অকালবৃষ্টিতে কৃষিকাজে ব্যাপক ক্ষতি, বদলে যেতে পারে চাষের সময়ও?

“গত দুই-আড়াই বছর ধরেই আবহাওয়ায় এক অদ্ভুত বদল শুরু হয়েছে। বছরের যে কোনো সময়েই বৃষ্টি শুরু হয়ে যাচ্ছে। চাষের উপযুক্ত সময় বলে আর কিছুই থাকছে না।” বলছিলেন কৃষি গবেষক কৌশিক মজুমদার। গত দুদিন ধরে একটানা বৃষ্টিতে ইতিমধ্যেই দক্ষিণবঙ্গে কৃষিকাজের ব্যাপক ক্ষতি হয়ে গিয়েছে। গ্রামে গ্রামে কৃষকরা বসে রয়েছেন জমি আগলে। কেউ কেউ জমি থেকে থালা-গামলা নিয়ে জল সরানোর ব্যর্থ চেষ্টা করে যাচ্ছেন। ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদ (Jawad) চরিত্র বদলে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হওয়ার কারণেই এই অসময়ে বৃষ্টি, বলছেন আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু এর হাত থেকে কৃষকদের এবং ফসলকে (Crops) বাঁচানো কোনো উপায়ই কারোর জানা নেই।

কৌশিকবাবু বলছিলেন, খরিফ শষ্যের চাষে অবশ্য ততটা ক্ষতি হয়নি। ৯৫ শতাংশ জমি থেকেই ইতিমধ্যে আমন ধান তুলে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু যে কয়েকটি জায়গায় পাকা ধান জমিতে থেকে গিয়েছিল, সেখানে এই ক্ষতি মেটানোর আর কোনো উপায় নেই। অন্যদিকে রবি শষ্যের চাষে সবচেয়ে ক্ষতি হয়েছে। কারণ এই সময়টাই রবি ফসলের বীজতলা বপনের সময়। দক্ষিণবঙ্গের ব্যাপক অঞ্চলে এই সময় আলু এবং বোরো ধানের চারাগাছ তৈরির কাজ চলে। প্রায় সমস্ত চারাগাছই নষ্ট হয়ে গিয়েছে এই অকাল বৃষ্টিতে। চাষিদের আবার নতুন করে বীজ বপন করে চারাগাছ তৈরি করতে হবে। “সেক্ষেত্রেও বলা যায়, এরপর যদি আর নতুন করে বৃষ্টি না হয় তাহলে চাষ করা সম্ভব। কিন্তু জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে আবার বৃষ্টিপাত হবে কিনা, তা তো বলা যাচ্ছে না।” বক্তব্য কৌশিকবাবু।

বাংলার ৬টি ঋতুকে দীর্ঘদিন ধরেই আর আলাদাভাবে চেনা যায় না। তবু বর্ষার নির্দিষ্ট সময়টিকে মাথায় রেখেই চাষের সময় স্থির করা হয়ে আসছে এখনও। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সেই সময়টাও আর নির্দিষ্ট থাকছে না। যে কোনো সময়েই আকাশের মুখ গম্ভীর হয়ে উঠছে। কৌশিকবাবুর কথায়, “এরকম চলতে থাকলে হয়তো আর কিছুদিনের মধ্যেই আমাদের চেনা কৃষিচক্র বদলে ফেলতে হবে। খরিফ চাষের পরে বা রবি চাষের আগে চাষ করতে বলতে হবে কৃষকদের।” কিন্তু সেটাও কতদূর কার্যকর হবে, তা নিয়ে সংশয় থেকে যায়। কারণ বৃষ্টির চরিত্রের মধ্যেই কোথাও কোনো ছন্দ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। 

এর ফলে সবচেয়ে ক্ষতি হচ্ছে সেইসমস্ত চাষের, যেখানে আলাদা করে চারা তৈরি করে তারপর মূল চাষ শুরু হয়। এই সমস্যার হাত থেকে বাঁচতে কি তাহলে আবার প্রাচীনকালের মতো সরাসরি চাষের পদ্ধতিতে ফিরবেন কৃষকরা? নানারকম সম্ভাবনাই থেকে যাচ্ছে, তবে প্রকৃত সমাধানের রাস্তা জানেন না কেউই। হয়তো বিশ্বব্যাপী পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণে আনতে পারলে জলবায়ু আবার পুরনো ছন্দে ফিরে আসবে। কিন্তু তার জন্য যে ব্যাপক উদ্যোগ প্রয়োজন, তাও সহজে চোখে পড়ছে না।

আরও পড়ুন
তুষারপাতের পরিবর্তে বৃষ্টি, জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার মেরু অঞ্চল

ছবি - ফেসবুক

আরও পড়ুন
বৃষ্টি হলেই গেয়ে ওঠে আস্ত বাড়ি, জার্মানির বুকেই রয়েছে এমন বিস্ময়

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
বৃষ্টির জল থেকেই সরাসরি বিদ্যুৎ তৈরি, পথ দেখাচ্ছে দিল্লি আইআইটি