বন্যপ্রাণীর সংখ্যা হ্রাসের ৬০ শতাংশের জন্যই দায়ী পাচার, চাঞ্চল্যকর তথ্য সমীক্ষায়

শুধু চোরাশিকারই নয়, বন্যপ্রাণীরাই এখন হয়ে উঠেছে বাণিজ্যের ‘পণ্য’। আর তার জেরেই বিশ্বব্যাপী বন্যপ্রাণীর সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে দ্রুত হারে। এমনকি এই ট্রাফিকিং অবলুপ্তির দিকে ঠেকে দিচ্ছে কয়েকশো বিরল প্রজাতিকে। সাম্প্রতিক গবেষণায় এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য তুলে আনলেন গবেষকরা।

যুক্তরাষ্ট্রের শেফিল্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক জড়িত ছিলেন এই আন্তর্জাতিক সমীক্ষার সঙ্গে। সেই সমীক্ষা থেকেই উঠে আসে বন্যপ্রাণের সংখ্যা হ্রাসের মোট ৬২ শতাংশের পিছনে দায়ী রয়েছে বন্যপ্রাণী ব্যবসাই। বিপন্ন প্রজাতির ক্ষেত্রে প্রায় ৮০ শতাংশ প্রাণীসংখ্যা মুছে দিচ্ছে ট্রাফিকিং।

নেচার ইকোলজি অ্যান্ড ইভোলিউশন জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণাপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে প্রাণী এবং বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদ মিলিয়ে প্রতি বছর প্রায় ১০ কোটি জীব শিকার হচ্ছে পাচারের। এমনকি পাচারের কারণে সংরক্ষিত অরণ্য থেকেও প্রাণীর সংখ্যা কমছে আনুমানিক ৫ শতাংশ। আর বিশ্বব্যাপী এই ব্যবসার পরিধি প্রায় ৪ থেকে ২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। 

তবে সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয় হল, বন্যপ্রাণ ব্যবসা কিন্তু পুরোপুরো বেআইনি নয়। এর জন্য রয়েছে বিশেষ নীতিমালা। আর সেটাই হয়ে দাঁড়িয়েছে মূল সমস্যা। আইনের ছাতার সহায়তা নিয়েই চলছে অনৈতিক পাচার। অনেকক্ষেত্রেই সেখানে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারছে না প্রশাসন। বিষয়টা ঠিক কেমন? বর্তমানে আরব এবং পশ্চিমের বেশ কিছু দেশেই চল বেড়েছে বিভিন্ন বিপন্ন প্রজাতির প্রাণীকে পোষ্য হিসাবে দত্তক করার। তাতে দাবি করা হচ্ছে তাদের সম্পূর্ণ সুরক্ষা প্রদান করা হবে। তবে বাস্তবে তেমনটা হচ্ছে না। ভিন্ন পরিবেশ এবং বন্দি অবস্থায় থাকার জন্য অল্প সময়ের মধ্যে মারা যাচ্ছে অধিকাংশ প্রাণী। কাঁকড়াবিছে, মাকড়সা, বিভিন্ন পতঙ্গ, ক্যাকটাস, বিরল অর্কিড— কিছুই বাদ নেই এই তালিকা থেকে।

এতো গেল সরাসরি বন্যপ্রাণের পাচার। তাছাড়াও বিভিন্ন সামগ্রীর জন্যেও চলছে নির্বিচার হত্যা। উদাহরণস্বরূপ উল্লেখ করা হয় হাতির দাঁতের জন্য শিকার এতটাই বেড়ে গেছে আদামী কয়েক দশকের মধ্যে বিলুপ্ত হতে পারে আফ্রিকার হাতি। পাশাপাশি মাংসের চাহিদার জন্য প্যাঙ্গোলিন-সহ একাধিক প্রজাতিই হুমকির মুখে। তাছাড়া বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী ওষুধ এবং বিলাসবহুল সামগ্রীর চাহিদা মেটাতেও মৃত্যুর মুখে পড়তে হচ্ছে বন্যপ্রাণীদের।

গবেষণার সহলেখক ডেভিড এডওয়ার্ড জানাচ্ছেন, প্রাণীসুরক্ষার ক্ষেত্রে সতর্কতা না বাড়ালে বন্ধ করা যাবে না এই পাচারের পথ। তার জন্য দরকার উপযুক্ত বিশেষ আইনি নকশার। সেইসঙ্গে আঞ্চল বিশেষে স্থানীয় মানুষদেরও সচেতন করার কর্মসূচি নিতে হবে প্রত্যেক প্রশাসনকেই। গবেষকদের সঙ্গে পরামর্শ নিয়ে বদল করতে হবে প্রাণী সুরক্ষার নীতিতেও। না হলে রক্ষকই ভক্ষক হয়ে দাঁড়াবে আগামীদিনে…

আরও পড়ুন
আন্টার্কটিকার গভীরে, -২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সন্ধান মিলল নতুন প্রাণীর

Powered by Froala Editor

Latest News See More