বছরকয়েক আগে বন্ধুর বোনকে দেখেছিলেন ক্যানসারে আক্রান্ত হতে। দেখেছিলেন, কেমো দেওয়ার ফলে মাথার চুল পড়ে গিয়েছে সেই ছোট্ট মেয়েটির। আর তা নিয়ে বিষণ্ণতায় ভুগত সে। বরং পরচুলা পরে নিলে, খুশিতে ঝলমল করে উঠত। সেই স্মৃতি মন থেকে মোছেনি পূজা নন্দীর। তখনই জেনেছিলেন, ক্যানসার-আক্রান্ত রোগীদের জন্য পরচুলা বা উইগ বানায় একটি সংস্থা। আর সেই সংস্থার কাছে চুল দান করতে পারে যে-কেউই।
তখন থেকেই মনে-মনে সংকল্প নেন কৃষ্ণনগরের মেয়ে পূজা। বছর চব্বিশের পূজা ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ স্নাতক। ভালোবাসেন ট্রেকিং করতেও। কিন্তু এসবের পরেও, তাঁর মনে প্রবল হয়ে ওঠে ক্যানসার রোগীদের জন্য চুল ‘ডোনেট’ করার ইচ্ছে। ফলে, চুল না কেটে বাড়াতে থাকেন। গতকাল, ১ নভেম্বর, মুম্বাই-এর copewithcancer সংস্থার কাছে এতদিনের সযত্নে বড় করা চুল পাঠালেন কুরিয়ার করে।
ক্যানসার-আক্রান্তদের জন্য চুল পাঠাতে, ১ নভেম্বর তারিখটিই কেন বেছে নিলেন পূজা? এর কারণ শুনলে বিস্মিত হবেন বইকি। গতকাল ছিল পূজার বাবার মৃত্যুবার্ষিকী। বাবার মৃত্যুর পর, শ্রাদ্ধকর্ম করার সময় অনেকের পরামর্শ ও নির্দেশ সত্ত্বেও, চুল কাটেননি তিনি। সহ্য করেছেন সমালোচনাও। কিন্তু চুল তিনি বড় করছিলেন ক্যানসার-আক্রান্তদের দান করার জন্য; ফলে সেই সংকল্প থেকে সরে আসেননি বাবার পারলৌকিক কাজের সময়ও। চেয়েছিলেন, আরও বড় হোক চুল। গতকাল, বাবার মৃত্যুবার্ষিকীর দিন সেই চুলই দান করলেন তিনি।
পূজার এই উদ্যোগ নতুন দৃষ্টান্ত হয়ে রইল। ক্যানসার-আক্রান্তদের চুল দান করার ঘটনা বড় শহরে কমবেশি দেখা গেলেও, কৃষ্ণনগরের মতো মফঃস্বল-শহরেও যে সেই সচেতনতা ছড়িয়ে পড়েছে, তা নিঃসন্দেহে আশার বিষয়। অথবা, হয়তো শহর নয়, ব্যক্তি-মানসিকতাই গুরুত্ব পায় এ-ক্ষেত্রে। সে যাই হোক, বাবার মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে পূজা নন্দীর এই উদ্যোগকে সেলাম।