ইতিহাস, বিজ্ঞান, সংস্কৃতি— যে কোনো বিষয় সংক্রান্ত তথ্যই যেন সহজে ইন্টারনেটে পাওয়া যায় সেই লক্ষ্য নিয়েই পথচলা শুরু হয়েছিল উইকিপিডিয়ার। তারপর কেটে গেছে একুশ বছর। আজ বিশ্বের অন্যতম ডিজিটাল এনসাইক্লোপিডিয়া বলেই ধরে নেওয়া হয় উইকিপিডিয়াকে। দৈনিক পাঠকের সংখ্যা প্রায় ২ কোটি। এহেন সাইটের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে এবার প্রশ্ন তুললেন স্বয়ং সহনির্মাতা! উইকিপিডিয়ায় প্রাপ্ত বহু তথ্যেরই সত্যতা নেই বলেই দাবি তাঁর।
জিমি ওয়েলসের সঙ্গে একজোট হয়েই স্যাঙ্গার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন উইকিপিডিয়া। আর প্রথম থেকেই এই তথ্যভাণ্ডার ছিল উন্মুক্ত কোষ। অর্থাৎ, চাইলে যে কেউ-ই তথ্য সংযোজন অথবা পরিবর্তন করতে পারেন। উইকিপিডিয়ার যাত্রা শুরুর মাত্র ৫ দিনের মধ্যেই শুরু হয় বিতর্ক। সদ্য শপথ নেওয়া মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশের সম্পর্কে একাধিক ভুল তথ্য ভরে দেওয়া হয় উইকিপিডিয়ায়। সেই শুরু। তারপর থেকে একাধিকবার অভিযোগ উঠেছে এই ডিজিটাল তথ্যভাণ্ডারের বিরুদ্ধে।
সম্প্রতি এক সংবাদমাধ্যমের সাক্ষাৎকারে ল্যারি স্যাঙ্গার আলোকপাত করলেন সেই বিষয়েই। সতর্ক করলেন, বিশেষ কিছু ক্ষেত্র ছাড়া যাতে উইকি-তথ্যের ওপর অন্ধভাবে বিশ্বাস না করেন পাঠকেরা। কারণ, উইকির তথ্য মূলত তথ্যদাতারই দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রতিফলিত করে। অনেক ক্ষেত্রেই মূল ঘটনার থেকে আলাদা। পাশাপাশি কোনো তথ্য সত্য হলেও, তা কোনো ঘটনার একটি দিকমাত্র, নিরপেক্ষ বৃত্তান্ত নয়। কখনো আবার নিজেদের ভাবমূর্তি তৈরির জন্যেও উইকিপিডিয়াকে ব্যবহার করে থাকেন সমাজের প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বরা। এমনকি তৃতীয় মাধ্যমের বিভিন্ন সংস্থার সম্পর্কে ইচ্ছাকৃতভাবে ভুল তথ্যও সংযোজন করা হয় উইকিপিডিয়ায়, এমনই অভিযোগ তাঁর।
কিন্তু তার বিরুদ্ধে কিছুই কি ব্যবস্থা নেয়নি বিশ্ববন্দিত এই ওয়েবসাইট? না, তেমনটা নয়। বহু বছর আগেই নিয়ন্ত্রণ আনতে তথ্যদাতার পরিচয় যাচাইয়ের বন্দোবস্ত করেছিল এই ওয়েবসাইট। সেইসঙ্গে যোগ করা হয়েছিল তথ্যসূত্র সংযোজনের ক্ষেত্র। কিন্তু তারপরেও লাভ হয়নি খুব একটা। ভুয়ো প্রোফাইল আর ইমেল আইডির মাধ্যমেই ভুল তথ্যপ্রদানের কার্যক্রম এখনও চালিয়ে যাচ্ছে নানান সংস্থা। আর অধিকাংশ তথ্যসূত্রও সব সময় ভরসাযোগ্য নয়, এমনটাই জানাচ্ছেন স্যাঙ্গার।
আরও পড়ুন
২০ বছরের যাত্রায় অসংখ্য বিতর্ক ও গুজব, তবু জনপ্রিয়তার শীর্ষে উইকিপিডিয়া
বছর খানেক আগেই একটি সমীক্ষা জানিয়েছিল, উত্তরোত্তর বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়ছে উইকিপিডিয়ার। বিশ্বের প্রথম সারির সংবাদমাধ্যম ‘দ্য গার্ডিয়ান’, ‘টাইমস’ কিংবা ‘বিবিসি’-র থেকেও এই মুহূর্তে বেশি জনপ্রিয় উইকিপিডিয়া। বিশেষত মার্কিন মুলুকে। ভুল তথ্যের জন্য যাতে সামাজিক বিভ্রান্তি তৈরি না হয় সেই কারণেই এই সতর্কবার্তা প্রদান সহনির্মাতার।
আরও পড়ুন
চেহারা বদলাচ্ছে উইকিপিডিয়া, এক দশক পর সংস্কারের পথে জনপ্রিয় তথ্যকোষ
তবে যেকোনো তথ্যকোষের ক্ষেত্রেই ঘটে থাকে এই ঘটনা। ছাপা তথ্যকোষ এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকাতেও রয়েছে বহু ভুল তথ্য। কিন্তু উইকিপিডিয়া ডিজিটাল মাধ্যম হওয়ায় অত্যন্ত দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে ভুয়ো তথ্য। তা কখনো কখনো বিপজ্জনক আকারও নেয়। তবে তথ্য সম্পাদনার বিষয়ে আগামীতে আরও বেশি জোর দেওয়া হবে বলেই জানাচ্ছেন সহনির্মাতা ল্যারি স্যাঙ্গার।
Powered by Froala Editor