দু’পায়ে হাঁটা এবং আঙুলের ব্যবহার— এই দুটি চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যই বিশ্বের অন্য সমস্ত প্রাণীদের থেকে আলাদা করে দেয় মানুষকে। তবে মানুষের পূর্বপুরুষরাও একদিন বানরের মতোই বসবাস করত গাছে। বৃক্ষবাসী প্রাণী হয়েও কীভাবে মানুষ দু’পায়ে দাঁড়াতে শিখল, একাধিক তত্ত্ব রয়েছে তা নিয়ে। পৃথিবীর ইতিহাসের সবচেয়ে আশ্চর্য রহস্য মানুষের এই বিবর্তনবাদ (Evolution)। কিন্তু এত কিছুর পরেও যদি বলা হয়, হাঁটার জন্য দু’পায়ে (Bipedalism) দাঁড়াতে শেখেনি মানুষ?
এমন প্রশ্ন শুনে অবাক হওয়াই স্বাভাবিক। তবে সায়েন্স অ্যাডভান্স বিজ্ঞান পত্রিকায় প্রকাশিত একটি গবেষণা জানাচ্ছে এমনটাই। পূর্ব আফ্রিকান রিফট ভ্যালি থেকে তানজানিয়ার ইসা উপত্যকায় বসবাসকারী শিম্পাঞ্জিদেরই মানুষের নিকটতম আত্মীয় বলে ধরে নেন বিজ্ঞানীরা। এমনকি এই অঞ্চল থেকেই বিবর্তিত হয়েছিল মানুষের পূর্বপুরুষরা। কাজেই মানুষের ইতিহাস জানতে এই আফ্রিকান এপদের শরণাপন্ন হয়েছিলেন বিজ্ঞানীরা। তাদের আচরণ বিশ্লেষণ করেই, এই আশ্চর্য দাবি করছেন তাঁরা।
গবেষকরা জানাচ্ছেন, ইসা শিম্পাঞ্জিরা সাধারণত বসবাস করে সাভানা-মোসাইক অঞ্চলে। সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে স্বল্পসংখ্যক গাছ থাকার কারণে বেশিরভাগ সময় মাটিতেই কাটাতে হয় তাদের। তবে তা সত্ত্বেও রাত কাটানোর জন্য গাছের আশ্রয় নেয় এই ধরনের এপ। আজ থেকে ৫০ লক্ষ বছর আগে মায়োসিন-প্লিওসিন যুগে হোমিনিনরাও এই একইধরনের পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছিল বলেই অনুমান গবেষকদের। সে-সময় শুধু বৃক্ষনির্ভর জীবনযাপন নয়, বরং সমতল সাভানা তৃণভূমিতেও ঘুরে বেড়াত তারা। প্রাথমিকভাবে এই হাঁটাহাঁটি চলত চার পায়েই। তবে তৃণভূমি ছেড়ে গাছে ওঠার সময় ব্যবহার করত দ্বিপদ। গবেষকদের অনুমান এই ঘটনাই ক্রমশ দ্বিপদবাদের বিবর্তনের জন্ম দিয়েছিল। বা, বলা চলে আবাসস্থল পরিবর্তনই ছিল মানুষের এই বিবর্তনের অনুঘটক। দু’পায়ে হাঁটা কখনই মূল উদ্দেশ্য ছিল না আমাদের পূর্বপুরুষদের। কারণ, দু’পায়ে হাঁটলে দেহের ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়।
অবশ্য এখনও অমীমাংসিত থেকে গেছে বহু প্রশ্ন। এইসকল রহস্যের উত্তর পেতে আফ্রিকান ইসা শিম্পাঞ্জিদের আরও কাছ থেকে পর্যবেক্ষণের প্রয়োজন আছে বলেই মনে করছেন বিজ্ঞানীরা…
Powered by Froala Editor