হঠাৎই ‘হারিয়ে’ গেল নদী, পড়ে আছে খাত, কপালে ভাঁজ সরকারের

এই তো কয়েক সপ্তাহ আগে, পর্যটকদের ভিড় লেগে থাকত। দেশের সরকারকেও রীতিমতো বেগ পেতে হত সেই ভিড় সামাল দিতে। আর হবে নাই বা কেন! প্রায় ১৫০ মিটার উঁচু এই জলপ্রপাত তো শুধু ইক্যুয়েডরের নয়, সমগ্র ল্যাটিন আমেরিকার অন্যতম সুন্দর ভূপ্রাকৃতিক অঞ্চল সান-রাফায়েল জলপ্রপাত। সেদিনও তো ভিড় জমেছিল একইভাবে। কিন্তু কোথায় কী? সেই বিরাট জলপ্রপাতের কোনো অস্তিত্বই আর নেই। শুধু পড়ে আছে নদীর খাত আর জলের ড্যাম। এমন দৃশ্যই দেখা গেল ফেব্রুয়ারির ২ তারিখ। পর্যটকরা তো বটেই, এমন দৃশ্য দেখে চিন্তিত সরকারও।

আরও পড়ুন
খাদে পড়েই উধাও ঝর্না, চিহ্ন নেই নদীরও, গতিপথের খোঁজে নাকাল বিজ্ঞানীরা

শেষ পর্যন্ত যা জানা গেল, তা অবশ্য আরও ভয়ংকর। কোকা নদী কিন্তু শুকিয়ে যায়নি। কিন্তু রাতারাতি বদলে গিয়েছে প্রবাহপথ। সান-রাফায়েল জলপ্রপাতের কিছু আগেই সমস্ত জল ঢেলে দিয়েছে পাহাড়ের কোলে। আর তারপরেই তিনদিকে বয়ে গিয়েছে স্রোত।

আরও পড়ুন
শুধুই পদার্থবিদ্যা নয়, বাংলার নদী-নালা নিয়েও দীর্ঘ গবেষণা করেছিলেন মেঘনাদ সাহা

মানুষের নানা কাজের প্রভাব তো পড়ছেই প্রকৃতির উপর। সমকালীন ইতিহাসও সেই নিদর্শন খুব কম নেই। তাই স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগে, এই ঘটনাও কি মানুষের অত্যাচারেই ঘটল? এই ব্যাপারে কিন্তু বিজ্ঞানীরা একমত নন। এই ঘটনার পিছনে মূল নায়ক যে প্রকৃতি নিজেই, সেকথাই বলতে চান আলফেড্রো ক্যারাস্কো। এই আকস্মিক ঘটনার কারণ খুঁজতে তিনি ফিরে যান ১৯৮৭ সালে। সেবছর একটি বিরাট ভূমিকম্প ঘটে গিয়েছিল আমাজন অববাহিকায়। আর তার ফলে মাটির নিচের তেলের সঞ্চয় বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। সেই চাপ পড়েছে পাথরও। আর তার ফলেই বদলেছে নদীর গতিপথ। তবে এই ঘটনার ফল মানুষকেই ভোগ করতে হবে বলে মনে করছেন তিনি।

আরও পড়ুন
বিলুপ্তির পথে ৩০০-রও বেশি নদী, ক্রমশ ভয়াবহ হয়ে উঠছে বাংলাদেশের পরিস্থিতি

অন্যদিকে পরিবেশবিদ এমিলিও কোবো কিন্তু মানুষের কাজকর্মকেই দায়ী করছেন। তাঁর মতে, কোকা-কোডো জলাধারের উপর জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি করাটাই ছিল এক আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। আর তার বছর চারেকের মধ্যেই ঘটে গেল এই দুর্ঘটনা। বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরির ফলে নদীস্রোতে পলির পরিমাণ কমছে। আর তার ফলেই বদলাচ্ছে গতিপথ। এমনটাই দাবি এমিলিও-র।

আরও পড়ুন
নদী পরিণত হচ্ছে নালায়, জমছে আবর্জনা – ক্ষুব্ধ আসানসোলের বাসিন্দারা

তবে দুর্ঘটনার কারণ যাই হোক, এর ফলাফল কারোর জন্যই খুব একটা ভালো হবে না। আরো বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভবনাও থেকে যাচ্ছে বলে মনে করছেন প্রত্যেকেই। হতে পারে আর ২০-৩০ বছরের মধ্যে কোকা নদীর আর কোনো অস্তিত্বই থাকবে না। সেক্ষেত্রে সম্পূর্ণ এলাকাই শুকিয়ে যেতে বসবে। প্রভাব পড়বে বনভূমির উপর। আর এইসব কথা মাথায় রেখে সরকারের দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া উচিত বলেও মনে করছেন প্রত্যেকে। আসলে এক অনিন্দ্য সুন্দর ভূপ্রাকৃতিক অঞ্চল তো হারিয়ে গেলই, সঙ্গে প্রশ্ন চিহ্নের সামনে দাঁড় করিয়ে দিল মানুষের অস্তিত্বকেও। নদীর গতিপথ তো আগেও বহুবার পরিবর্তিত হয়েছে। কিন্তু আজকাল সমস্ত ঘটনাই এমন আকস্মিক ঘটছে যে, ভয় না পেয়ে আর উপায় কী?