“এবছর ম্যাজিশিয়ানদের কথা আলাদাভাবে উল্লেখ করেছেন সবাই। খুব খুশি হলাম এটা শুনে। মুখ্যমন্ত্রীও ঘোষণার সময় আলাদা করে ম্যাজিকের কথা মনে রেখেছেন।” বলছিলেন ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান ম্যাজিক অ্যাসোসিয়েশন, ফিমার কর্ণধার ম্যাজিশিয়ান রজত নরসিংহম। শনিবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছেন, ১ অক্টোবর থেকেই খুলে যাবে রাজ্যের সমস্ত সিনেমা হল। সেইসঙ্গে গান, নাটকের পাশাপাশি শুরু হতে পারে ম্যাজিকের শো-ও। তবে এই ঘোষণাকে ঘিরে আনন্দের পাশাপাশি একধরনের বিপরীত চিন্তার ভাঁজও পড়েছে ম্যাজিশিয়ানদের কপালে।
“গত ৬ মাস ধরে সমস্ত শো বন্ধ। ম্যাজিকের ক্লাস নিতেও পারেননি অনেকে।” বলছিলেন ফিমার ভাইস-প্রেসিডেন্ট ম্যাজিশিয়ান শান্তনু সেন। তাঁর কথায়, “এই কয়েকমাস কীভাবে কেটেছে তা বলে বোঝানো অসম্ভব। এবার হয়তো একটা আশার আলো দেখা যাবে।” তাঁর কথায়, সিনেমা হলে যেমন ৫০ জন দর্শক বেঁধে দেওয়া হয়েছে, ম্যাজিকের ক্ষেত্রে তেমন কোনো সীমা বেঁধে দেওয়া হয়নি। কিন্তু সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে অনুষ্ঠান করতে গেলে দর্শকের সংখ্যা কিছুটা কমবেই। সেক্ষেত্রে আগের অবস্থায় ফিরে যাওয়া মুশকিল। তবু তো কিছুটা সুরাহা হবে।
ম্যাজিশিয়ান রজত নরসিংহম অবশ্য আশঙ্কা প্রকাশ করছেন অন্য কারণে। তাঁর কথায়, “মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দিয়েছেন যে কোনো অনুষ্ঠানে ৫০ জনের বেশি কলাকুশলী নেওয়া যাবে না। কিন্তু ম্যাজিকে অনেক মানুষকে নিয়েই অনুষ্ঠান হয়। অনেকে আবার মিউজিকের ব্যবস্থাও রাখেন। তাই এই সংখ্যা মেনে ম্যাজিক দেখানো অনেকটাই কঠিন হবে।” তবে ফিমার সম্পাদক স্যান্ড-আর্টিস্ট কৌশিক মনে করছেন, “অবশেষে যে মঞ্চে ম্যাজিক দেখানোর সুযোগ আসছে, এটাই সবথেকে বড় সুখবর।”
অন্যদিকে শান্তনু সেন বলছেন, “শুধু ম্যাজিক দেখানোতেই নয়, করোনা পরিস্থিতিতে ম্যাজিকের সরঞ্জামের ব্যবসাতেও সমস্যা দেখা দিয়েছে।” তাঁর কথায়, “আমার নিজের কারখানা থেকে সবথেকে বেশি সামগ্রী রপ্তানি হয় আমেরিকায়। কিন্তু মহামারী পরিস্থিতিতে রপ্তানি বন্ধ। কিছুদিন কর্মচারীদের নির্দিষ্ট মাইনে দিতে পেরেছি, তারপর আর পারিনি।” এখন মঞ্চে ম্যাজিক দেখানো শুরু হলেও সেই ব্যাবসা কি চাঙ্গা দিয়ে উঠবে? এ প্রশ্নের উত্তর এখনই দেওয়া কঠিন। তবে ম্যাজিক দেখানো শুরু হলে তার সামগ্রীর চাহিদাও বাড়বে।
তবে সরকারের ছাড়পত্রের পরেও কীভাবে ম্যাজিকের অনুষ্ঠান সম্ভব, সে বিষয়ে ধোঁয়াশা এখনও স্পষ্ট নয়। কিন্তু এর মধ্যেই অনেক দুর্গাপুজোর আসর থেকে ডাক পেতে শুরু করেছেন ম্যাজিশিয়ানরা। যদিও অনেক বড়ো বড়ো ক্লাব ইতিমধ্যে জানিয়ে দিয়েছে যে সেখানে কোনো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে না। তবে বারোয়ারি পুজো কি ম্যাজিক ছাড়া হয়? আর রজত নরসিংহমের কথায়, “ম্যাজিকের আসল সময় কিন্তু দুর্গাপুজো থেকেই শুরু হয়। শীতকাল জুড়ে চলে অনুষ্ঠান। গত ৬ মাসে আর্থিক অবস্থা শোচনীয় স্তরে পৌঁছে গেলেও হয়তো বছরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়টাতে ঘরে বসে থাকতে হবে না।” তাই সমস্ত আশা এবং আশঙ্কার মধ্যেও একটা কথা বলাই যায়, ম্যাজিক চলবে।
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
মানিকতলায় অগ্নিবিধ্বস্ত শিশুদের হাতে পোশাক তুলে দিলেন কলকাতার ম্যাজিশিয়ানরা