করোনা অতিমারীর দ্বিতীয় তরঙ্গে ভয়াবহতা যখন প্রত্যক্ষ করছে ভারত, তখনই দ্রুত গতিতে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ছে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশগুলিতেও। পরিস্থিতি এখনও ভারতের মতো ভয়াবহ হয়ে ওঠেনি। তবে কিছুদিনের মধ্যেই আরও বেশ কিছু দেশে একইরকম পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে বলে আশঙ্কা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার। আর এই তালিকায় রয়েছে ইন্দোনেশিয়ার মতো দেশও। অতিমারীর প্রথম তরঙ্গে যে দেশের প্রশাসনিক তৎপরতা রীতিমতো সাড়া ফেলে দিয়েছিল।
সম্প্রতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আধিকারিকরা সাংবাদিক সম্মেলনে জানিয়েছেন, বিশ্বের মোট করোনা সংক্রমণের প্রায় ৫০ শতাংশ ঘটনা ঘটেছে ভারতেই। আর করোনায় মোট মৃত্যুরও ২৫ শতাংশ ভারতে ঘটেছে। হাসপাতালের শয্যার অপ্রতুলতা, ওষুধের অভাব বা ভ্যাকসিনের পর্যাপ্ত জোগান না থাকার মতো বিষয় তো রয়েছেই। তবে ভারতে এবার দ্বিতীয় তরঙ্গের প্রভাব ক্রমশ কমবে বলেই মনে করছেন চিকিৎসকরা।
অন্যদিকে প্রতিবেশী দেশ নেপাল, শ্রীলঙ্কা এবং মালদ্বীপে সংক্রমণের গ্রাফ এখন উর্ধ্বমুখী। কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই সেখানকার পরিস্থিতি বর্তমান ভারতের মতো হতে চলেছে। শুধুই ভারতের প্রতিবেশী তিন দেশই নয়, থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া এবং ইন্দোনেশিয়াতেও পরিস্থিতি একইরকম আশঙ্কাজনক বলে মনে করছে সংস্থা।
শ্রীলঙ্কায় অতিমারীর প্রথম তরঙ্গ শীর্ষে পৌঁছেছিল গত ফেব্রুয়ারিতে। এরপর মার্চ মাস জুড়ে সংক্রমণ ক্রমশ কমতে থাকে। আর এতেই সরকার বেশি আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছিল বলে অভিযোগ তুলেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এপ্রিলের মাঝামাঝি দেশের নববর্ষ উদযাপনের অনুষ্ঠানে তাই প্রায় কোনো নিয়ন্ত্রণ ছিল না। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কথা বলা হলেও তা ঠিকঠাক পরিলক্ষিত হয়নি। আর এরপরেই মাত্র কয়েক সপ্তাহের মধ্যে সংক্রমিত মানুষের সংখ্যা ৫ গুণ বেড়ে যায়। অন্যদিকে মালদ্বীপ খুবই কম জনসংখ্যার দেশ। মূলত পর্যটন শিল্পই সেখানে ভরসা। আর চলতি বছরে ভারত থেকেই অন্তত ৭০ হাজার মানুষ মালদ্বীপ ভ্রমণে গিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। এছাড়া অন্যান্য দেশ তো রয়েছেই। পর্যটকদের উপর নিয়ন্ত্রণ না থাকাতেই সংক্রমণ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। আবার ভারতে লকডাউন শুরু হলে নেপালি শ্রমিকরা নিজেদের দেশে ফিরতে থাকেন। সেখান থেকেই নেপালেও ছড়িয়ে পড়ে দ্বিতীয় তরঙ্গের প্রভাব। এর মধ্যেই প্রতি ১ লক্ষের মধ্যে ২০ জন কোভিড আক্রান্ত। যে সংখ্যাটা ২ সপ্তাহ আগের ভারতের পরিসংখ্যানের সঙ্গে মিলে যায়। এবং আগামী ২ সপ্তাহের মধ্যে ভারতের আজকের অবস্থায় পৌঁছে যেতে পারে নেপাল। বলা বাহুল্য, নেপালের স্বাস্থ্য পরিষেবা ভারতের তুলনায় অনেক বেশি অনুন্নত। ফলে তা সামাল দেওয়া আরও কঠিন হবে।
আরও পড়ুন
সীমান্ত ছেড়ে, করোনা মোকাবিলায় এবার সামিল সামরিক চিকিৎসকরাও
এর মধ্যে করোনা ভাইরাসের মিউট্যান্ট জিন বি-১.৬১৭-র হদিশ মিলেছে ইন্দোনেশিয়া, কম্বোডিয়া এবং থাইল্যান্ডেও। চিন থেকে প্রথম করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছিল থাইল্যান্ডে। তবে প্রথম তরঙ্গে তেমন বিধ্বস্ত হয়নি থাইল্যান্ড। গত ডিসেম্বর থেকে শুরু হয় দ্বিতীয় তরঙ্গের সংক্রমণ। এবারে কিন্তু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রায় ব্যর্থ সরকার। দফায় দফায় লকডাউনেও লাভ হয়নি। এমনকি প্রথম তরঙ্গকে সবার আগে নিয়ন্ত্রণে এনে দৃষ্টান্ত তৈরি করেছিল যে ইন্দোনেশিয়া, সেখানেও দৈনিক সংক্রমণ ১ হাজার ছাড়িয়েছে ইতিমধ্যেই। সব মিলিয়ে সমগ্র দক্ষিণ এশিয়া জুড়েই পরিস্থিতি আশঙ্কাজনক বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বক্তব্যে সম্মতি জানিয়েছে আন্তর্জাতিক রেড ক্রসও। তবে রেড ক্রসের বিশেষজ্ঞদের মতে, পরিস্থিতি এখনও নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। আর তার জন্য প্রতিটা দেশের সরকারকেই প্রধান ভূমিকা নিতে হবে। কিন্তু সরকার যেমন প্রয়োজনীয় নীতি নিচ্ছে না, রেড ক্রসকেও স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেওয়া হচ্ছে না অনেক দেশেই। এরপর পরিস্থিতি সত্যিই হাতের বাইরে চলে যাবে। তখন আর কিছুই করার থাকবে না।
আরও পড়ুন
রক্তনালিতে 'বিষ' ছড়ায় করোনার স্পাইক প্রোটিন!
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
করোনার দ্বিতীয় তরঙ্গে বিপর্যস্ত নেপাল, আত্মসমর্পণ সরকারের