পুজোর আমেজ সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারে, জানেন কে এই সন্তোষ?

সন্তোষ মিত্র স্কোয়ার। কলকাতার বিখ্যাত পুজোগুলির মধ্যে যাদের নাম আসবে, তাদের মধ্যে অন্যতম এই পুজো। দর্শকদের ভিড়ে যেখানে পা ফেলা যায় না পুজোর ক’টা দিন, সেই জায়গার নামের পিছনের মানুষটার কথা ক’জন জানেন? কে ছিলেন সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারের সন্তোষ?

উত্তর কলকাতার এক কায়স্থ পরিবারে জন্মেছিলেন সন্তোষ মিত্র। ছোট থেকেই অত্যন্ত মেধাবী এবং বুদ্ধিমান ছাত্র হিসেবে পরিচিত ছিলেন তিনি। প্রথমে হিন্দু স্কুল, পরবর্তীতে প্রেসিডেন্সিতে পড়াশোনা করেন তিনি। প্রেসিডেন্সিতে পড়ার সময় তাঁর সহপাঠী ছিলেন সুভাষ চন্দ্র বসু। মূলত তখন থেকেই তাঁর বিপ্লবী জীবনের সূত্রপাত। হ্যাঁ, ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের অগ্নিযুগে অন্যতম বিপ্লবী ছিলেন এই সন্তোষ মিত্র।

কলেজে পড়ার সময়ই তিনি পরিচিত হন গান্ধীজীর আন্দোলনে। অহিংস আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হন তিনি। ১৯২২ সালে স্বরাজ সেবক সঙ্ঘ নামে নিজের একটি দলও গঠন করেছিলেন। সেই সময়ই তাঁর সঙ্গে আলাপ বারীন ঘোষের। অরবিন্দ ঘোষের এই ভাইয়ের সঙ্গে শুরু হয় ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ। অহিংস আন্দোলন শেষ হয়ে যাওয়ার পর সন্তোষ মিত্র পাকাপাকিভাবে যুক্ত হয়ে পড়েন বিপ্লবী কর্মকাণ্ডে। ১৯২৩ সালে দ্বিতীয় আলিপুর বোমা মামলায় গ্রেফতার করা হয় তাঁকে। তখন আইনজীবী যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্তের সহায়তায় ছাড়া পান তিনি। পরে আবারও গ্রেফতার করা হয় তাঁকে। সেই সময় বাংলার জেলগুলিতে গ্রেফতার হওয়া বিপ্লবীদের সংখ্যা এত বেড়ে যায় যে, ব্রিটিশ সরকারকে আরও কিছু জেল এবং ডিটেনশন ক্যাম্প তৈরি করতে হয়। সেইরকমই একটি ক্যাম্প তৈরি হয় মেদিনীপুরের হিজলিতে। সেখানেই নিয়ে যাওয়া হয় সন্তোষ মিত্রকে। সেটাই তাঁর শেষ যাত্রা। ১৯৩১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর এই হিজলি ডিটেনশন ক্যাম্পেই বন্দী বিপ্লবীদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালানো হয়। পাগলা ঘণ্টার আওয়াজে দলে দলে বিপ্লবীরা কারাগার থেকে বাইরে বেরিয়ে আসেন। সেই দলে ছিলেন সন্তোষ মিত্র এবং আরেক বিপ্লবী তারকেশ্বর সেনগুপ্ত। ব্রিটিশ পুলিশের গুলিতে ঘটনাস্থলেই মারা যান তাঁরা।

হিজলি ডিটেনশন ক্যাম্পের এই নারকীয় ঘটনার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছিল সমস্ত জায়গায়। ভারতের কোনও জেলে বা ডিটেনশন ক্যাম্পে গুলি চালানোর এটিই একমাত্র ঘটনা। এর প্রতিবাদে যোগ দিয়েছিলেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও। সেই সময়ই এই ঘটনার প্রতিবাদে কলকাতার ‘সেন্ট জেমস স্কোয়ার’-এর নাম বদলে রাখা হয় ‘সন্তোষ মিত্র স্কোয়ার’। আর সেই ডিটেনশন ক্যাম্পই এখন পরিচিত আইআইটি খড়গপুরের ‘শহিদ ভবন’ নামে। ইতিহাসে এভাবেই স্থানের নাম, পরিচয় বদলে যায় যুগে যুগে। আর এভাবেই বোধহয় আমরাও ভুলে যাই আমাদের ঐতিহ্যকে, আমাদের ইতিহাসকে।

Latest News See More