভিটে বসে দু’দণ্ড সময় কাটানোর সুযোগ তো পাওয়া যাবে। তা-ই বা কম কী?
Powered by Froala Editor