কেন অপুষ্টির শিকার শিশুরা? কী বলছে সামাজিক পরিস্থিতি?

অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান— দেশ, কাল নির্বিশেষে এই তিনটে জিনিসই মানুষের বেঁচে থাকার প্রাথমিক উপাদান। সেখানে অন্নের দিক থেকে কেমন আছে ভারতের শিশুরা? দুর্ভাগ্যজনক হলেও, অবস্থা অত্যন্ত খারাপ। ন্যাশনাল ফ্যামিলি হেলথ সার্ভের রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারতের পাঁচ বছরের নীচের প্রায় ৪০ শতাংশ শিশুই অপুষ্টির শিকার। পর্যাপ্ত খাবারটুকুও জোটে না তাদের। কিন্তু কেন এই অবস্থা?

প্রশ্নটার উত্তর খুঁজতে একটু অন্য দিকে চোখ রাখা যাক। ভারত একটি তৃতীয় বিশ্বের দেশ—এই তত্ত্বটি প্রায় সবাই আমরা বাপ-ঠাকুর্দার আমল থেকে জেনে এসেছি। এই তৃতীয় বিশ্বের দেশের অধিবাসীর একটা বড় অংশ কাজ করে নির্মাণ শিল্পে, অর্থাৎ রাজমিস্ত্রি, ঠিকাকর্মী হিসেবে। সেখানে কেবল যে পুরুষরা কাজ করেন তাই নয়, মহিলারাও সমানভাবে কাজ করেন। কাজেই সমস্ত সংসারের দায়িত্ব উঠে আসে কাজের ক্ষেত্রেই। সেখানে তাদের থাকার জায়গা এবং তার পরিবেশ কেমন থাকে, সেটা আমরা কমবেশি সবাই দেখেছি। সেই অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের মধ্যেই বেড়ে ওঠে শিশুরা। কাজের নোংরা, ধুলোবালি মেশা জায়গাতেই সন্তানকে রেখে কাজে নামে মা-বাবা। পাঁচ বছরের নীচের শিশুদের স্বাস্থ্য সম্পর্কে বেশি সচেতন থাকতে বলেন ডাক্তাররা। তাঁরা বলেন, এই সময় নিয়মিত মায়ের দুধ, প্রোটিন, খাবার ইত্যাদি তাদের জন্য প্রয়োজন। এই সবকিছুরই ঘাটতি দেখা গেছে সেই শিশুদের মধ্যে। যে মায়ের দুধ অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি শিশুর জন্য, সেটাই ঠিকঠাক সময়মতো পায় না তারা। উপরন্তু, বসবাসের জায়গাও স্বাস্থ্যকর নয়। অসুখ তো সেখানে নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। আর অন্যান্য পুষ্টিকর খাবার? ঠিকাকর্মীদের প্রশ্ন করলে জবাবে শুধু নিস্তব্ধতা আর করুণ হাসি ছাড়া আর কিছুই থাকে না।

মাঝে মধ্যেই সরকারের তরফ থেকে বিভিন্ন প্রকল্পের ঘোষণা করা হয়। কিন্তু সামগ্রিক অবস্থার যে সেরকম উন্নতি হয়নি, তা বলাই বাহুল্য। অন্তত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং জাতীয় স্বাস্থ্য রিপোর্ট সেই চিত্র দেখায় না। দেশের জনসংখ্যার অন্যতম বড় অংশ যেখানে কাজ করে, সেই ক্ষেত্রেই অবস্থা চরমে উঠেছে। পৃথিবীকে শিশুদের কাছে বাসযোগ্য করে যাওয়ার যে অঙ্গীকার একসময় করে গিয়েছিলেন কবি, সেই অঙ্গীকার কতটুকু রাখতে পারছি আমরা? আমরাই কি পারি না পাশে দাঁড়াতে?