দেশজুড়ে একাধিক জঙ্গলে দাবানল, প্রতিবছর একই ঘটনার কারণ কী?

একদিনে ৪৫টি জঙ্গলে আগুন। উত্তরাখণ্ডের ঘটনায় অবাক সকলেই। আর সবথেকে বড়ো কথা, দাবানলের প্রকৃত সময় এখনও আসেনি। তবে এবছর ইতিমধ্যে দেশের প্রতিটা প্রান্তে দাবানলের ঘটনা ছড়িয়ে পড়ছে। রীতিমতো চিন্তিত বনবিভাগ। শুধু উত্তরাখণ্ডেই গত ৬ মাসে ১ হাজারের বেশি অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। এছাড়া বান্ধবগড়, সিমলিপাল বা অযোধ্যা পাহাড়ের ঘটনা তো আছেই। প্রতিটা ক্ষেত্রেই মানুষের জন্য আগুন লেগেছে বলেই মনে করছে বনবিভাগ। কিন্তু আগুন যেভাবে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে, তাও যথেষ্ট চিন্তার বিষয়। আর এর জন্য এ-বছরের শুষ্ক আবহাওয়াকেই দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা।

২০০৪ সাল থেকে বনভূমির অগ্নিকাণ্ড নজরদারির জন্য লাইভ মনিটরিং সিস্টেম চালু করে কেন্দ্র সরকার। ২০১৯ সালে এই কাজে নাসা ও ইসরোর দুটি স্যাটেলাইটকেও কাজে লাগানো হয়। সারা দেশে মোট ৬৬ হাজার বনকর্মী সর্বক্ষণ পরিস্থিতি নজরে রাখছেন। তবুও আগুন ছড়িয়ে পড়া আটকানো যাচ্ছে না। সাধারণত মে মাস নাগাদ এরকম পরিস্থিতি হয়, বলছেন বনবিভাগের আধিকারিকরা। তবে এবছর শীতকাল অনেক বেশি শুষ্ক ছিল। বসন্তের শেষে প্রতিটা জঙ্গলেই শুকনো কাঠের পরিমাণ বেড়ে গিয়েছে অনেকটাই। উত্তরাখণ্ডের ক্ষেত্রে মাটিও যথেষ্ট শুষ্ক হয়ে গিয়েছে বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।

ভারতে বনভূমির পরিমাণ গত ৩ দশকে কমেছে অনেকটাই। ২০১৯ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী মোট ভূখণ্ডের মাত্র ১৯ শতাংশ বনভূমি। আর এর ২৬ শতাংশই ভীষণভাবে অগ্নিকাণ্ড প্রবণ হয়ে উঠেছে বলে মনে করছে বনবিভাগ। উপযুক্ত ব্যবস্থা না নিলে এই সবুজ সম্পদকে বাঁচিয়ে রাখা এক কথায় অসম্ভব হবে। এখনও অবধি প্রাকৃতিক বৃষ্টির উপর নির্ভর করে থাকা যাচ্ছে। এর মধ্যে বৃষ্টির কারণেই সিমলিপালের আগুন নিভেও গিয়েছে। কিন্তু পরিস্থিতি মে মাসের মধ্যে কী হবে, সেটা কল্পনা করাই কঠিন।

অগ্নিকাণ্ডের ফলে সংকটে গুজরাটের সিংহরা। করবেট ন্যাশানাল পার্কের পাশের জঙ্গলেও আগুন লেগেছে। অগ্নিকাণ্ডের কারণে কুলু ভ্যালি এবং জুকু ভ্যালি অঞ্চলে পর্যটন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। অথচ ভারতের ১০ হাজারের বেশি গ্রামের অর্থনীতি পুরোপুরি নির্ভর করে বনভূমির পর্যটনের উপর। দাবানলের ফলে অর্থনীতিও সংকটে পড়েছে। তবে একটু সচেতন হলেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা যায়। ফাটকা মুনাফা পরিবর্তে এবার প্রকৃতির দিকে নজর দেওয়ার সময় সত্যিই আসন্ন।

আরও পড়ুন
সিমলিপাল অরণ্যে বিধ্বংসী দাবানল, বিপন্ন বহু বন্যপ্রাণ

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
দাবানলে বিলুপ্তির আশঙ্কা উড়িয়ে দেখা মিলল অস্ট্রেলিয়ার পিগমি পসামের