ঘন সবুজ জঙ্গল ঢেকে রেখেছে যুক্তরাষ্ট্রের (United States) পাথুরে চরাচর। উঁচু-নিচু টিলার মধ্যে মাথা চাড়া দিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে বিশালায়তন একটি গুহা। দিনের বেলাতেও আলো-আঁধারের খেলা চলে সেখানে। আজ থেকে প্রায় হাজার বছরেরও আগের কথা। মিসৌরির (Missouri) এই গুহাতেই পদচিহ্ন পড়েছিল ওসেজ জনগোষ্ঠীর মানুষদের। শুধু মাথার ছাদই নয়, এই গুহাই ছিল তাঁদের উপাসনালয়, সমাধিক্ষেত্র। আর্ট গ্যালারিও বটে। কারণ, এই গুহার দেওয়ালেই তাঁরা সযত্নে ফুটিয়ে তুলেছিলেন ৩ শতাধিক ছবি (Cave Painting)। প্রায় ঐতিহাসিক এই গুহাই নিলামে বিক্রি হল ২২ লক্ষ মার্কিন ডলারের বিনিময়ে।
অবশ্য আজ নয়, বহুদিন ধরেই ‘পিকচার কেভ’-খ্যাত (Picture Cave) ঐতিহাসিক এই গুহা রয়েছে ব্যক্তি মালিকানায়। ১৯৫৩ সাল সেটা। মিসৌরির বুকে ৪৩ একর জমি কিনেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী সেন্ট লুই পরিবার। তাঁরাই আবিষ্কার করেন প্রাচীন এই গুহাচিত্রগুলি। গবেষণায় উঠে আসে ঐতিহাসিক এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত ছিলেন ওসেজ জনগোষ্ঠীর পূর্বপুরুষেরা। তবে এই গুহার সাংস্কৃতিক গুরুত্বকে সেভাবে আমল দেওয়া হয়নি সেই সময়। বরং, এই গুহা ব্যবহৃত হত শিকারের জন্য।
তবে দু’দশক আগে ওসেজ সংস্কৃতি ও ইতিহাস সংরক্ষণের জন্য বিশেষ তহবিল ও সংগঠন তৈরি করা হলে, গুহাটি রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব দেওয়া হয় দুই মার্কিন নৃবিজ্ঞানীকে। তাঁদের পরিচর্যাতেই এতদিন সংরক্ষিত ছিল হাজার বছরের প্রাচীন গুহাচিত্রগুলি। তবে নৃতাত্ত্বিক এবং পর্যটকদের কাছে এই গুহা এক কথায় দুর্মূল্য হলেও, সেন্ট লুই পরিবারের কাছে নিষ্প্রয়োজনীয় সম্পদে পরিণত হয়েছিল গুহাটি। প্রথমত, পর্যটকদের আনাগোনা লেগে থাকলেও, কোনোরকম আর্থিক আয় হত না। দ্বিতীয়ত, শিকারের দিনও শেষ হয়েছে একুশ শতকে এসে। ফলত, এই বছরের শুরুতেই অব্যবহৃত এই পারিবারিক সম্পত্তিকে বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল মার্কিন পরিবারটি।
বিষয়টি জানতে পারায়, প্রথমেই তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল ওসেজ জনগোষ্ঠীর মানুষেরা। ৪ লক্ষ মার্কিন ডলারে এই গুহা কিনে নেওয়ার প্রস্তাবও দিয়েছিল ওসেজ সংগঠন। তবে শেষ পর্যন্ত, এই গুহাকে নিলামে তোলে সেন্ট লুই পরিবার। নিলামে ওঠার মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ২২ লক্ষ মার্কিন ডলারে তা কিনে নেয় এক অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তি।
আরও পড়ুন
দেড় কিলোমিটার গুহাজুড়ে হাড়ের বিছানা! সাক্ষাৎ নরকের সন্ধান সৌদি আরবে
তবে ঐতিহাসিক এই গুহা-বিক্রি নিয়ে ইতিমধ্যেই সরগরম মার্কিন আবহাওয়া। ঘটনার তীব্র বিরোধিতা করেছেন প্রাচীন জনগোষ্ঠী সম্প্রদায়ের মানুষেরা। যদিও, মিসৌরির আইন অনুযায়ী, যে কেউ এই ধরনের ঐতিহাসিক প্রত্নক্ষেত্রের মালিকানা কিনতে পারেন। তবে খাতায়-কলমে দত্তক নিয়ে সেই ক্ষেত্রের পরিচর্যা এবং সংরক্ষণের দায়িত্বও নিতে হবে সেই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে। কিন্তু খাতায়-কলমে এসব আইন থাকার পরেও আদৌ কতটা সংরক্ষিত হবে এই গুহা, তা নিয়ে থেকেই যাচ্ছে সন্দেহ…
আরও পড়ুন
১ লক্ষ বছরের প্রাচীন গুহাচিত্রের সন্ধান আরাবল্লীর অরণ্যে
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
বয়স ১৭ হাজার বছর, আবিষ্কৃত অস্ট্রেলিয়ার প্রাচীনতম গুহাচিত্র